৪৯ হাজার পিছ ইয়াবার মামলায় বারবার নাম উঠে আসার পর হাজারো চেষ্টা চালিয়ে এই মামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ওসি কামরুল । দুই পুলিশ সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি কামরুল ইসলামের নাম আসার পরেও অভিযোগপত্রে তাকে আসামি না করায় ৪৯ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট । এর আগে গত ৪ মার্চ ওসি কামরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট । ফের ২ এপ্রিল ওসি কামরুল ইসলামকে সদর থানায় বহালের আদেশ দিয়েছিলো উচ্চ আদালত
নারায়ণঘঞ্জ নিউজ আপডেট :
আদালত আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। আসামি কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরহাদ আহমেদ।
আদালত আদেশে বলেছে, “ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির জবানবন্দিতে নাম আসার পরেও নারায়ণগঞ্জ সদর থানার তখনকার ওসি কামরুল ইসলামকে অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমরা মনে করি এই অভিযোগপত্র ত্রুটিপূর্ণ। এ কারণে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হল।”
পরে আইনজীবী ফরহাদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত আসাদুজ্জামানকে জামিন দেননি। দুই মাসের মধ্যে এ মামলায় পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।”
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এএসআই আলম সরোয়ার্দী রুবেলকে গত বছর ৭ মার্চ বন্দর থানার রূপালী আবাসিক এলাকার বাসা থেকে ৪৯ হাজার ইয়াবা ও টাকাসহ গ্রেপ্তার করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. মাসুদ রানা। পরদিন বন্দর থানায় চারজনকে আসামি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এই মামলা করা হয়।
মামলা হওয়ার পর পুলিশ কনস্টেবল আসাদুজ্জামানসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পরে সরোয়ার্দী ও আসাদুজ্জামানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওসি কামরুল ইসলামের নাম উঠে আসে।
কিন্তু ওসির নাম বাদ দিয়েই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ।
এ মামলায় জামিন চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন কনস্টেবল আসাদুজ্জামান। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে ওসিকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি হাই কোর্টের নজরে আসে।
ওসিকে কেন এ মামলায় আসামি করা হয়নি এবং কেন এখন পর্যন্ত তদন্ত শেষ হয়নি, সে ব্যাখ্যা জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ২৬ ফেব্রুয়ারি তলব করা হয়।
সে অনুযায়ী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মেহেদি মাকসুদ হাজির হয়ে হাই কোর্টকে বলেন, এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আজাদকে।
পরে হাই কোর্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ৪ মার্চ হাজির হতে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী গত ৪ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আজাদ হাই কোর্টে হাজির হন।
আদালত সেদিন শুনানি নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে মামলাটির তদন্ত এক মাসে শেষ করতে এবং ওসি কামরুল ইসলামকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়।
সেদিন আদালত কনস্টেবল আসাদুজ্জামানকে জামিন না দিয়ে তার আবেদনটির নিষ্পত্তি করে দেয়। আর আগে জারি করা যে রুলটি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল, তার ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিল আদালত।
ঘটানর বিবরণে প্রকাশ,
ইয়াবার চালান আটক নয়, খোদ পুলিশই প্রটেকশন দিয়ে কেনাবেচায় সহায়তা করেছে। অবাক হলেও এটিই সত্য। ঘটনার শুধু এখানেই শেষ নয়, ৫ লাখ টাকা আর ৫০ হাজার পিস ইয়াবা চালানের ভাগাভাগিতে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের একটি নেটওয়ার্ক।
যারা আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট ইয়াবা গডফাদারের বিশেষ সহযোগী। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর এমন একটি সিনেম্যাটিক ঘটনার অবতারণা হয়েছে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে।
যার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন দুই থানা ও পুলিশের আরও একটি সংস্থার পথভ্রষ্ট কতিপয় সদস্য। নিয়মিত মাসোয়ারা না পাওয়ার দ্বন্দ্বে ঘটনা ফাঁস হলে পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত আসে।
এরপর একে একে গ্রেপ্তার হন তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ নয় জন। ওদিকে ইয়াবা ডন হিসেবে যিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে স্ত্রী ও পুলিশের সহায়তায় এমন অবিশ্বাস্য কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন সেই ‘বাবা আরিফ’ কথিত ক্রসফায়ারে ইতিমধ্যে মারা পড়েছেন ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রধানের নির্দেশে যখন দেশজুড়ে মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অলআউট সাঁড়াশি অভিযান চলছে তখন খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে এমন খবর সত্যিই পীড়াদায়ক। এ বিষয়ে পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কবির ভাষায় সত্য যে বড় কঠিন, সেই কঠিনেরে ভালোবাসিলাম। অর্থাৎ মাদক ব্যবসা কিংবা এর সহযোগিতায় কে বা কারা জড়িত এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। যার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলবে তাকেই ধরা হবে। আর সেই পুরনো কথা, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না।’
সূত্র জানায়, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের একটি বিশেষ টিম এখন শুধু বহনকারীকেই ধরছে না, গডফাদারসহ পুরো নেটওয়ার্ক কব্জায় আনতে মরিয়া হয়ে সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে। উল্লিখিত নারায়ণগঞ্জের ঘটনাটিও এর বাইরে নয়। এ চক্রের প্রত্যেককে ধরতে রাত-দিন অভিযান চলছে। যে তালিকায় পুলিশের আরও বেশ কয়েকজন রথী-মহারথীও আছেন।
ইয়াবার চালানে পুলিশের নিরাপত্তা : মুন্সীগঞ্জের ইয়াবা ডন আরিফ ওরফে বাবা আরিফ স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তার ইয়াবা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। ইয়াবা আনা-নেয়ার কাজে তিনি পুলিশের প্রটেকশনও পেতেন।
কিন্তু আচমকা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলে তার মাদক ব্যবসায় পুলিশি সহায়তায় ছেদ পড়ে। মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে অসুস্থতার ছুতোয় কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন আরিফ। মেডিকেলের প্রিজন সেল থেকে তিনি মোবাইল ফোনে তার পূর্ব পরিচিত মুন্সীগঞ্জ থানার এসআই বেলাল উদ্দীনকে ডেকে পাঠান।
৬ মার্চ ভোরে ঢাকা মেডিকেলে হাজির হন এসআই বেলাল। প্রিজন সেলে বসেই তাদের কথা হয়। আরিফ তাকে জানান, নারাণয়গঞ্জের বন্দর এলাকায় তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনু একটা ইয়াবার বড় চালান নিয়ে যাবে।
নিরাপদে চালান ডেলিভারির জন্য বেলালকে পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। কথা অনুযায়ী ৭ মার্চ ৫০ হাজার ইয়াবা ডেলিভারি দিতে আরিফের স্ত্রী মদনগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে হাজির হন। এ সময় রুনুর নিরাপত্তায় সরকারি অস্ত্র নিয়ে অদূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এসআই বেলাল। কিন্তু পার্টি আসতে দেরি হওয়ায় সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়।
ভয়েস ট্র্যাকিংয়ের অবৈধ ব্যবহার :
এদিকে মাসোয়ারা নিয়ে বিরোধ থাকায় আরিফের মোবাইল ফোন নম্বর অবৈধভাবে ভয়েস ট্র্যাকিং (কথোপকথন রেকর্ড) করছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এএসআই হাসান। তিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারে ডিবির পক্ষ থেকে সন্দেহভাজনদের কথোপকথন শুনতেন। সুযোগ বুঝে আরিফের কথোপকথনও শোনা শুরু করেন তিনি। একদিন ভয়েস রেকর্ড থেকেই তিনি জেনে যান ৭ মার্চ আরিফের স্ত্রী রুনু ইয়াবার চালান ডেলিভারি দিতে মদনগঞ্জের দিকে যাচ্ছেন । ইয়াবার চালান ডেলিভারির বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে এএসআই হাসানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়। তিনি তার পূর্ব পরিচিত নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় কর্মরত এএসআই আলম সারোয়ার্দিকে ফোন করেন। জানান, ইয়াবা ডন আরিফের স্ত্রী বড় একটি চালান নিয়ে বন্দর থানার দিকে যাচ্ছেন। তাকে আটকাতে পারলে মোটা অংকের টাকা পাওয়া যাবে। তাদের ফোন কল যাতে রেকর্ড না হয় সেজন্য হাসান তাকে মেসেঞ্জারে (কথা বলার ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপস) কল দিতে বলে। এরপর হাসান মেসেঞ্জারে কিছুক্ষণ পরপর আরিফের স্ত্রীর অবস্থান জানাতে থাকেন।
অভিযান নাটক :
এক পর্যায়ে এএসআই সারোয়ার্দি তার দীর্ঘদিনের সোর্স কাওসার আহমেদ রিয়েল ও কনস্টেবল আসাদকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। অভিযানের নাটক সাজিয়ে তিনি সাবিনা আক্তার রুনু ও রহমান নামের ২ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। তাদের কাছ থেকে ইয়াবা বিক্রির ৫ লাখ টাকা ও ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের থানায় না এনে নিজের বাসায় আটকে রাখেন তিনি। একপর্যায়ে রুনু ফোন করেন ঢাকা মেডিকেলের প্রিজন সেলে থাকা তার স্বামী আরিফকে। ঘটনার বিস্তারিত শুনে আরিফ মুন্সীগঞ্জ থানার আরেক এসআই মোর্শেদকে ফোন করে বিষয়টি সুরাহা করতে বলেন। এসআই মোর্শেদ ফোন করে সারোয়ার্দিকে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেন। এ সময় তাদের কথোপকথন ছিল অনেকটা এমন-
মোর্শেদ : হ্যালো, সারোয়ার্দি?
সারোয়ার্দি : বলছি স্যার।
মোর্শেদ : তুমি কি রুনুকে ধরছ নাকি?
সারোয়ার্দি : জি, স্যার।
মোর্শেদ : টাকা আর মালামাল (ইয়াবা) কি করছ ?
সারোয়ার্দি : আমার বাসাতেই আছে।
মোর্শেদ : তুমি তো টাকাও পাইছো, মালও (ইয়াবা) তোমার কাছে । তাইলে ওদের ছাইড়া দাও ।
সারোয়ার্দি : আপনি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন স্যার ।
মোর্শেদ : আমি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলছি। আমি আসতাছি। তুমি বাসাতেই থাক।
সারোয়ার্দি : আসেন স্যার । আমি আছি ।
এরপর মুন্সীগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে মদনগঞ্জে সারোয়ার্দির বাসায় হাজির হন এসআই মোর্শেদ । সেখানে গিয়ে নানা দেনদরবার শেষে রুনুকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি । এক পর্যায়ে সারোয়ার্দি ওসি কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর আটক করা ৫ লাখ টাকা আর ৫০ হাজার ইয়াবা রেখে রুনুকে এসআই মোর্শেদের হাতে তুলে দেন। মাদক ব্যবসার সহযোগী হিসেবে আটককৃত অপরজন আবদুর রহমানকে নদী পার করে বন্ধন পরিবহনের একটি বাসে তুলে দেন কনস্টেবল আসাদ।
জানাজানি হয় যেভাবে :
এদিকে ইয়াবার চালান ডেলিভারির নিরাপত্তায় থাকা এসআই বেলাল উটকো পুলিশি ঝামেলায় ক্ষুব্ধ হন। তিনিও ঢাকা মেডিকেলের প্রিজন সেলে থাকা মাদক ব্যবসায়ী আরিফকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান। আরিফ এসআই বেলালকে ঘটনাটা পুলিশের উপর মহলে জানাতে বলেন।
এরপর এসআই বেলাল নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসিকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে জানান। কিন্তু ওসি সব শুনে চুপ থাকলে বেলাল আরও উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি ঢাকায় কর্মরত এক ডিআইজিকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান।
সব শুনে ওই ডিআইজি নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ সুপার তাৎক্ষণিক সদর থানার ওসিকে ফোন করেন। এসপির ফোন পেয়ে ভড়কে যান ওসি । তিনি এএসআই সারোয়ার্দিকে ফোন করে আসামিসহ তাড়াতাড়ি থানায় আসতে বলেন।
সারোয়ার্দি জানান, তিনি তো আসামি ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আসামি কোথায় পাবেন। তখন ওসি তাকে বলেন, ‘যারে পাও একটা ধইরা থানায় আনো। ইয়াবাসহ চালান দিতে হবে।’ ওসির এমন নির্দেশ পেয়ে প্যাকেট খুলে ৫ হাজার পিস ইয়াবা আলাদা করেন সারোয়ার্দি।
এরপর জনি নামের নিরীহ এক ব্যক্তিকে আটক করে থানায় হাজির হন। তাকে আসামি দেখিয়ে মামলা সাজানোর প্রস্তুতির মধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে মাঠে নামে নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
যেভাবে গ্রেপ্তার হন পুলিশ কর্মকর্তারা :
নারায়ণগঞ্জ ডিবির এসআই মাসুদের নেতৃত্বে আটজনের একটি টিম মদনগঞ্জে এএসআই সারোয়ার্দির বাসায় হানা দেয়। কিন্তু তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা থেকে সারোয়ার্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তার পকেটেই পাওয়া যায় ৫ হাজার ইয়াবা। পরে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে আরও ৪৫ হাজার ইয়াবা ও ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন ৮ মার্চ মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলাটি প্রায় ১ মাস তদন্ত করে নারায়ণগঞ্জ ডিবি।
এর পর উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ৫ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে মামলা হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত দু’জন এসআই ও এএসআই পদ মর্যাদার ৩ কর্মকর্তা এবং এক কনস্টেবলসহ চার পুলিশসহ নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার পর এসআই বেলাল উদ্দিন মুন্সীগঞ্জ থেকে রাজবাড়ি হাইওয়ে পুলিশে বদলি হন। ১৫ মে তাকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া এসআই মোর্শেদকে ২০ মে নরসিংদীর বেলাবো থানা থেকে এবং কনস্টেবল আসাদকেও ১৫ মে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সিআইডি।
সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত মামলার পর ফোনে আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা ডিএমপি ডিবি’র এএসআই হাসানকে স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়নে (এসপিবিএন) বদলি করা হয়। বুধবার তাকে গ্রেফতারে এসপিবিএন সদর দফতরে যান সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, লাল ফিতায় আটকা পড়ায় হাসানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর মেহেদী মাকসুদ বুধবার (৩০ মে) বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটির তদন্ত করছি। তদন্তে যার বিরুদ্ধেই সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলবে তাকেই আমরা গ্রেপ্তার করব।
এ মামলায় পুলিশ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত অন্যদের মধ্যে আছেন- মাদক ব্যবসায়ী আরিফ ওরফে বাবা আরিফের স্ত্রী সাবিনা আক্তার রুনু, এএসআই সারোয়ার্দির সোর্স কাওসার আহমেদ ওরফে রিয়েল, ইয়াবা বহনের কাজে নিয়োজিত গাড়িচালক রহমান, হেল্পার ছোটন ও বিল্লাল ওরফে ড্রাইভার বিল্লাল। বর্তমানে এরা সবাই কারাগারে আছেন।
ক্রসফায়ারে আরিফ:
৮ মার্চ মামলা হওয়ার পর একে একে মাদক ব্যবসায় জড়িত অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন আসামিদের কেউ কেউ। এরই মধ্যে হঠাৎ জামিন হয়ে যায় মুন্সীগঞ্জের ইয়াবা ডন আরিফের। এরপর ২৫ এপ্রিল রাতে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারা পড়েন তিনি।
সূত্র বলছে, টেকনাফের ইয়াবা ডনদের সঙ্গে ব্যবসা করতেন আরিফ। এছাড়া মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনের অনেক হাইপ্রোফাইল কর্তাব্যক্তির সঙ্গে তার দহরম-মহরমের কথা ওপেন সিক্রেট। বিশেষ করে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতার সঙ্গে আরিফের সখ্যের কথা সবাই জানেন। সূত্রটি দাবি করছে, রাঘববোয়ালদের তথ্য যাতে ফাঁস না হয় সেজন্য দ্রুত তাকে জামিনে বের করে আনার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়।
ওসি কামরুল ইসলামের বক্তব্য : (বর্তমানে নারায়ণগহ্জ সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন)
এ ঘটনার সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি কামরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৭ মার্চ থানায় অনুপস্থিতির কারণে এএসআই সারোয়ার্দিকে তিনি অ্যাবসেন্ট (অনুপস্থিত) করেছিলেন। পরে সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাত ১০টায় ফোন করে তাকে থানায় ডেকে আনেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এএসআই সারোয়ার্দি উদ্দেশ্যমূলকভাবে জবানবন্দিতে তার নাম উল্লেখ করেছে। ঘটনার সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট নন।









Discussion about this post