ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছরই সেমাইয়ের চাহিদা আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। সারা বছর বাজারে যে সেমাই বিক্রি হয় তার প্রায় ৯০ শতাংশই বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে।
চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে প্রতিবছরই ঈদকে সামনে রেখে দেশজুড়ে শুরু হয় সেমাই তৈরির মচ্ছব। চলে নকল ভেজাল সেমাই তৈরির কসরৎ। অধিকাংশ নকল ভেজাল সেমাই কারখানার পরিবেশ গা ঘিন ঘিন করার মতো। নোংরা স্যাঁতসেঁতে মেঝের মধ্যে ফেলে রাখা হয় ময়দা। সে ময়দায় পানি দিয়ে পা মাড়িয়ে মণ্ড তৈরি করে শ্রমিকরা। মেঝেতে রাখা মণ্ডে পড়ে থাকে মাছি এবং বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়। এভাবে মণ্ড বা খামির মেশিনে দিয়ে বানানো হয় চিকন এবং লাচ্ছা সেমাই। সেমাইতে মেশানো হয় কৃত্রিম রং। মেশিনে সেমাই কাটা শেষে খোলা উঠানের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। নোংরা পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ধারে রোদে শুকানো হয় সেমাই। সেমাই শুকালে নিয়ে আসা হয় ভাজার জন্য।
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার একাধিক কারখানা, সোনারগাঁ উপজেলায় কয়েকটি কারখানায় , সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশিপুর , সৈয়দপুর, পাইকপাড়া, নিতাইগঞ্জসহ সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাতে গত এক মাস যাবৎ গড়ে উঠেছে অসংখ্য সেমাইয়ের কারখানা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যরা সকল অবৈধ সেমাই কারখানার খোজ জানা থাকলেও পূর্ব থেকেই নকল ভেজালের সঙ্গে যুক্ত অসৎ ব্যবসায়ীদের যোগ সাজস থাকায় কোন ভাবেই এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় নাই ।প্রতি বছওেরর মতো এবারো ভেজাল লাচ্ছা সেমাই তৈরীর কারখানার কর্তপক্ষ এক জোট হয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে সকল কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে ।
অসাধু ভেজাল ব্যবসায়ীর দল চকচকে মোড়কে মুড়িয়ে বিএসটিআইয়ের ভুয়া সিল লাগিয়ে নকল ভেজাল সেমাই তুলে দেয় মানুষের হাতে। ভেজাল খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে লাখ লাখ মানুষ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে গ্যাসটিক, ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিসসহ বিভিন্ন রোগে। এ ছাড়া এসব খাবারে বিভিন্ন রকমের জীবাণু থাকায় অনেক সময় টাইফয়েড এবং প্যারা টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বৃদ্ধ এবং শিশুদের নকল ভেজাল মানহীন খাবারে মারাত্মক ক্ষতি হয়। ভেজাল খাবারে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গর্ভবতী মহিলারা। ক্ষতিকর জীবাণুতে আক্রান্ত হয়ে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে নবজাতক। নকল ভেজাল বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি সেমাই জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি। এ হুমকির মোকাবিলায় সরকারকে কঠোর হতে হবে। ভেঙে দিতে হবে নকল ভেজালকারীদের বিষদাঁত।








Discussion about this post