তোরা যে যাই বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই । অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এবার এক পিছকে ছোকড়ার কাছে লজ্জা পেতে হবে ? এমন প্রশ্ন সামনে রেখে সংবাদকর্মীকে ঠেকাতে অন্যান্য সংবাদকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে জোড়লো চেষ্টার পর স্বস্তির সুবাতাস উপহার দিলেন সাইফ উল্লাহ বাদল কে।
এমন খবরে সেই বিজ্ঞাপনের ভাষায় কাশিপুর ইউনিয়নবাসী মন্তব্য করছেন, “নে বাবা এবার নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমা !”
নানা মেরুকরণ ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ, জোড়ালো তদ্বির, ফোনের পর ফোন ! শুরু হয় জোড়ালো তদ্বির । শেষ পর্যন্ত সফলতা । আসে স্বস্তি । উচ্চ মাত্রার ডায়াবেটিকসের পরও মিষ্টিমখ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন বাদল ও তার সমর্থকেরা
সদর উপজেলার ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল সাধারণ জনতার কাছে যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে দলের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি নিবেদিত প্রাণ। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ফতুল্লা এলাকায় শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে উচ্চারিত হলেই বাদলের নাম শুরুতে আসবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
বিএনপির প্রতাপশালী নেতা জাকির খান ও রোজেলের মতো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় থাকার পরও বিএনপির নেতাকর্মীদের রোষানল তো বটেই বরং একের পর এক মামলা আর বাড়িঘরে হামলার কারণে কয়েক বছর ছিলেন আত্মগোপনে। আবার সেই বাসা বদল করতে ভ্যানগাড়ি করে দেওভোগে পাঠানোর ব্যবস্থাও করে সেই কুখ্যাত ডাকাত গিয়াস উদ্দিন । যিনি এখন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের নেতা ।
সেই সাইফ উল্লাহ বাদল রাজনীতির জন্য বিক্রি করতে হয়েছে বসত ভিটা আর ভবন। নেতাকর্মীদের জন্য অকাতরে বিলিয়েছেন সেই টাকা। বিভিন্ন এলাকাতে কর্মী সভা করে ওই সময়ে কোনঠাসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেমন চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছেন তেমনি প্রবাসে থাকা শামীম ওসমানের মোবাইল ফোনের ভাষণ শুনিয়ে কর্মীদের সাহস আর তেজদীপ্ত করেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভেবেছিলেন কিছু একটা করবেন। দল ক্ষমতায় কিন্তু পারেননি ওই সময়ের এমপি সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে। বিএনপির মতই কবরীর সাথে লড়তে হয়েছে আরো ৫ বছর। ২০১৪ সালে শামীম ওসমান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি। ২ বছর পর ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কাশীপুরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন বাদল। নেপথ্যের কুশীলব শামীম ওসমান। তার পর কিছুটা স্বস্তি।
তবে ৫ বছর পর আবারো কিছুদিন নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বয়সের ভারে নুহ্য সাইফ উল্লাহ বাদল। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী। শক্ত প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান মোমেন সিকদার নির্বাচন থেকে সরে যান শামীম ওসমানের বদৌলতে। তখনো কিছুটা স্বস্তি। কিন্তু শেষে ঘুরাম হারাম করেন দেন রাশেদুল ইসলাম যিনি একজন সংবাদকর্মী। মনোনয়ন পত্র দাখিল করে তাক লাগিয়ে দেন সকলকে। তবে সমীকরণ আগে থেকেই প্রতীয়মান হয়েছিল ঘাম ঝরিয়ে তিনিও সরে যেতে পারেন। সরেও গেছেন। ২০ অক্টোবর বিকেলে সমঝোতা বৈঠক হয়। সরে যান রাশেদুল। সমর্থন দেন বাদলকে। যদিও এক রাশেদুলকে বসিয়ে কিংবা সরে যেতে শুধু বাদল সহ আশেপাশের লোকজনেরাও নির্ঘুম রাত পাড়ি দিয়েছেন। প্রেশার বেড়ে যায় বাদলের। হতাশ বিমর্ষ হয়ে উঠেন। কোন কূলকিনারা করতে পারেননি। শক্ত ছিলেন মোমেন সিকদার। বড় মানুষকে এমপিকে দিয়ে বসানো হয়েছে। শামীম ওসমানের অনুরোধ রেখেছেন মোমেন। দিয়েছেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয়। রাজনীতির বাইরে ছিলেন রাশেদ। কিন্তু তাকে নিয়ে এত ভয় কেন।
বাদলের ঘনিষ্ঠজনদের একটাই বক্তব্য, ‘রাঘববোয়ালরা সরে গেছেন। এখন ছোট মাছ থাকলে আমাদের ইজ্জতের প্রশ্ন। তাই তাকে ম্যানেজের চেষ্টা করা হয়।’
২০ অক্টোবর বিকেলে বাদল আর রাশেদ একে অন্যের সঙ্গে মিষ্টিমুখ করান। ডায়াবেটিক বেড়ে যাবে জেনেও বাদলকে সেই মিষ্টি খেতে হয়। কারণ এ একটি মিষ্টির জন্য তিন রাত ঘুম হয়নি ঠিকমত। হন্যে হয়ে খোঁজা হয়েছে রাশেদকে। শেষে পেয়ে মিশন সাকসেস।

তবে বাদলের যে ভোটের ভয় সেটাও অনুমেয়। কারণ এক রাশেদ নির্বাচনী মাঠে থাকলে হয়তো ভোট হতো। রাশেদ হেরে যেতে কিন্তু কাশীপুরবাসী জিতে যেত। ভোট দিতে চায় জনগণ। মেম্বার পদে ভোট দিতে পারবেন কিন্তু চেয়ারম্যান পদে না। এ আক্ষেপে হতাশাও সাধারণ মানুষ মানে ভোটারদের মধ্যে। শেষ ২০ বছর আগে হয়তো ভোট দিয়েছিল। গতবার দিতে পারেনি এবারও পারেনি। ভোট হেরে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরা নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারিনি।
রাশেদ টিকে থাকলে লোকজন অন্তত ভোটের লাইনে কিছু থাকতো। নিশ্চিত হয় হতো বাদলের। কিন্তু এত ভয় পাবেন তিনি কেউ কল্পনা করতে পারেননি। যে নেতা বিএনপিকে সামলিয়েছেন, বিএনপির প্রশাসনকে সামলিয়েছেন। হামলা মামলা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মাইল দূর থেকে শামীম ওসমানকে নেতাকর্মীদের অতি কাছে নিয়ে এসেছিলেন। সেই মানব যখন ভোটে ভীত হয় তখন ভোটাধিকার নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায় সকলের মাঝে। তবে সবকিছুর সমাধান। এবার হয়তো শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন সাইফ উল্লাহ বাদল।









Discussion about this post