নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত নিয়ে শীর্ষ নেতাদের প্রকাশ্য দ্বন্ধ, অস্ত্র প্রদর্শন, গুলিবর্ষণ, হামলা মামলা, তর্ক বির্তক, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের অপেশাদারিত্ব আচরণের পরও শাসক দলের নেতাদের সার্বিক সহযোগিতায় কমপক্ষে ৩০ জন লাইন প্রতিদিন চাঁদা আদায়, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী গোবিন্দের প্রকাশ্য ও নিয়মিত চাঁদা গ্রহণ, ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার পরও পুরো নগরবাসীদের জিম্মি করে চলে ই যাচ্ছে নগ্ন কান্ড ।
এতো কিছুর পরও কোন অবস্থাতেই নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে ফুটপাতের দখল কান্ডের নগ্ন ঘটনা থেকে পিছু ফেরানো যায় নাই উচ্ছিষ্ট গ্রহণকারী প্রভাবশালীদের ।
এমন নগ্ন কান্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ৩ নভেম্বর মংগলবার অনুষ্ঠিত ওপেন হাউজ ডে নামক অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম ফুয়াদ জোড়ালো কন্ঠেই বলেছেন, ‘এসপি ওসির নাম ভাংগিয়ে চাঁদা তুলে নেতারা খায় । পুলিশের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে।’
এমন মন্তব্যের পর নারায়ণগঞ্জ শহরের সর্বত্র অনেকেই সমালোচনা করে বলেছেন, তবে কি এসপি হিসেবে তিনি ব্যর্থ ।’
পুলিশ সুপারের এমন বক্তব্যের পর এবার নতুন করে নড়েচড়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসি ।
নগরজুড়ে অবৈধ বিদ্যুতের ব্যবহার দীর্ঘদিনের। ডিপিডিসির অসাধু একটি চক্রের সঙ্গে আতাঁত করে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলো এই বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়ে আসছিল। এ যেন পুরোই একটি চক্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে ফুটপাতের অবৈধ কর্মকাণ্ড ।
পুরো শহরজুড়ে এই বিদ্যুৎ চুরি করে চক্রটি লাভবান হলেও সরকার বঞ্চিত হয়েছে রাজস্ব থেকে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। যার বাৎসরিক হিসেব কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বছরের পর বছর ধরে এই বিদ্যুৎ চুরি হয়ে আসলেও ডিপিডিসির ঘুম ভাঙ্গেনি কর্তা ব্যক্তিদের।
৪ আগস্ট ফতুল্লার পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ৩৪ জনের প্রাণহানী ঘটে। গ্যাস পাইপের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটে। তাছাড়া মসজিদের বিদ্যুতের একটি বৈধ সংযোগ থাকলেও আরেকটি ছিল অবৈধ। বিস্ফোরণের পর টনক নড়ে তিতাস ও বিদ্যুৎ বিভাগের। তিতাস ঘটনার পর থেকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান শুরু করলেও ডিপিডিসি ঘুমেই ছিল। কারণ ঘুম ভাঙ্গলে ডিপিডিসির চক্রটির অবৈধ আয় বন্ধ হয়ে যাবে।
তল্লা মসজিদের ট্রাজেডি ঘটনার কাটায় কাটায় তিন মাসের মাথায় বুধবার (৪ নভেম্বর) ডিপিডিসি নামক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তি ন্মমক কর্ণকূম্ভের টনক নড়েছে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের বিষয়ে। শুরু করেছে ডিপিডিসির বিদুৎ বিচ্ছিন্ন করণের অভিযান।
বুধবার বিকেলে শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক, শায়েস্তা খাঁ সড়ক ও সিরাজদ্দৌল্লা সড়কে অভিযান চালায় ডিপিডিসি। শাহ্জাহান নামে জনৈক এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসব অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছে বলে জানায় ডিপিডিসি।
ডিপিডিসির এনওসিএস নারায়ণগঞ্জ (পূর্ব) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোরশেদ জানান, ফুটপাতে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছিল। আমরা শহরের কালিরবাজার সিরাজদ্দৌলা সড়ক, ফ্রেন্ডস মার্কেট সংলগ্ন সড়ক, পুরাতন কোর্ট ও বঙ্গবন্ধু সড়কে অভিযান চালিয়ে কয়েক শতাধিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। যারা অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছে আমরা তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করছি। আমরা ইতিমধ্যে হকারদের কাছ থেকে শাহজাহানসহ কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছি। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের অভিযান প্রতি সপ্তাহেই চলমান থাকবে।
প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাজেদুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী মো. জোনায়েদ হাসান নাজমুল, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইশতিয়াক আহম্মেদ, মো. কুদরত আলী, মো. উজায়ের আহম্মেদ প্রমুখ। অভিযানকালে কয়েক শতাধিক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
দীর্ঘদিন পর শহরের এমন বিশাল অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কালীন সময়ে শহরের অনেক পথচারী কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, ‘গুটি কয়েক কর্মকর্তা, কয়েকজন শাসক দলের নেতা আর ২৫/৩০ জন লাইনম্যানের কাছে পুরো নগরীর লাখ লাখ মানুষ জিম্মি । এই কয়েকজন অপরাধীর জাছে পুলিশ সুপার নিজেই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন । যা শুনে হতবাক হয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। পুলিশ সুপারও অসহায় তার প্রমাণ দিয়েছেন ৩ নভেম্বর ওপেন হাউজ ডে নামক অনুষ্ঠানের বক্তব্যে ।









Discussion about this post