একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তেলচোর আশরাফ সন্ত্রাসী জগতে দীর্ঘদিন যাবত মেলামেশা করে। রগকাটা জাফরের স্মার্টবন্ধুটির ঠিকুজি তার হাতে। তেলচোর আশরাফ ডিপোসহ পুরো সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। করোনা মহামারীতেও চাঁদাবাজি চলছে। মতি মিয়ার গতি বুঝেই তিনি জায়গা মত চাঁদার টোপ ফেলে। চাঁদা না পেলে মতি মিয়া নিজের নেটওয়ার্ক দিয়ে ওই লোকের জীবনের গতি বদলে দেয়। সিদ্ধিরগঞ্জের অনেকেই থানার ওসিকে তেলচোর আশরাফের চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ বলেছেন। যদিও ওসি সাহেব আশরাফ নামে কাউকে চিনেন না বলে জানিয়েছেন।
এদিকে, তেলচোর আশরাফের বিরুদ্ধে অনেক লোকের নালিশ। তাদের অভিযোগ আশরাফ দৃশ্যত কোন অকারেন্স করে না। সে যা করে লোকচক্ষুর অন্তরালে করে। বিএনপি নেতা থেকে আওয়ামীলীগে নাম লিখিয়েছেন। সেটা দোষের কিছু নয়। তবে কুঅভ্যাস অর্থাৎ তেলচুরি ছাড়তে পারেনি। এর সাথে যোগ হয়েছে চাঁদাবাজি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন গোদনাইল মেঘনা শাখার সভাপতি আশরাফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হেফাজতের নাশকতার মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি হয়েছিল। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানায় দায়ের করা মামলায় এই ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। যাত্রাবাড়ি থানার এফআইআর নং-১১৭/৩৮০। গত ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতাল চলাকালে ওইদিন দিবাগত রাতে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে। ওই মামলায় আশরাফ পিতা-বাচ্চু মিয়া, এসওরোড বায়রা বাড়ী, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জকে আসামী করা হয়। যাত্রবাড়ি থানা থেকে ওয়ারেন্টটি তামিল করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পাঠানো হয় । কিন্তু ওয়ারেন্ট ইস্যু হলেও থানা পুলিশ নিরব।
এলাকাবাসী জানায়, আশরাফ বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে পরিচিত থাকলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে জাহির করে। বর্তমানে সে মতির শেল্টারে রয়েছে।
তারা আরও জানায়, এক সময় আশরাফ, মোহাম্মদ আলী, রনি, মহিউদ্দিন একসাথে বিএনপি’র নেতা সামসু পুলিশের সহযোগি ( সোর্স ) হিসেবে কাজ করতেন। আর এই থানা পুলিশের ছত্রছায়ায় তারা বিভিন্ন কাজ ক্ষমতার বলে করতো। বর্তমানে তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী নেই কারণ তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় ২০১৪ সালের পর মেঘনা ডিপোর দায়িত্ব নিয়েই ডিপো কর্মকর্তা নিজামুল এর সাথে যোগসাজশে অনিয়ম করে তেল পাচার করে মোটা অংকের টাকার মালিক হয়েছে আশরাফ।
এলাকাবাসী আরও জানায়, আশরাফসহ তার সহযোগীরা শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে তেলবাহি জাহাজ থেকে রাতের আধাঁরে তেল পাচার করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। প্রচুর টাকার মালিক বনে গেছে সে। অথচ গত ১০ বছর আগে সে কত টাকা মালিক ছিল তা তদন্ত করলেই বের হয়ে আসবে। তাই অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এলাকাবাসী। পাশাপাশি তার এই তেল চোরাই কারবারি বন্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন এলাকাবাসী। (সূত্র, বাংলার শিরোনাম, অফিস; ৯ কারওয়ানবাজার, ৪র্থ তলা, আজাদ ভবন।)
জানাগেছে, গত বছর জালিয়াতির মাধ্যমে রিফিউজিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া জমি বিপুল টাকায় বিক্রিতে সম্পৃক্ত থাকার ঘটনায় মতির পাশাপাশি তার সহযোগী শাহ আলম, আশরাফ ও আক্তার হোসেন ওরফে পানি আশরাফসহ আরও কয়েকজনের বিষয়েও খোঁজখবর নিচ্ছে দুদক। তাদেরও কমিশনে তলব করা হবে। কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মতির বিরুদ্ধে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বলা হয়, নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ২০১৭ সালে প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। মতি তার সহযোগী আশরাফউদ্দিন, শাহ আলম ও পানি আক্তারের সহযোগিতায় আদমজী ইপিজেড এলাকায় রিফিউজিদের জন্য বরাদ্দ কয়েক বিঘা জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এছাড়া নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে সহযোগী শাহ আলমকে বাদী করে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। রিফিউজিদের নামে বরাদ্দ করা জমির ভুয়া দলিল তৈরি ও একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছে তা বিক্রিতে মধ্যস্থতা করেন সহযোগী আশরাফ। জমি বিক্রি বাবদ মতির কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নেন আশরাফ।
অভিযোগে আরও বলা হয়, একসময় নূর হোসেনের সহযোগী মতি ১৯৯৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি আদমজীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। গড়ে তোলেন নতুন বাহিনী। অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে মতিকে ২০০৫ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করে। ওই সময় এক বিএনপি নেতার মধ্যস্থতায় বেঁচে যান তিনি। মুচলেকা দেন যে তিনি বা তার বাহিনী কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নেবে না। পরে কিছুদিন এলাকাছাড়া ছিলেন। কিন্তু বছর তিনেক বাদে এলাকায় ফিরেই সুমিলপাড়া, আমদজী ইপিজেড, সোনামিয়ার বাজার, বাগপাড়া, মন্ডলপাড়া, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাড়ৈপাড়া এবং শীতলক্ষ্যার তীর ও এর আশপাশের এলাকায় বেপরোয়া চাঁদাবাজি শুরু করে মতি ও তার সহযোগীরা। মতির সঙ্গে যোগ দেয় আশরাফ উদ্দিন, পেটকাটা মানিক, বোমা ওহাব, ফেন্সি শামীম, পানি আক্তারসহ বিশাল এক বাহিনী।
আশরাফ এলাকায় মতির ডান হাত হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া আরও দলে ভেড়ে শীতলক্ষ্যা নদীকেন্দ্রিক চোরাই তেলের কারবারের নিয়ন্ত্রক পেটকাটা মানিক। এরশাদের আমলে আদমজীতে রেহান ও মতি বাহিনীর মধ্যে প্রতিনিয়ত দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগে থাকত। মতি ও আশরাফ বাহিনীর ক্যাডারদের বিরুদ্ধে হত্যা, দাঙ্গা, বিস্ফোরক, অস্ত্র, মারামারি, চুরি, ছিনতাইসহ মামলা রয়েছে প্রায় ২৪টি। বেশ কটি মামলা থেকে খালাস পেলেও বর্তমানে চলমান আছে কয়েকটি মামলা।
আশরাফের সহযোগিতায় মতি মেঘনা তেল ডিপো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ও রাতের আঁধারে জাহাজ থেকে তেল চুরির চক্র গঠন করেন। তেল চুরি, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও খাসজমি দখল করে বিক্রির মাধ্যমে নাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতি ও তার কয়েক সহযোগী কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে দুদক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
এমন অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে আশরাফ উদ্দিন জানান, আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যে । চক্রান্তকারীরা আমার বিরুদ্ধে এমন চক্রান্ত করতেছে । ৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের মুঠোপোনের আলোচনায় আশরাফ নিজেকে নির্দোষ দাবী করে মন্তব্য করেন ।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাবেদ পারভেজ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি একটা ট্রেনিংয়ে আছি । অভিযোগটি ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে রাখেন আমি দেখবো ।









Discussion about this post