পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর টিকিট প্রতি ৫০ টাকা ভাড়া নিয়েই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলাচল শুরু করেছে । যদিও এ রুটের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৪৩ টাকা।
অভিনব কায়দায় এই ৪৩ টাকার সাথে নতুন যুক্ত করেছে ফ্লাইওভারের টোল ভাড়া ৭ টাকা । এমন কান্ডে খোদ বন্ধন পরিবহনের একজন ড্রাইভার নিজেই কঠোর সমালোচনা করে সোমবার ৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় এই প্রতিবেদককে বলেছেন, মূলতঃ বাস ভাড়া বাড়লেও পরিবহন মালিকদের কোন লাভ নাই। সব লুটপাট করে ‘নেতাপোতারা’ খেয়ে ফেলতেছে । এই ভাড়া হইলো গণ ডাকাতি । অতিরিক্ত হইয়া গেছে ৫০ টাকা ভাড়া ।
জানা যায়, রোববার (৭ নভেম্বর) রাতে পরিবহন মালিকরা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পরিবহন মালিকদের দাবি, শুধু তেল নয়, সব কিছুর দামই বেড়েছে। যে কারণে আগের ভাড়াই তারা পোষাতে পারছিলেন না। তাই এখন ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন !
এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোনো ঘোষণা ছাড়াই রাতারাতি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনের বাস ভাড়া টিকিট প্রতি ১৪ বাড়ানো হয়। যা সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
সোমবার ৮ নভেম্বর সকাল থেকেই শহরের ২ নং রেলগেইট এলাকার অবৈধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালিত বন্দন ও উৎসব কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকেট বিক্রেতা সকল যাত্রীদের বলছেন মূল ভাড়া ৪৩ টাকা আর ফ্লাইওভার ভাড়া ৭ টাকা।
কে করলো এই ভাড়া নির্ধারণ এমন প্রশ্নের উত্তরে টিকেট বিক্রেতা নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, শহিদুল্লা আর আইয়ুব আলীরা মিল্লা ভাড়া নির্ধারণ করছে । তাদের জিগান । আর আগে ছিলো বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোক্তার, মোক্তার মারা যাবার পর এখন রাইফেল ক্লাবে বইয়া কে চালায় জানিনা । তবে শুনছি দিদার নাকি মুল দ্বায়িত্ব আছে ।
এদিকে শহরের বাসস্ট্যান্ড (১নং রেলগেইট) বিআরটিসি কাউন্টারে বর্ধিত ভাড়া ৪০ টাকায় যাত্রীদের কাছে টিকেট বিক্রি করছে । টিকিট বিক্রেদের কাছে প্রশ্ন করতেই বলেন, এগুলি তো আমরা জানিনা । আওয়ামী লীগ নেতা চাষাড়ার রাজু লিজ আনছে। রাজুর নির্দেশে ই এই ভাড়া নিচ্ছি।
এর একদিন পরই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও পরিবহন ধর্মঘটে যান মালিকরা। গত দুইদিন ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর সোমবার সকাল থেকে ১৪ টাকা ভাড়া বাড়িয়েই যাত্রী পরিবহন শুরু করে বাসগুলো।
এ বিষয়ে বন্ধন পরিবহনের চেয়ারম্যান মো. জুয়েল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ‘সরকার আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেই অনুযায়ী ভাড়া বাড়িয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা করে ভাড়া নিতে। এখান থেকে ঢাকার দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। সে হিসেবে ভাড়া হয় ৪৩ টাকা। পিক আওয়ার আর অফ-পিক আওয়ার অ্যাভারেজে আমরা ৫০ জন যাত্রী পরিবহন করি। আমাদের টোল লাগে ৫২০ টাকা। সব মিলিয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি। আমরা ৫টি কোম্পানির মালিক বসে ভাড়া নির্ধারণ করেছি।’
জুয়েল আরও বলেন, আমাদের বাসের চাকার দাম ছিল ৪৫ হাজার টাকা। সেই চাকা বর্তমানে ৫৬ হাজার টাকা। সরকার আমাদের কাছ থেকে প্রতি বছর ফিটনেস ফি ১০ হাজার ১০৫ টাকা নিত। এখন সেটা ৩৬ হাজার ৬০৫ টাকা। সব বিবেচনা করেই ভাড়া নির্ধারণ করেছি।
গত ৩ নভেম্বর রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর ৫ নভেম্বর (শুক্রবার) ভোর ৬টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস-ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকরা। এতে সারাদেশে ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে সাধারণ মানুষ।
এরপর রোববার (৭ নভেম্বর) রাতে ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া সমন্বয় করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।









Discussion about this post