নিজস্ব প্রতিবেদক
ফতুল্লার সরকারী তেল ডিপো মেঘনা ডিপোর শ্রমিক ফান্ডের নামে ট্যাংক লড়ী থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগেে আফসু ওরফে তেল চোরা আফসুর ভাতিজা রাজিব কে আটক করেছে (৩৫) ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুরের দিকে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ তাকে আটক করে।এ সময় তেল চোরা আফসুর ছোট ভাই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়।
আটক রাজিব ফাজিলপুর এলাকার মৃত গিয়াসউদ্দিনের ছেলে এবং ফতুল্লার শীর্ষ তেল চোর আফসার উদ্দিন আফসুর ভাতিজা।
আফসু ট্যাঙ্কলড়ি শ্রমিক ইউনিয়ণের কথিত চেয়ারম্যান। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক তেল চোর ও জুয়াড়ি শাহিন।
মূলত তাদের নির্দেশেই এই চাঁদা আদায় করে রাজিব ও কাশিপুরের বাবুল। বাবুল আফসুর ভায়রা।
ভুক্তভোগী শ্রমিকেরা জানায়, আফসু ও শাহিনের নেতৃত্বে প্রতিদিনই মেঘনা ডিপোতে তেল নিতে আসা ট্যাঙ্কলড়ি থেকে ১৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে রাজিব ও বাবুল। কখনো কখনো এই চাঁদার পরিমাণ ২ থেকে আড়াইশ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। কেউ দিতে না চাইলে তাকে মারধরসহ গাড়ি লোড করতে দেয় না চাঁদাবাজরা। বেশ কিছুদিন ধরেই চাঁদা আদায় করতে কেন্দ্র থেকে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেসব নির্দেশনাও মানেনি।
তারা আরও জানায় গত ২৭ বছর ধরে ট্যাঙ্কলড়ি শ্রমিক ইউনিয়ণে শ্রমিক ফান্ডের নামে তোলা অর্থ একক ভাবেই আত্মসাত করে আসছিলেন আফসু। এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছেন তেল চোর ও জুয়াড়ি শাহিন। যুবদল নেতা মাসুদুর রহমানের পক্ষ থেকে মেঘনা ডিপোর ট্যাঙ্কলড়ি শ্রমিক ইউনিয়ণের সাধারণ সম্পাদক হয়েছে এই শাহিন। গত দুবছর ধরেই সে এই পদে আসে আকষ্মিক ভাবে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায় , বাংলাদেশ মেঘনা ট্যাঙ্ক লড়ি শ্রমিক ইউনিয়ণের চেয়ারম্যান পদটি বিগত ২৭ বছর ধরে আকড়ে ধরে রেখেছে ফাজিলপুর এলাকার মৃত এলাহি বক্সের ছেলে আফসার উদ্দিন ওরফে তেল চোরা আফসু। স্থানীয় পর্যায়ে তাকে তেল চোরা আফসু নামেই চেনে। তবে এই আফসু ট্যাঙ্কলড়ি চালক ও হেলপারদের কাছে এক মুর্তমান আতঙ্কের নাম।
এলাকার অনেকের তথ্যে জানা গেছে, তেলচোরা আফসুর কাছ থেকে হিসেব চাইতে গিয়ে এই ২৭ বছরে একাধিক শ্রমিক মারধরের শিকার হয়েছেন। আফসুর ছোট ভাই আরেক তেল চোর ও যুবদল নেতা সালাউদ্দিনের মাধ্যমে শ্রমিকদের সায়েস্তা করিয়ে থাকেন আফসু। তাদের দুই ভাইয়ের হাতে মারধরের শিকার হয়নি এমন চালক, হেলপার মেঘনা ডিপোতে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
২৪ ফেব্রুয়ারি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন দাবি করায় যমুনা ডিপোর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বাবুলকে বেধড়ক মারধর করেছেন ওই গুণধর দুই ভাই। এ ঘটনায় ফতুল্লায় থানায় ভুক্তভোগি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন।
অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, বিগত ২৭ বছর ধরে এই ডিপোতে শ্রমকি ইউনিয়ণের নামে যত চাঁদা উত্তোলন করা হয়েছে তার পুরোটাই গিয়েছে আফসুর পকেটে। এর একটি টাকাও শ্রমিক কল্যাণে খরচ বা শ্রমিক ফান্ডে নেই। শ্রমিকের রক্ত পানি করা ঘাম ঝরানো এই টাকায় আলিসান বাড়ি, গাড়ির মালিক বনে গেছেন এই তেল চোরা ব্যক্তিটি।
ট্যাঙ্ক লড়ি চালক ও শ্রমিক সূত্র জানায়, মেঘনা ডিপোতে একসময় প্রায় শতাধিক গাড়ি লোড করতে আসতো। কিন্তু আফসুর যন্ত্রণার কারণে সে সংখ্যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৭০ এ। প্রতিদিন এই ৭০টি গাড়ি থেকে শ্রমিক ইউনিয়ণের নামে ১শ ৪০ টাকা এবং মালিক সমিতির নামে ৩০ টাকা করে চাঁদা তিনিই উত্তোলন করছেন।
সূত্র বলছে, শ্রমকি সমিতির নামে ৭০ গাড়ি থেকে ১শ ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এখান থেকে ৩০ টাকা প্রশাসন, মালিক সমিতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটিকে দেয়া হয়। এ হিসেবে উত্তোলনকৃত চাঁদার মোট ৯ হাজার ৮শ টাকা শ্রমিক ইউনিয়ণে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তার পুরোটাই গত ২৫ বছর আফসুর নিজের পকেটে ঢুকেছে। তবে এখন এই টাকার একটা অংশ নিচ্ছে শাহিন।
মেঘনা ডিপো থেকে শ্রমিক ইউনিয়ণের নামে উত্তোলনকৃ চাঁদার পরিমাণ দৈনিক ৯ হাজার ৮শ টাকা হারে প্রতি মাসে (২২দিন) এর পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার ৬শ টাকা। এ হিসেবে বছরান্তে ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ২শ টাকা। এ টাকাটা শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার কথা থাকলেও একটি টাকাও কোনো শ্রমিকের কল্যাণে ব্যয় করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন ট্যাঙ্ক লড়ি চালক হেলপাররা।
শুধু চাঁদার টাকাই নয়, বিভিন্ন ট্যাঙ্কলড়ি চালক ও হেলপারদের জিম্মি করে প্রতি গাড়ি থেকে নানা ভাবে ১ থেকে ৫শ টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করছে আফসু ও শাহিন। এর বাইরেও ডিপোর ভেতর থেকে প্রতিদিন মিটারম্যানদের ব্ল্যাকমেইল করে প্রতি মিটার থেকে ৫০ লিটার করে তেল আদায় করছে তারা। এভাবে প্রতিদিন আরও ১০ হাজার টাকার উপরে আফসু ও শাহিন এই ডিপো থেকে আদায় করে নিচ্ছে।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মেঘনা ডিপোতে অন্যায়ের রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছে আফসার উদ্দিন ওরফে তেল চোরা আফসু। যার ফলে এসব কিছু সে থানা পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে করলেও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, শ্রমিকদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা হত। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ আসে। পরে বিষয়টি তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়ে তাকে আটক করা হয়। অন্যদেরকেও আটকের চেষ্টা চলছে ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র চাউর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থাসহ বিশেষ পেশার অনেককেই ম্যানেজ করে শীর্ষ তেল চোরদের গডফাদার আফসু ও তার অন্যান্য সহযোগীরা গ্রেফতার এড়াতে এবং মামলায় কোন আসামী যাতে না করা হয় সে লক্ষ্যে লাখ লাখ টাকা নিয়ে দর কষাকষি চলছে।









Discussion about this post