মধ্য রাত ১২ টা কিংবা ভোর ৬টা যখন ই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয় সংলগ্ন চাঁদনারী বস্তিতে হাক ডাকসহ নানা ভংগিমায় মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যেই বিক্রি করছে গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে এভাবে প্রকাশ্যে ই মাদক বিক্রির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে এ নিয়ে পুরো জেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র সমালোচনা । অভিযোগ রয়েছে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা সহধর্মিণীকে সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়ে প্রতিমাসে ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা মাসোয়ারা দিয়ে এমন মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা ।
জানা যায়, চাঁদমারী বস্তির আজিজ, আজিজের স্ত্রী, ইতি (বুচি), রুমি, বিলকিস, খাদেম, বৃষ্টি, মহুর, নাজমা, ময়না, আক্তার মুহুরীসহ আদালতের কয়েকজন আইনজীবীর আইনী শেল্টারের কারণে মাদকের রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে ।
সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট প্রকাশ্যে এই মাদক কারবার নিয়ে অনুসন্ধানকালে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন চাষাড়া ফাঁড়ির দারোগা ড্রাইভারসহ পাচজনের একটি দল মাদকের হাট হিসেবে পরিচিত চাঁদমারী বস্তির সামনে দাড়িয়ে মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বখড়া আদায় করতে দেখা যায় । এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফতুল্লা থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে জাবা যায় আশ্চর্যজনক তথ্য । ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন চাঁদমারী বস্তি এলাকায় দায়িত্ব পালন করে সদর থানার পুলিশ ! কেন এমন অনৈতিক দায়িত্বের কান্ড ? এমন প্রশ্নের উত্তরে সদর থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় এমন দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে ।
এতো কিছুর পরও নিউজ নারায়ণগঞ্জ ‘মুখোশ পরে মাদক বিক্রি ‘ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলেও বিনা বাধায় আরো বিরামহীন গাতিতে শুক্রবার দিবাগত রাতে মাদকের এই হাটের দৃশ্য নগরবাসীকে ব্যথিত করেছে
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার চাঁদমারী বস্তিতে এবার প্রকাশ্য দিবালোকে মুখোশ পড়েই মাদক বিক্রি করছে মাদক বিক্রেতারা। প্রশাসনের লোকজন ও সাধারণ মানুষ যাতে মাদক বিক্রেতাদের চিনতে না পারে কিংবা কেউ যাতে মুঠোফোনে মাদক বিক্রেতাদের ছবি তুলতে না পারে এজন্য মুখোশ পড়ে মাদক বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
১৮ মার্চ বৃহস্পতিবার চাঁদমারী বস্তিতে মাইনউদ্দিন স্টোরের পাশে এহেন দৃশ্য দেখা যায়। বাজারের ব্যাগ হাতে দাড়িতে মুখোশ পরিহিত এক মাদক বিক্রেতাকে দেখা যায় মাদক বিক্রি করতে। তার পাশেই দাড়ানো ছিল বেশ কিছু ক্রেতা। অদূরেই বিক্ষিপ্তভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বেশ কিছু মাদক বিক্রেতাদের শেল্টারদাতাদের।
জানা গেছে, চাঁদমারী বস্তিতে দিনে-রাতে মাদকসেবীদের ভিড় আর আনাগোনা দেখে এলাকাটিকে মাদকের ‘হাট’ বলছেন স্থানীয়রা। পূর্বের ন্যায় বর্তমানেও প্রকাশ্যে শিষ দিয়ে বিক্রি হচ্ছে মাদক। দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদমারী বস্তি অপরাধমূলক কর্মকান্ডের স্থান হিসেবে কুখ্যাত। বস্তিতে বিক্রি হয় ফেনসিডিল, মদ, বিয়ার, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।
২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারির পর চাঁদমারী বস্তিতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। সে সময় মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমে যায়। কিছুদিন পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের পূর্ব পাশে জেলা পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট কার্যালয়ের পেছনে চাঁদমারী থেকে নতুন কোর্ট পর্যন্ত এলাকা জুড়ে প্রকাশ্যে বিক্রি হতে শুরু করে মাদক। শহরবাসীর কাছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডটি ‘মাদকের হাট’ হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাদক বিক্রি চলছে। অনেকটা শীষ দিয়েই চলছে মাদকের বিকিকিনি।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনকালে চাঁদমারী বস্তি থেকে ৪৫ কেজি গাজা উদ্ধার করেছিলেন গাউছুল আজম। পরে তিনি চাঁদমারী বস্তিতে গড়ে তুলেছিলেন স্বপ্নডানা নামে একটি প্রাক প্রাথমিক স্কুল। এর পাশাপাশি নারীদের জন্যও গড়ে তুলেছিলেন দোলনচাপা নামের একটি বুটিক শপ। মাদকের স্বর্গরাজ্য খ্যাত চাঁদমারী বস্তিতে তিনি শিক্ষার আলো জে¦লেছিলেন। তৎকালে মাদকের বিকিকিনি ছিলনা বললেই চলে। গাউছুল আজমের বদলীর পরে চাঁদমারীতে আবারো শুরু হয় মাদকের অভয়ারণ্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন এখানে প্রকাশ্যেই শীষ দিয়ে মাদক বিক্রি হচ্ছে। এসব দেখেও কিছু করছে না পুলিশ। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অদূরেই প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝেমধ্যেই অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছেনা স্পটটি। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুলিশ নিয়মিত মাসোহারা পায় বলেও অভিযোগ উঠেছে। দিনে-রাতে প্রকাশ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের চাঁদমারী এলাকায় মাদক বিক্রি হচ্ছে। রিকশা চালকেরা বাসের হেলপাররা রিকশা ও বাস দাঁড় করিয়ে রেখে প্রকাশ্যে মাদক কিনছে। মাদকের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ঘটছে অবনতি। প্রায়শই চাঁদমারী বস্তিতে আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। বাড়ছে ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড।









Discussion about this post