সংবাদকর্মীদের দেখলেই মারমুখী ও হিংস্র হয়ে উঠছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেয়া হেফাজতের পিকেটাররা।
রোববার (২৮ মার্চ) হরতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শিমরাইল-সাইনবোর্ড এলাকায় অন্তত সাতজন সংবাদকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন। চুর্ণবিচূর্ণ করে দেয়া হয়েছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি।
মোদি বিরোধী বিক্ষোভের অংশ হিসেবে রোববার সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালন করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরসহ উপজেলা শহরগুলো কর্মমুখর ও স্বাভাবিক থাকলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত এলাকায় তান্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা। সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রাখতে সকাল থেকেই বাঁশ, কাঠ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেয় পিকেটাররা।
হরতাল না মেনে গাড়ি চলাচল করায় বেশকিছু যানবাহন ভাঙচুর ও ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ পিকেটারদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে বিকেল তিনটা পর্যন্ত পুলিশ পিকেটার ও সাধারণ পথচারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়ে বলে পুলিশের সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এসব ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সকাল থেকেই মাঠে ছিলেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তুলতে গেলে দৈনিক সংবাদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, বৈশাখী টেলিভিশন, নয়াদিগন্ত, জিটিভির ক্যামেরাপারসন, নিউ এইজের ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ১২ জন সংবাদকর্মীকে মারধর, গাড়ি ভাঙচুর ও মুঠোফোন কেড়ে নেয় পিকেটাররা।
সকালে শিমরাইল মোড়ে ছবি তুলতে গেলে পিকেটারদের মারধরের শিকার হন নয়াদিগন্তের নারায়ণগঞ্জে কর্মরত এক সংবাদকর্মী। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, পিকেটাররা সড়ক অবরোধ করে আগুন ধরাচ্ছিলো, সে ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তারা মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করে৷ সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তারা আরো বেশি মারমুখী হয়ে উঠে বৈশাখী টেলিভিশনের কর্মীর উপর হামলা চালায় ।
একই স্থানে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুপুরে মারধের শিকার হন দৈনিক সংবাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ও প্রেস নারায়ণগঞ্জের চীফ রিপোর্টার সৌরভ হোসেন সিয়াম।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সিয়াম বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর মাদরাসার সামনে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা৷ ভাঙচুর চালায় আরও কিছু গাড়িতে৷ দুপুর দুইটার দিকে পোড়ানো বাসের ছবি তুলতে গেলে ফুটওভার ব্রিজের নিচে সিয়ামকে মারধর করে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকরা৷ কোনোমতে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে একটি গাছ কাটা করাতকলের ভেতর অবরুদ্ধ করে তারা৷ তার মোবাইল-পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়৷ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন হরতাল সমর্থকরা৷ মোবাইলে ধারণ করা ছবি-ভিডিও সব মুছে (ডিলিট) ফেলে৷ হিন্দু কিনা, চার কালেমা জানেন কিনা এসব প্রশ্ন করে হেফাজতের কর্মীরা৷ প্রায় বিশ মিনিট অবরুদ্ধ থাকার পর ছাড়া পান সিয়াম৷ তার হাত, পা, মুখ ও তলপেটে আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি৷ হামলাকালে পিকেটারদের অনেকেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ দফায় দফায় হামলা চালায়।
এ ঘটনার পর দুপুরে সাইনবোর্ড মোড়ে পিকেটারদের হিংস্রতার শিকার হন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মৌ খন্দকারসহ তার দুই সহকর্মী। এ সময় পিকেটাররা চ্যানেলটির গাড়ি ভাঙচুর ও চালককে মারধর করে। দুপুর আড়াইটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রো-অ্যাক্টিভ হাসপাতালের সামনে নিউজ টোয়েন্টিফোর নামে বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি আটকে ভাঙচুর চালানো হয়৷ গাড়িতে থাকা নারী সংবাদকর্মী ও চালক হেফাজতের রোষানলের মুখে পড়েন৷ গাড়ি ফেরত আনতে সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের উদ্দেশ্যেও ঢিল ছুড়তে থাকে পিকেটাররা৷ কয়েকবার ব্যর্থ চেষ্টার পর পুলিশ-বিজিবির সহায়তায় বিধ্বস্ত গাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়৷
হামলায় আহত হন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের খালেদ রায়হান ও বৈশাখী টেলিভিশনের প্রতিবেদক আশিক মাহমুদ। এসময় ছিনিয়ে নেয়া হয় তাদের মোবাইল ও মাইক্রোফোন। আগুন দেয়া হয় নিউজ টোয়েন্টি ফোরের গাড়িতে। খালেদ রায়হান চিকিৎসা নিচ্ছেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রায়হানের সারা গায়ে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। ডান হাতে গুরুতর আঘাত আছে তার। রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। গাড়িতে আগুন দেয়ার সময় ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে তারা।
সাইনবোর্ড মোড়ের কাছে জিটিভির ক্যামেরাপারসন মাসুদুর রহমান মারধরের শিকার হয়েছেন। ইট-পাটকেল ছোড়ার ফুটেজ নেয়ার সময় জিটিভির রিপোর্টার রুবিনা ও ক্যামেরাপারসন মাসুদের দিকে হরতাল সমর্থকরা তেড়ে আসে। মাসুদকে মারধর করে।
সানারপাড় এলাকায় হরতাল সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন নিউ এইজের সাংবাদিক মোক্তাদির রশিদ রোমিও। চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পিকেটাররা।









Discussion about this post