নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার কাশীপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশমুলি বাজার সংলগ্ন অগ্নিকান্ডে ১০টি টিনের কাঁচা ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আংশিক পুড়েছে আরও চারটি ঘর।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে বারোটার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মন্ডলপাড়ার দুইটি এবং ফতুল্লার বিসিকের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। দমকল কর্মীদের প্রায় আধ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা শর্ট সার্কিট হলেও স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ওই বাড়ির মালিক বাবুল মীর একটি ফাঁকা ঘরে কিছু ঝুট (গেঞ্জির কাপড়) ও আশেপাশের ময়লা পোড়াচ্ছিলেন। ওই আগুনই আশেপাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অগ্নিকান্ডে দুই সারির পাঁচটি করে দশটি টিনের কাচা ঘর পুড়ে গিয়েছে। ঘরের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাশের আরও চারটি ঘরের আংশিক পুড়ে গিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় অন্তত দশজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, যে দশটি ঘর পুড়েছে তার মালিক বাবুল মীর নামে এক ব্যক্তির। তিনি থাকেন সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নে। আশেপাশের ঘরগুলোও তার অন্য পাঁচ ভাইয়ের। অগ্নিকান্ডে বাবুল মীরের ভাই জাভেদ মীরেরও চারটি ঘরের কিছু অংশ পুড়েছে। এই ঘরগুলোর ভাড়াটিয়ারা সকলেই পোশাক শ্রমিক কিংবা দিনমজুর। ঘটনার সময় কেউই বাড়িতে ছিলেন না। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে এসে দেখেন ঘরের কিছুই আর বাকি নেই। আগুনে পুড়ে গেছে সব।
অগ্নিকান্ডের ঘটনা যেখানে ঘটেছে তার পাশের গলিতেই কিছু কাঁচা ঘর ভাঙ্গার কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের মধ্য থেকেই একজন প্রেস নারায়ণগঞ্জ বলেন, এই ঘরগুলো ভেঙ্গে পাকা দালান করার চিন্তা মালিক বাবুল মীরের। ঘটনার সময় তারা ঘর ভাঙ্গার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির মালিক বাবুল মীর টিনের ঘরগুলির সামনে খালি জায়গায় পরিত্যক্ত কিছু ঝুট বিনষ্ট করার জন্য আগুনে পোড়াচ্ছিলেন। ঝুটের সাথে ককশিট, পুরোনো কাপড়ও ছিল। এই আগুনই পাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরগুলো পাশাপাশি থাকায় দ্রুতই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তালাবদ্ধ ঘর থাকায় মুহুর্তেই সব পুড়ে যায়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মন্ডলপাড়ার স্টেশন অফিসার বেলাল হোসেন বলেন, পৌনে একটার দিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে মন্ডলপাড়া ও বিসিকের দু’টি ইউনিটের আধ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি দশটি টিনের ঘর পুরো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত বলে জানান।
এই আগুনে পুড়ে গেছে আইসক্রিম বিক্রেতা মধুর দু’টি ঘরে থাকা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু। কিছুই বাকি নেই। ঘরের চালগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে জানান মধু।
তিনি বলেন, সোয়া একটার দিকে তিনি খবর পান। এসে দেখেন খাট, কাঠের তৈরি খাবারের ডুলি, আলনা, কাপড়চোপর সবই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঘরের ভেতর তার জমানো ২৬ হাজার টাকাও ছিল। সেসব পুড়ে গেছে বলে জানান তিনি।
মধু বলেন, আগুন কীভাবে লেগেছে তিনি তা জানেন না। ঘটনার সময় তিনি আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন। তবে স্থানীয় অনেকের কাছে শুনেছেন, বাড়িওয়ালা কিছু ঝুট পোড়াচ্ছিলেন। সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
পাশেই কান্না করছিলেন লিপি আক্তার। তিনি বলেন, ‘গা ধুইয়া মাত্র বের হইছিলাম ঘর থেকে। পাশেই চায়ের দোকানে বসছি। এর মইধ্যে শুনি আগুনের কথা। আইসা দেখি আগুনে সব শেষ।’
এদিকে অগ্নিকান্ডের সময় ঘটনাস্থলে ওই বাড়ির মালিক বাবুল মীর থাকলেও পরবর্তীতে তিনি সেখান থেকে চলে যান। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাড়ির কাজ করাচ্ছিলাম। চালের উপর ফেলে রাখা ছেড়া কাপড়-চোপড় সব একত্র করেছিলাম। কিন্তু আগুন তখনও দেই নাই।’ শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে দাবি তার।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা করছি। তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা বাড়িওয়ালার ওয়েস্টেজ পোড়ানোর কথা আমাদের জানাননি। এমনটা হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে বলা যেতে পারে। তদন্ত করে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো।’.









Discussion about this post