গ্যাস–সংকটের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে কেরোসিনের স্টোভ ও গ্যাস সিলিন্ডার এবং লাকড়ির চুলা ব্যবহার করছেন। এতে সংসারের খরচ বাড়ছে।
- প্রতিবছর শীতেই গ্যাসের এ সমস্যা দেখা দেয়।
- গত এক সপ্তাহে এ সমস্যা আরও বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেওভোগ, বাবুরাইল, উকিলপাড়াসহ মূল শহরের অনেক এলাকায় বছরের পর বছর যাবৎ সারাদিন দুই-এক ঘন্টা গ্যাস থাকলেও বাকী ২২-২২ ঘন্টা ই চুলা জ্বালানো যায় না ।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী ফতুল্লা ও শহর এলাকার গ্যাস সংকটের কারনে জনতার আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে, “গ্যাস না পেলে বিল দেবেন না বলে” ঘোষণা দিয়ে পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করেন । ওই সময় থেকেই ফতুল্লা থানা এলাকার অধিকাংশ এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন ঠিক হলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে অনেক এলাকায় এখনো গ্যাস সঞ্চালন ঠিক হয় নাই । ফলে ভোগান্তি যেন নিত্য নৈমিত্তিক স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ।
শহরের ১নং বাবুরাইল এলাকার গৃহবধূ সাহিদা হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রায় ৮/৯ বছর যাবৎ এই এলাকায় মধ্যরাতে দুই এক ঘন্টার জন্য গ্যাস থাকে । এরপর সারাদিন আর গ্যাসের দেখা নাই । এভাবেই চলছে । জ্বালানী না পেয়ে ভিন্নভাবে জ্বালানী খরচ ব্যয় হওয়ায় এতো বছর যাবৎ গ্যাসের বিলও বকেয়া পরে আছে৷ কি করবো এতো বছরেও বুঝে উঠতে পারি নাই৷
অপরদিকে বন্দর উপজেলার একরামপুর এলাকায় বাসা আশরাফুন নাহারের। তাঁর বাসায় প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে গ্যাসের চাপ কমে যায়। তখন চুলা নিবু নিবু জ্বলে। এ গ্যাসে রান্না করা যায় না। রাত ১১টার পর গ্যাস কিছুটা বাড়লেও ভোরে চলে যায়। এ কারণে রাত জেগে রান্না করতে হচ্ছে।
আশরাফুন নাহার বলেন, প্রতিবছর শীতেই গ্যাসের এ সমস্যা দেখা দেয়। গত এক সপ্তাহে এ সমস্যা আরও বেড়েছে। রাত জেগে রান্না করতে গিয়ে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এভাবে রান্না করা কষ্টকর। খাবারও ভালো থাকে না।
নগরের টানবাজার এলাকায় থাকেন সুমন সাহা। তিনি বলেন, তাঁর এলাকায় দিনে ২০ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না। এ কারণে টানবাজার ও আশপাশের এলাকায় সিলিন্ডারে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে। গ্যাসের সমস্যার কারণে ভাড়াটেও পাওয়া যায় না।
শুধু আশরাফুন বা সুমনের বাসায় নয়, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়ই জ্বালানি গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে দিনের বেলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে গৃহিণীদের রাত জেগে রান্না করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকেরা।
গ্যাস–সংকটের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে কেরোসিনের স্টোভ ও গ্যাস সিলিন্ডার এবং লাকড়ির চুলা ব্যবহার করছেন। এতে সংসারের খরচ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিষয়টি তিতাস গ্যাস কোম্পানিকে বারবার জানিয়েছেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরের টানবাজার, সনাতন পাল লেন, এস এম মালেহ রোড, বংশাল, নয়ামাটি, দেওভোগ, বাবুরাইল, পাইকপাড়া, নয়াপাড়া, জল্লারপাড়, শীতলক্ষ্যা, তামাকপট্টি ও নলুয়ায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার হাটখোলা, ফরাজীকান্দা, নরসিংহপুর, ধর্মগঞ্জ, ফতুল্লার সস্তাপুর, কাঠেরপুল, লাল খাঁ ও কায়েমপুর এলাকায় গ্যাস কম থাকছে। বন্দর উপজেলার সালেহনগর, কুশিয়ারা, একরামপুর, তিনগাঁও, লক্ষণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও গ্যাসের সংকট চলছে।
লোকজন বলছেন, এসব এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাস থাকছে না। রাত ১১টার পর গ্যাস এলেও আবার ভোরে চলে যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এ সংকট চলছে। তবে শীতে গ্যাসের সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মমিনুল হক বলেন, ‘আমরা সিস্টেমে গ্যাস সরবরাহ কম পাচ্ছি। চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় এ সংকট হচ্ছে।’









Discussion about this post