চাঁদাবাজি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণের হোতা আবদুল করিম বাবু দীর্ঘদিন যাবৎ পুলিশকে ব্যবহার করে অপরাধের বিশাল সাম্রাজ্যগড়ে তুলে। অসংখ্য অপরাধের কারণে কখনো কখনো বাবু নিজেকে পুলিশের সোর্স হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে । নিজেই পুলিশ ডেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করতো, আবার নিজেই বিশাল অর্থ বানিজ্য করে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতো । তার পুরো পরিবার আটকেপরা বিহারী হওয়ায় সকলেই তাকে একনামেই ডাকে মাউরা বাবু হিসেবে । আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই মাউরা বাবু নাম পাল্টাতে প্রাণপন চেষ্টা করে ডিস বাবুতে পরিবর্তন করলেও সকলেই তাকে মাউরা বাবু হিসেবেই চিনে । এই মাউরা বাবু বাবুরাইল শেষ মাথায় এক প্রবাসীর স্ত্রীর ৭ তলা বাড়ী আত্মস্যাৎ করতেও বিশেষ পেশার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মহা কেলেংকারীর ঘটনা ঘটায় । বাবুর ভয়ে ওই নারী নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রায় এক বছর যাবৎ আত্মগোপনে রয়েছে । কথায় কথায় সাথে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষকে আতংকে রাখতো বাবু । এভাবেই ফতুল্লা থানায় অকপটেই মন্তব্য করেন মামলার বাদী । (এমন অভিযোগের ভিডিও রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে)
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নাসিক ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু ওরফে মাউরা বাবু এর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় আরো দুটি মামলা রুজু হয়েছে ।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে পশ্চিম দেওভোগ এলাকার স্যাটেলাইটের মালিক মো. মোক্তার হোসেন ও পুলিশ লাইনস এলাকার স্যাটেলাইট ব্যবসায়ী কুসুম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। নির্যাতীত এসব ব্যাসায়ীরা এখন কউন্সিলর বাবুকে কুখ্যাত ডিস সন্ত্রাসী বা ডিস সম্রাট হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
মামলা গুলোতে ডিস বাবুকে প্রধান আসামি করে এসবি স্যাটেলাইট এন্ড ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মেইন লাইন রিপিয়ার ম্যান ও বাংলাবাজার সরদার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা রিপন (৪২), হোসেন মিয়ার ছেলে সেন্টু (৩২), রেজাউল করিম (৫৮), শাহজাহানের ছেলে চুন্নু মোল্লা (৪০), মমিন (৪৫), জুয়েল প্রধান (৪৮), রাজু প্রধান (৪২) ও জাহাঙ্গীর (৪০) কে আসামী করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ডিস বাবু ওই ব্যবসায়ীদের কাছে এক কালিন ও মাসিক চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপরাগতা জানালে বিভিন্ন হুমকি দামকি দেয়।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল দুপুরে বন্দর থানায় দায়ের করা এক চাঁদাবাজির মামলায় ডিবির হাতে গ্রেফতার হন কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু।
প্রসঙ্গত, নগরীর ডিস ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে আবদুল করিম বাবু “ডিস বাবু” হিসেবে পরিচিত। আবার বাল্যকাল থেকেই পুরো পাইকপাড়া এলাকায় আবদুল করিম বাবুর প্রকৃত নাম হিসেবে কেউ তাকে চিনতোই না । সকলেই তাকে চিনতো মাউরা বাবু হিসেবে । আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর মাউরা বাবুর নাম পাল্টাতে নানাভাবে চেষ্টার পর সকলেই তাকে ডিস বাবু হিসেবেই ডাকে । এখন লোকজন তাকে এছাড়াও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী বিশেষ পরিবারের অনুগত হিসেবে তার পরিচিত প্রকাশ পাচ্ছে। সম্প্রতি তার ডিশ ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।
ডিস বাবুর গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বন্দর থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বাবুর বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে । এ মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে |
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ডিস ব্যবসায়ী হাসানের নিয়ন্ত্রনাধীন বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা থেকে আলীনগর অঞ্চলের কয়েক লক্ষ টাকার ডিস ক্যাবল (তার)সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কেটে নিয়ে যায় বাবুর লোক হিসেবে পরিচিত সজিবসহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এতে ২ হাজারেরও উপরে গ্রাহক ডিস লাইন থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বেশ কয়েকদিন ধরে।
এ ঘটনায় কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু হাসানের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় ডিস ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি প্রদান করেন। ওই ঘটনার পর গেল মাসের ২৩ তারিখে হাসান বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন বাবুকে প্রধান আসামী করে।
কিন্তু এরপরও কোনো কাজ হয়নি। এতে আবাবু আরো বেপরোয়া হয়ে সোনাকান্দা, আলীনগর এলাকায় বাবু তার বাহিনীর মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে ডিস লাইন সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তিনি ডিস বাবুর নানা অপকর্ম তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি বাবুর এসব অপকর্ম উত্থাপন করে সংবাদ সম্মেলনও করেন।
ওই সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহা জানান, হাসান নামে বন্দর এলাকার এক ডিস ব্যবসায়ী বাবুর বিরুদ্ধে চাদাবাজি, হুমকি ও তার ব্যবসা জবির দখলের অভিযোগ এনে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় ডিস বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অবশ্য সকল অভিযোগের বিসয়েই সব সময় কউন্সিলর আবদুল করিম বাবু নিজেকে নিরপরাধী বলে দাবী করে । সবশেষ জেলা কারাগারে পাঠানোর সময় প্রিজনভ্যান থেকে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে বাবু বলেন আমার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র হচ্ছে ।









Discussion about this post