নরসিংদী ডিবি পুলিশের দারোগা সেই গাফ্ফার আবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ইউসুফ নামের এক বৃদ্ধকে আটক করে নেয়ার পর টাকার জন্য নির্যাতনের পর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । এই দারোগা গাফাফারের গ্রামের বাড়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয় উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নে হওয়ার কারণে বছরের পর বছর জুড়ে নরসিংদী জেলায় অবস্থান করে অসংখ্য ক্রসফায়ার, গুলি করে পঙ্গু করে দেয়াসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে দারোগা গাফ্ফারের বিরুদ্ধে। এই দারোগা গাফ্ফারের বিরুদ্ধে নিজ দপ্তরে বসে মাদক সেবনের অভিযোগ থাকলেও আজো কেউ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নাই । ডোপ টেষ্টের জন্য কয়েক দফা অভিযোগ উঠলেও গাফ্ফার বরাবরই রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে । পুলিশের হেড কোয়ার্টারের দারোগা গাফ্ফারের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা হলেও অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ কোন ব্যবস্থা নেয় নাই । এর আগেও নারায়ণগঞ্জ থেকে কয়েকটি পরিবারকে আটক করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সেই অভিযোগ আমলে নেয় নাই কর্তৃপক্ষ। যার কারণে এবার গাফ্ফারের হাতে প্রাণ দিতে হলো মো. ইউসুফ মিয়া (৫৪) কে ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নরসিংদীতে ডিবি পুলিশের হেফাজতে ডাকাতির মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জের ইউসুফ মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত ডাকাতি মামলার আসামি ইউসুফ নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার জালকুড়ির মৃত আলী হোসেনের ছেলে।
এর আগে ডাকাতির মামলায় নিহত ইউসুফসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ ডাকাতির লুন্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে প্রেস রিলিজ দিয়ে তথ্য জানান নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, চলতি মাসের ৪ নভেম্বর নরসিংদী ঘোড়াশাল ৫টি স্বর্ণের দোকানসহ ৬টি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ডাকাত দল ১০৯ ভরি স্বর্ণালংকার, ৫০০ ভরি রৌপ্য ও নগদ ১৮ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পলাশ থানায় মামলা দায়ের হয়। এরপর ডাকাতদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ।
এরই জের ধরে মাধবদীর বিরামপুর এলাকা থেকে ইউসুফ মিয়া ও রোকসানা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘোড়াশাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সাল ও কাইয়ুম নামে আরও দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ ডাকাতির কথা স্বীকার করেন। এবং ডাকাতির মালামাল মাটির নিচে লুকানো আছে বলে জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইউসুফ অসুস্থ বোধ করে। পরে তাকে ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেণ। ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এরপর গ্রেফতারকৃত রোকসানা ও ফয়সালকে নিয়ে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার জালকুড়ি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। পরে তাদের দেখানো ফয়সালের বাড়ি থেকে লুন্ঠিত ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৪০ ভরি রুপা ও নগদ সত্তর হাজার পাঁচশত টাকা উদ্ধার করা হয়।
নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এমএন মিজানুর রহমান বলেন, ইউসুফ নামের যে রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল তার বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধ করে নরসিংদী পুলিশের একাধিক সদস্য বলেন, ডাকাতি মামলার আসামী মো. ইউসুফ মিয়া (৫৪) কে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ই আসামীরা মালামাল ফেরৎ দিয়ে নিজেদের দ্বায় স্বীকার করে নেয় । এরপর টাকার জন্য শুরু হয় নির্যাতন ।কয়েকদফা অন্যান্য আসামীদের মতো মো. ইউসুফ মিয়ার পরিবার মারধর ঠেকাতে টাকা দিয়েও রক্ষা করতে পারে নাই । ইউসুফ মিয়া মারা গেলে আরেক দফা দারোগা গাফ্ফার পুরো পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসেছ যাতে মুখ না খুলে । মুখ খুললে পুরো পরিবারকে ডাকাতি মামলায় গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে আসছে গাফ্ফার ও তার নিজস্ব একটি বাহিনী । এভাবেই প্রায় ৮/১০ বছর যাবৎ নরসিংদী ডিবিতে থেকে মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দারোগা গাাফ্ফার । দারোগা গাফ্ফারের ফিরিস্তি জানতে হলে নরসিংদী কারাগার, পুলিশ হেড কোয়ার্টারে খোজসহ তার ডোপ টেষ্ট করলেই বেড়িয়ে আসবে গাফ্ফারের বিশাল অপরাধের চাঞ্চল্যকর তথ্য ।
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, এই মামলাটি মূলতঃ তদন্ত করেন পলাশ থানার ওসি । তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নরসিংদী ডিবি পুলিশের দারোগা গাফ্ফার আটক করে নিয়ে আসেন মো. ইউসুফ মিয়া (৫৪) কে । দারোগা গাফ্ফারের হেফজাতে থাকাবস্থায় ই মারা যান মো. ইউসুফ মিয়া । দারোগা গাফ্ফারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে ওসি মোস্তফা আরো বলেন, ভাই এই বিষয়গুলি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বিষয় । এ বিষয়ে আমার বকছু বলার নাই ।









Discussion about this post