মফস্বল সাংবাদিক ইলিয়াস কে কুপিয়ে হতার পর এখনো বন্দরে খুনি চক্রের হোতা ও অন্যান্য সদস্যরা নিহতের পরিবার ও পত্রিকার সম্পাদক কে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে । এই হুমকিদাতা খুনিচক্রের মদদ দিচ্ছে কারা ? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো নারায়ণগঞ্জজুড়ে
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে হত্যা করে ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কিত নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী বাহিনী।
হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল নায়ক তুষার, তুর্জয় ও মাসুদ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির বিতর্কিত নেতাদের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠছে।

এদিকে ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত তুষারের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা গেছে, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন হত্যা মামলার মূল হোতা ও প্রথম আসামী তুষার ওই ছবিতে বড় তলোয়াল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে ছবির একেবারে মধ্যেখানে অবস্থান করছে। এছাড়া ছবির ডান পাশে তুষারের ভাই ও মামলার দ্বিতীয় আসামী হাসনাত আহম্মেদ তুর্জয় বড় খুন্তি হাতে অবস্থান করছে। এছাড়া তাদের গ্যাংয়ের বাকি দুই সদস্যও চাপাতি ও বড় তলোয়ার হাতে নিয়ে ভিন্ন ভঙ্গিতে অবস্থান করছিল।
সম্প্রতি আসামী তুষারের সাথে কলাগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও জাপা নেতা দেলোয়ার প্রধান সহ জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি সেক্রেটারীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তুর্জয়ের সাথে যুবলীগ নেতা খান মাসুদের সেকেন্ড ইন কমান্ড রাজু আহম্মেদের সাথে অসংখ্য ছবি রয়েছে। এসব ছবি যখন সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয় তখন একজন সাংসদ ও ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধানের পাশেও আরেক আসামী মাসুদের ছবি প্রকাশিত হয়।
ক্ষমতার দাপটে ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে উঠে খুনিরা। ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলা এই সন্ত্রাসীরা কাউকে তোয়াক্কা করেনা। যেকারণে লেখনির মাধ্যমে প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছে সাংবাদিক ইলিয়াসকে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত হওয়া সেসব ছবিতে দেখা যায়, আটককৃত আসামীদের মধ্যে মূল হোতা তুষার জাতীয় পার্টির নেতা ও চেয়ারম্যানদের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তুষার আদমপুর এলাকায় বসবাস করে। সেই ইউনিয়নের অর্থাৎ কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা দেলোয়ার প্রধানের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। ছবিতে এমন দৃশ্য দেখা যায়। এতে করে সম্পর্কের গভীরতা বিষয়টি ছবিতে ফুটে উঠেছে। আর এভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠে তুষার। রাজনীতির উচ্চ আসনে পৌঁছতে জেলা ছাত্রসমাজের সভাপতি ও সেক্রেটারীর সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তার নমুনাস্বরুপ আরেকটি ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে।
অন্যদিকে তার ভাই তুর্জয়ের সাথে যুবলীগ নেতা নানা কারনে বিতর্কিত খান মাসুদ ও সহযোগী সন্ত্রাসীদের সুসম্পর্ক রয়েছে। খান মাসুদের সেকেন্ড ইন কমান্ড সন্ত্রাসী রাজু আহম্মেদের সাথে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক থাকার সুবাদে খান মাসুদের বাহিনীর অন্যতম সদস্য হয়ে উঠে তুর্জয়।
যেকারণে খান মাসুদের অফিস কক্ষে একাধিক ছবি রয়েছে এই সন্ত্রাসী ও আসামী তুর্জয়ের। আর রাজু আহম্মেদের যে খান মাসুদের কাছের লোক এটা যেমন ওপেন সিক্রেট বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ঠিক তেমনি খান মাসুদের সাথে রাজুর অসংখ্য ছবি রয়েছে যা দেখলে সব কিছু পানির মত পরিষ্কার হয়ে যায়।
জানা গেছে, যুবলীগ নেতা খান মাসুদের বিশাল বাহিনী রয়েছে। পুরো বন্দর জুড়ে তার বাহিনীর লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর যে কোন কাজে আইনের জাটে আটকা পড়লে কিংবা ঝামেলা হলেই ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে যুবলীগ নেতা খান মাসুদ। এতে করে অনুগামীদের কাছে আদরের পাত্রে পরিণত হয় খান মাসুদ।

আরেকটি ছবিতে আসামীদের তালিকায় থাকা যুবলীগ নেতা মাসুদের পাশে ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল প্রধানকে দেখা গেছে। সেই ছবিতে দুলাল প্রধানের সাথে একজন সাংসদকেও দেখা যায়। যুবলীগ নেতা মাসুদ নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করতে বেশ উদগ্রীব বটে। যেকারণে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে সম্প্রতি নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সাংবাদিক ইলিয়াস। তাই তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
জানা গেছে, কাউন্সিলর দুলাল ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যেকারণে সম্প্রতি কাউন্সির দুলাল বাহিনীর প্রধান ও তার ভাগ্নে অপু প্রকাশ্যে তরোয়াল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে খান মাসুদের বাড়িতে হামলা করে করে তার বোন সহ অন্যদের আহত করে।
এ নিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটলেও উপর মহলের ইশারায় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যেকারণে তাদের অনুগামীরা ক্রমশ আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। দুলালের বিরুদ্ধে মাদক মামলা সহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। এর আগে ডিবি পুলিশের হাতে মাদক দ্রব্য সহ হাতে নাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে।
এদিকে এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক বিজয় পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আল আমিনকে মারধর করেছে ওই গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা। ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর চক্রটির রনি, মুন্না, গোলে মিয়া, ব্লাক রনি ও মুশুল তাকে মারধর করেছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক আলামিন। এছাড়া ফোনে দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক সেন্টুকে প্রণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত ১১ অক্টোবর রাতে বাসায় যাওয়ার পথে উপজেলার আদমপুর এলাকায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক ইলিয়াসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। ওই রাতে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তুষারকে আটক করে পুলিশ। এসময় তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারালো ছুরিও উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইলিয়াস উপজেলার জিওধরা এলাকার মজিবর মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় দৈনিক বিজয় পত্রিকার বন্দর সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতো।
জানাগেছে, ইলিয়াস হোসেনকে হত্যার ঘটনার পেছনে প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়া, অবৈধ গ্যাস সংযোগের তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া সহ পূর্বের বিরোধের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ছিল জানিয়েছেন পুলিশ। ১২ অক্টোবর সোমবার সকালে নিহতের স্ত্রী জুলেখা বেগম বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেন। এতে আটককৃত তিনজনসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। আসামিরা হলো গ্রেপ্তারকৃত তুষার (২৮), মিন্নাত আলী (৬০) ও মিসির আলী (৫৩)। আর পলাতক রয়েছে হাসনাত আহমেদ তুর্জয় (২৪), মাসুদ (৩৬), সাগর (২৬), পাভেল (২৫) ও হযরত আলী (৫০)। এর আগে ভোরে বন্দর উপজেলার জিওধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিন্নাত আলী ও মিসির আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বন্দর মডেল থানার পরিদর্শক আজগর হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুষার জানিয়েছে সে একাই সাংবাদিক ইলিয়াসকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। অন্য আসামিরা বলছেন তারা হত্যা করেননি। এলাকায় প্রভাব বিস্তারে বাধা দেয়া, অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া ও পূর্বের বিরোধের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে সাংবাদিক ইলিয়াসকে হত্যা করে তুষার। আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তখন বিস্তারিত জানানো হবে।









Discussion about this post