নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এই যে তিনি পকেটের টাকা খরচ করে স্কুল করেছেন এটিই হচ্ছে হৃদয়ে লেখা নাম যা রয়ে যাবে। আমি যেখানে বেশি ফুল পাই সেখানে ভয় পাই। কারণ ফুল বেশি পেলে আমার মনে হয় এটি ভালোবাসার ফুল নয়, স্বার্থের ফুল। কিন্তু জনগণের স্বার্থ হলে আমি গুরুত্ব দিই, নাসিম ওসমান আজকে নেই, কিন্তু তার স্বপ্নের শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। এই সেতুর পর এখন আবার আরেকটু সেতুর দাবি উঠেছে। জনগণের সরকার, জনগণের দাবিকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কাজেই এই সেলিম ওসমান সাহেব তিন বছর ধরে আমার পেছনে লেগে আছেন, ঢাকা এলেই আমার পিছু পড়েন, কী দরকার সেতু দরকার।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বন্দরের ত্রিবোনী মিনারবাড়ি এলাকায় শামসুজ্জোহা মুসাপুর বন্দর (এম.বি) ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্বোধনের পর এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।
সেতুমন্ত্রী বলেন, একটি সেতু করতে অনেক সময় লাগে। শীতলক্ষ্যা সেতু আমরা অনেক আগেই করতে পারতাম। এটি বিদেশি প্রজেক্ট। ধাপে ধাপে সবকিছু করতে হয়। একটি ব্রিজ করতে হলে কতগুলো প্রসেস লাগে, যেগুলো আমাদের ফলো করতে হয়। প্রথমত সার্ভে লাগে, তারপর আসবে নির্মাণ প্রক্রিয়া। সেখানে বিদেশি সহযোগিতা লাগে যদি তা না পাই তাহলে আমরা করবো। বিদেশি সহায়তা না পেলে আমরা চেষ্টা করবো।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রথমত আমি খেয়ার স্থানে ফেরি চালু করে দিচ্ছি। আমি মন্ত্রী হিসেবে বলে দিলাম আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরি চালু হবে। আগামী আট মাসেই এই সেতু দৃশ্যমান পাবেন না, কারণ আমি সেই কথা বলবো না, সেই ওয়াদা দেব না যেটা রাখতে পারবো না। কারণ এটাই শেখ হাসিনার অঙ্গীকার। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর কাজ আমরা করি না। তবে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। নিয়ম অনুযায়ী যা করার আমরা করছি। যতটুকু বলা আছে তা হবে আর যা কথা দিয়েছি তা রাখবো।’
নারায়ণগঞ্জ আন্দোলন সংগ্রামের সুতিকাগার মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সব সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ থেকে গড়ে উঠেছিল দুর্বার আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন, সংগ্রামে সাথে সাথী ছিল এই নারায়ণগঞ্জ। শীতলক্ষ্যা পাড়ে এই পুণ্যভূমিতে এসে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই নারায়ণগঞ্জে কোনো সমাবেশে আমার প্রথম আগমন।’
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘সেলিম ওসমান সাহেব আমার একজন প্রিয় মানুষ। তার এত গুণের সমাহার একজন মানুষের মধ্যে এটি ভাবতেও অবাক লাগে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সফল ব্যবসায়ী, একজন সফল শিল্পপতি, একজন সফল কৃষক, একজন সফল সংগঠক, একজন সফল শিক্ষানুরাগী এবং সবশেষ একজন সফল রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি। একজন মানুষের মধ্যে এত গুণের সমাহার তিনি হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের জনপ্রিয় সেলিম ওসমান।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের টাকা পয়সা অনেকের কাছেই থাকে। এদেশে সেলিম ওসমান সাহেবের চেয়ে অনেক ধনী আছেন, কিন্ত খরচ করার মতো মনমানসিকতা নেই। এই স্কুলটি ছিল নাসিম ওসমানের স্বপ্ন। ছোট একটি ঘর থেকে বিশাল কমপ্লেক্স। ৩০ কোটি টাকা নিজের পকেট থেকে একটি স্কুলের জন্য যিনি খরচ করতে পারেন এমন বড় মনের মানুষ বড় মনের টাকাওয়ালা এদেশে খুব কম। পথে পথে আমি তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ পেলাম। এই দুপুর বেলাও হাজার হাজার মানুষ মদনপুর থেকে এই বন্দর পর্যন্ত অপেক্ষমাণ। ফুল আর ফুল, ফুলের পাপড়ি। অনেক সুন্দর।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলতে চাই, একটি ব্রিজের জন্য এত ফুল কেন, একটি ব্রিজের জন্য এত তোরণ কেন। একটি ব্রিজের জন্য এত ফুলের পাপড়ি কেন। আমার ছবি দিয়ে এত তোরণ কেন। যেখানে যা প্রয়োজন তা করা মন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব। আমি এখানে ফুলের মালা, পাপড়ি নিতে আসিনি। আমি এখানে শত শত ব্যানার, তোরণ, বিলবোর্ড দেখতে আসিনি। এই যে ফুল, বাগানের ফুল, এক ঘণ্টা কি বড়জোর দুই ঘণ্টা পর ফুল শুকিয়ে যাবে, ব্যানারের ওই ছবি মুছে যাবে, বিলবোর্ডের ছবি মুছে যাবে, বাগানের ফুল শুকিয়ে যাবে। পাথরে লেখা নাম ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখা নাম রয়ে যাবে।’
ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে কাদের বলেন, ‘আজকে সেলিম ওসমানের কাছ থেকে তোমরা যে সুযোগ পেয়েছো সেই সুযোগ যে যত বেশি কাজে লাগাবে সে তত বেশি বড় হবে। শিক্ষা কি জীবিকার জন্য না জীবনের জন্য? শিক্ষা জীবিকার জন্য নয় জীবনের জন্য। পরীক্ষায় পাস করার শিক্ষা নয়, আমরা সত্যিকারের শিক্ষার্থী চাই। যে শিক্ষার্থী প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে সেই আশায় থাকে, সেই শিক্ষা কি কোনো কাজে লাগবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে যারা আজকে শিক্ষার ১২টা বাজায় তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে হবে। যারা আমাদের মেধাবীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছেন তাদের ধ্বংস করে দিতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তোমরা কি মাদককে ঘৃণা করো? মাদক আমাদের দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি আমাদের অভিভাবকসহ সবার কাছে বলছি, আপনাদের ছেলেদেরসহ আমাদের সমাজের ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে হবে। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। মাদক দলমত নির্বিশেষে আমাদের সবার শত্রু। সবাই মিলে মাদককে না বলতে হবে।’ এ সময় শিক্ষার্থীদের তিনি মাদককে ‘না’ বলতে অঙ্গীকার করান।
মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলি, তুমি যদি মুরব্বিদের সম্মান না করো, তুমি যদি তোমার শিক্ষকদের সম্মান না করো তাহলে তুমি বড় হলে তোমাকেই কেউ সম্মান করবে না। এখানে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জের সম্মানিত ও প্রভাবশালী নেতা। এখানে মহানগর, জেলা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের আমি বলবো, আপনারা নারায়ণগঞ্জকে ঐক্যবদ্ধ রাখুন। এখানে সবাই এক থেকে নারায়ণগঞ্জের আন্দোলন সংগ্রামের ঐতিহ্যকে ধরে রাখেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে আজকে যদি কোনো ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড চলে, মাদকের মতো জঙ্গিবাদও আমাদের অভিন্ন শত্রু। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সেলিম ওসমান সাহেবের সামাজিকমূলক কর্মকাণ্ড ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অমর হয়ে থাকুক। সামসুজ্জোহা সাহেব আমাদের নেতা। আপনাদের (নারায়ণগঞ্জবাসীর) এই আগ্রযাত্রাকে স্বাগত জানাই।’
বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাব্বি মিয়া, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মঈনুল হক, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই, জাতীয় পার্টির জেলার সভাপতি আবু জাহের, মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সানোয়ার হোসেন সানু, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএর পরিচালক শাহদাত হোসেন সাজনু, সহসভাপতি শামীম আহমেদ শিপলু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি চন্দন শীল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, জিএম আরাফাত, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়নাল হক, মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাকসুদ হোসেন, বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানউদ্দিন আহাম্মদ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলীসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বন্দরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
Discussion about this post