বন্দর উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যুর পর তার সংস্পর্শে থাকা সদর হাসপাতালের এক ওয়ার্ড বয়কে করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর চিকিৎসা প্রদানকারী এক ডাক্তারসহ আরও ১০ জনকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।
একই সাথে নিহত নারীর পৈত্রিক বসতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাইকপাড়ার দু’টি বাড়ি শুক্রবার ৩ এপ্রিল দুপুরে লকডাউন করেছে প্রশাসন ।
পাইকপাড়া থেকে বড় বোন অসুস্থ হয়ে পরলে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং মৃত্যুর পর লাশ বহন করা ও দাফনসহ সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে ছোট ভাই ফটো সাংবাদিক মাসুদ ।
বোন মৃত্যুর চারদিন পর করোনা ভাইরাসের বিষয়টি ধরা পরায় বৃহস্পতিবার ২ এপ্রিল রাতে বন্দর থানার রসুলবাগ লগডাউন করার খবর পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায় মাসুদ । যাকে খুজে বেড়াচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, করোনায় মৃত্যু হওয়া নারীর বাড়িসহ আশপাশের একশ’ পরিবারকে লকডাউনের আওতায় রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিবারগুলোর সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত লকডাউন অব্যাহত থাকবে। এই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই নারী কিভাবে এবং কার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসে আক্রন্ত হয়েছেন সেটি এখনো নির্ণয় সম্ভব হয়নি। তবে পাইকপাড়া থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে রিক্সাচালককে খুজা হচ্ছে । আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফটো সাংবাদিক মাসুদ ও রিক্সাচালককে খুজেই চলেছে ।
এ ঘটনায় পুরো নারায়ণগঞ্জ এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন আরো জানান, মৃতের পরিবারের সদস্যসহ তাকে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী সদর জেনারেল হাসপাতালের একজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তিনজনসহ ১০ জনকে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তাদের মধ্যে হাসপাতালের সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স, এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, প্রাইভেট ল্যাবের টেকনিশিয়ান, এক্সরে টেকনিশিয়ান, আয়া ও চেম্বার এসিস্ট্যান্ট রয়েছেন। পাশাপাশি আইইডিসিআর এর মাধ্যমে আজকালের মধ্যেই লকডাউনের আওতায় রাখা রসুলবাগ ও পাইকপাড়ার প্রায় শাতাধিক পরিবারের সকল সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
তাদের কারো শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, লকডাউন এলাকা দু’টি আইন শৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। লকডাউনে রাখা পরিবরাগুলোর খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি তিনি সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান।
এদিকে শুক্রবার সকালে লকডাউন এলাকাসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শুক্লা সরকার এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা। অপরদিকে শহরের পাইকপাড়া এলাকার লকডাউন করে রাখা দুটি বাড়ি শুক্রবার বিকেলে পরিদর্শন করেছেন জেলা সিভিল সার্জনসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
গত ২৯ মার্চ বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকায় হৃদরোগ ও ঠান্ডাজনিক রোগে আক্রান্ত হওয়া ওই নারীকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর চিকিৎসকের নিউমোনিয়া সন্দেহ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
পরে ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানকার করোনা আক্রান্ত বলে সন্দেহ হলে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেযা হয়। পরদিন ৩০ মার্চ ওই নারীকে কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নেয়ার পরপরই সেখানে তার মৃত্যু হয়।
পরে আইইডিসিআরকে খবর দিলে তারা এসে রোগীর মৃতদেহ হতে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। ২ এপ্রিল রিপোর্ট আসে তিনি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
এই নারী কোথা থেকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত করতে পারে নাই আইইডিসিআর অথবা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কোন সংস্থা । তার সাথে বিদেশ ফেরত কেউ কোনভাবে সংস্পর্শে আসে নাই বলেও জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা ।









Discussion about this post