ঢাকা চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে সিনহা ও ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন ভাতাসহ ৭ দফা দাবি ও সকল অনিয়ম বন্ধের দাবিতে এ অবরোধ করছেন বলে জানান গার্মেন্ট শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) ভোর থেকে মাঠে নামে শ্রমিকরা। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যায় শ্রমিকরা। এতে করে ঢাকা সিলেট, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশেই হাজারো পণ্যবাহী গাড়ি আটকে ছিল।
অবরোধের কারণে যানজট একদিকে সাইনবোর্ড, অন্যদিকে রূপগঞ্জে গাউছিয়া পর্যন্ত ছাড়িয়ে গিয়েছিল। খবর শুনে শিল্পাঞ্চল পুলিশ, সোনারগাঁও থানা পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। বিক্ষুব্দ শ্রমিকরা যাতে করে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না করে এবং দ্রুত অবস্থান প্রত্যাহার করে নেয় সেজন্য শ্রমিকদের বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। এদিকে মালিক পক্ষের সঙ্গেও কথা বলছে শিল্প পুলিশ।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর শিল্প নগরীতে অবস্থিত সিনহা ও ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিকদের প্রতি মাসের বেতন পরবর্তী মাসের কর্মদিবসের সাতদিনের মধ্যে বেতন ভাতা প্রদান করার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ ৩০ তারিখেও প্রদান করেন না। ফলে দু’মাসের বেতন ভাতা বকেয়া পড়ে শ্রমিকদের। এছাড়া শ্রমিকদের সার্ভিসের টাকা ছাড়া জোরপূর্বক পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর, বেআইনী ভাবে লে-অফ দেয়াসহ ৭ দফা ও বিভিন্ন অনিয়ম করে ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপ কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও ৭ দাবিসহ সকল অনিয়ম বন্ধের দাবিতে কাঁচপুর ওপেক্স ও সিনহা গ্রুপের সকল শ্রমিকরা সকাল থেকে কাজে যোগদান না করে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেয় ও খন্ড খন্ড মিছিল বের করে।
তাদের প্রধান দাবি বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করা। শ্রমিকরা জানায়, তাদের কয়েক মাসের বেতন ও নানা বকেয়া রয়েছে। তবে মালিক পক্ষ দাবি করেছে মে ও জুন মাসের বেতন বকেয়া আছে। এর মধ্যে মালিক পক্ষ দুই দফায় বেতন পরিশোধ করবে বলে জানালেও শ্রমিকরা তাতে রাজি হয়নি। শ্রমিকদের ৭ দফা দাবি হলো, অনিয়ম ভাবে লে-অফ মানি না, ১ থেকে ৭ কর্ম দিবসে বেতন দিতে হবে, মাতৃকালীন টাকা ছুটিতে যাওয়ার পূর্বে প্রদান করতে হবে, চাকুরী ইস্তফা দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে সমস্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।
যা বিগত ৬ বছরেও দেওয়া হয় নি, অকারনে মামলা দেওয়া চলবে না, চাকুরীর নিশ্চয়তা দিতে হবে ও ফ্যাক্টরী চালাতে না পারলে ৪ মাসের বেতন ছুটির টাকাসহ এবং সার্ভিসের টাকা সম্পূর্ণ দিতে হবে।
সিনহা ওপেক্স গ্রুপের শ্রমিক আমেনা বেগম, জমির হোসেন, সেলিনা আক্তার, হালিমা, মোতালেবসহ একাধিক শ্রমিকরা জানান, এ বেতন ভাতার সমস্য গত ৫ বছর যাবত চলছে। মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে সমস্যা করে বেতন ভাতা নিতে হয়। আমাদের মাতৃত্বকালীন টাকা পরিশোধ করে না। রিজাইনের টাকা, ছুটির টাকা দেয় না। কিছু বললেই গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ মামলা ভয় দেখিয়ে হয়রানী করে, অনেক শ্রমিককেও মামলা দিয়েছেন। কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।
শিল্প পুলিশ ৪ (নারায়ণগঞ্জ) এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জ্যোর্তিময় সাহা জানান, ভোর থেকেই শ্রমিকরা নেমেছেন বকেয়া বেতনসহ কয়েকটি দাবি নিয়ে। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা শ্রমিকদেরও বুঝিয়ে বেতন ভাতা প্রদানের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়।
সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম জানান, বেতন ঠিকমতো না পাওয়ায় এই লকডাউনে শ্রমিকরা অনেক দুর্ভোগে রয়েছে আমরা জানি। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আগামী ১৩ জুলাই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দিবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। পরে শ্রমিকদের বাকী দাবি নিয়ে আলোচনায় বসবে। মালিকপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়।









Discussion about this post