আগের দিনও যে পেঁয়াজের কেজি ১৪০-১৫০ টাকার মধ্যে ছিল, সকালেই তার দাম উঠে গেছে ২০০-২২০ তে; এ যেন ধাক্কার মতো লেগেছে- তাই পেঁয়াজ না কিনেই বাজার থেকে ফিরেছেন অনেকে। পেঁয়াজ না কিনে ফিরতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেছেন, আজ বৃহস্পতিবার সকালে পেঁয়াজে দর ডাবল সেঞ্চুরি ক্রস করেছে
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বুধবার নারায়ণগঞ্জের সকল পাইকারি বাজার ও পাড়া-মহল্লার বাজার ও মুদি দোকানগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, কোথাও কোথাও ২০০ টাকাও দাম চাওয়া হচ্ছিলো । আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেই একই পেঁয়াজ ।
বুধবার বিকালে শহরের দিগুবাবুর কাচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি ক্রস জাতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। এর থেকে বাছাই করা তুলনামূলক ভালো মানের পেঁয়াজের দাম চাওয়া হচ্ছিল প্রতি কেজি ২০০ টাকা।
এই বাজারের একটি মুদি দোকানের সামনে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অন্তত পাঁচজন ক্রেতাকে পেঁয়াজের দাম শুনে ভ্রু কুচকাতে দেখা যায়। অন্য দুটি দোকানে গিয়েও একই দাম দেখেন তারা। এক পর্যায়ে পেঁয়াজ ছাড়া কাঁচা বাজারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেই বাড়ি ফেরেন এসব ক্রেতা ।
এর মধ্যে এই দোকান থেকে মাত্র একজনকে আধা কেজি পেঁয়াজ কিনতে দেখা যায়।
মুদি দোকানি পোকা মিয়া ক্ষোভের সূরেই বলেন, মঙ্গলবার দিগুবাবুর বাজারের পাইকারি দোকান থেকে প্রতি কেজি ১৫৫ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনে এনেছেন তিনি। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয় যোগ করে এখন তিনি প্রতি কেজি ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।
“গতকালের পেঁয়াজ অর্ধেকও বিক্রি করতে পারিনি। তাই আজকে আর নতুন করে পেঁয়াজ কিনি নাই। কারণ কাস্টমাররা দাম শুনে যা তা মন্তব্য করছে । বিক্রিও কমে গেছে। তার চেয়ে ভালো যে আপাতত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখি।”
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাবুরাইল বউ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী বলেন, “দুইশ টাকা যদি পেঁয়াজ কিনতেই খরচ করতে হয় তাহলে অন্যান্য সদাই করব কীভাবে ? পেঁয়াজের এত দাম আমার জীবনে দেখি নাই। স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে আর পেঁয়াজ খাওয়া সম্ভব না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের মাছুয়া বাজারের সবজির দোকানে পেঁয়াজের দাম জিজ্ঞেস করে জবাব শুনে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে।
সেখানকার এক দোকানে কেজি চাওয়া হচ্ছিল ২১০ টাকা, অপরটিতে ২০০ টাকা।
আমজাদ নামের সেখানকার এক দোকানি বলেন, সকালে দিগুবাবুর বাজারে গিয়ে দেখেন পেঁয়াজের দাম আগের দিনের বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পাল্লায় (৫ কেজি) প্রায় ১০০ টাকার মতো বেশি।
দিগুবাবুর বাজারের ১৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা রিপন বলেন, তার পেঁয়াজটা তুলনামূলক কম দামের। বুুুধবার ৬৮০ টাকায় এক পাল্লা পাওয়া গিয়েছিল । আর ভালো মানের পেঁয়াজের পাল্লা ৭২০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় উঠেছে । যা আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ১০০০ টাকা পাল্লায় (৫ কেজি) বিক্রি করতে হচ্ছে ।
২১০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা সেখানকার খুচরা দোকানি সুজন মিয়া বলেন, “কী করব দামই বেশি পড়েছে। এখন পেঁয়াজ বিক্রিও কমে গেছে। আগে দিনে ২০ কেজির মতো বিক্রি হত। আজকে ১০ কেজি এনেছি, এখনও তো প্রায় পুরোটাই রয়ে গেছে।”
শহরের কালীর বাজারের একটি দোকানে গিয়েই দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে চায় এক নারী ক্রেতা। তখনও পেঁয়াজের দাম ভালো করে বুঝে উঠতে পারেননি তিনি।
বিক্রেতা যখন জানালেন দুই কেজির দাম ৪২০ টাকা, তখনই হতবিহ্বল হয়ে পেঁয়াজ রেখে চলে যান তিনি।
পরে দোকানি বলেন, “আমি বলেছিলাম, দেশি পেঁয়াজ কেজি ২১০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা। ওই মহিলা ভেবেছেন দেশি পেঁয়াজ কেবল ১৫০ টাকা। তাই তিনি দুই কেজি মাপতে বলেছিলেন। পরে মাপা পেঁয়াজ না নিয়েই চলে যান তিনি। বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে।”
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর দেওভোগ বাংলা বাজারের কাচা বাজারের মুদি দোকানী জসিম উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, “দামের কারণে পেঁয়াজের বাজারের খুব শোচনীয় অবস্থা। মানুষ ১০ টাকার পেঁয়াজ কিনতে চায়। অথচ একশ গ্রাম পেঁয়াজের দাম আছে ২০/২২ টাকা। সবাই গালি দেয়। কিন্তু আমাদের কী করার আছে?”
কালীর বাজারের পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কথা হয় আড়তদারদের সঙ্গে।
তারা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, “সত্যিকার অর্থেই বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সঙ্কট রয়েছে । সেই কারণে সরকার নানা অভিযান চালানোর পরেও, অনেক জেল-জরিমানা করার পরেও দাম কমাতে পারেনি। কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমদানি করা পেঁয়াজ সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। আর সেই কারণেই এখন বাজারের এই পরিস্থিতি।”
সঙ্কটের সুযোগে অনেক পেঁয়াজ ব্যবসার বিভিন্ন ধাপে অতি মুনাফা হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন এই ব্যবসায়ী। তবে বেচা-বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে নিজের আড়ৎ লোকসানে পড়েছে বলে জানান অনেকেই ।
“এখন পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য আছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা। তাহলে খুচরায় সেই পেঁয়াজ বিক্রি হতে পারে সর্বোচ্চ ২২০/২৩০ টাকা। এর চেয়ে বেশি দাম যারা রাখছে তারা অবশ্যই অন্যায় করবে,” বলেন ওই বাজারের ব্যবসায়ী কামাল।
পেঁয়াজের বিক্রি কমার কথা জানিয়ে এই ব্যবসায়ীরা বলেন, “এই দোকানে আমি সাধারণ সময়ে ১০০ থেকে দেড়শ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি করতাম। এখন সারা দিনে ২০ বস্তা পেঁয়াজও বিক্রি করতে পারছি না। তাহলে আনুষাঙ্গিক খরচ পোষাতে প্রতি বস্তায় কত টাকা লাভ করতে হবে ? দামই যেখানে আকাশচুম্বি সেখানে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ কোথায় ?”
অন্যান্য পাইকার ও মুদি দোকানিরাও বলছেন, গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের বিক্রি বেশ কয়েক গুণ কমে গেছে।
এতে পাইকারি বিক্রির আড়ৎগুলো ‘লোকসানের মুখে পড়ছে’ বলেও দাবি করেন অনেকে।
সর্বশেষ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে ঘিরে। গত শনিবার বুলবুল আঘাত হানার একদিন আগে থেকে নতুন করে বাড়তে থাকে দাম।
থমকে গেছে টিসিবির বিক্রি
গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে এসে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার পর খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি। এখন কোথাও কোন টিসিবির দোকান দেখা যায় নাই ।









Discussion about this post