পবিত্রতার প্রতীক যখন ফুল, তখন ভালোবাসা হোক আর বসন্ত, অবলীলায় সেখানে থাকবে ফুলের ছোঁয়া এটাই তো স্বাভাবিক। ফুল এখন আর সৌখিনতা নয়, নয় শুধুই রমণীর অলঙ্কার। ফুল এখন মাধুর্য, বিশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির প্রকাশ। যার নাম শুনলেই আনন্দে নেচে উঠে মন, নির্মল হয় হৃদয়।
প্রেমিক যুগলদের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপহারও যেন ফুল। নানা রঙের ফুলের আবির আর মোহ মোহ গন্ধ কেড়ে নেয় বিষাদ, ভালোবাসার প্লাবনে ভাসিয়ে দেয় মন। তাই ভালোবাসা দিবসের মূল অনুষঙ্গ ফুল নিয়ে ব্যস্ততার শেষ নেয় ফুল বিক্রেতাদের।
নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য ফুলের দোকান – বাজারে ঘুরে দেখা গেছে পহেলা ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইন ডে আর একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততায় কথা বলার সময়টুকুও নেই তাদের। ক্রেতাদের মন রাঙাতে পাইকার আর ফুল চাষীদেরকে উজ্জল রঙের তাজা ফুলের অর্ডার দিতে ব্যস্ত তারা। শুধু ফুল নয় সঙ্গে ভিন্ন সাইজের ও নানা রঙের ঝুড়ি, সোলা, র্যাপিং কাগজ, সিরামিক বাটি ইত্যাদিও সংগ্রহ করছেন বিক্রেতারা।
দিবসগুলোকে সামনে রেখে এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া থেকে নিতাইওগঞ্জ মোড় পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি পয়েন্টে ফুল বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে প্রেমিক যুগলদের ভিড় এই শহরেই বেশি জমছে।
এখানকার ফুলের দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ভিন্ন রঙের দেশি-বিদেশি গোলাপ ১০-২০ টাকা পিস, অর্কিড ফুল ২০০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০-১৫ টাকা, বেলি ১০-১৫ টাকা, গন্ধরাজ ২০ টাকা, গ্লারিডিলাক্স ১০-৩০ টাকা, গাঁদার মালা ১০-৫০ টাকা এবং জারবেরা ও গাঁজরার মালা ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মেয়েদের মাথায় পরার জন্য ফুলের রিংও বিক্রি হচ্ছে প্রায় প্রতিটি দোকানেই। ৫০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে একেকটি রিং। তৈরি হচ্ছে গলার মালাও। বিক্রেতারা জানান বসন্ত ও ভালোবাসার দিনে তরুণীরা ফুলের তৈরি অলঙ্কারই বেশি পছন্দ করেন। আর তাই সারা বছর তারাও এই দিবসগুলোর অপেক্ষায় থাকেন।
বসন্তে মেয়েরা ফুলের রিং মাথায় পরে ঘুরে বেড়ায়। তাই দোকানগুলোতে কয়েক প্রকার ফুলের রিং তৈরি হচ্ছে। দোকানগুলোতে মালাও তৈরি করতে দেখা গেছে। মূলত অনেকে গয়না হিসেবে ফুলকে বেছে নেয়। কানে দুল, গলায় মালা, মাথায় প্রিন্সেস ব্যান্ড বা হাতে মালা পেঁচিয়ে নেয় তারা। চুলের একপাশে ক্লিপ দিয়ে তাজা ফুলও গুঁজে।
শহরের গ্রিন্ডলেস ব্যাংকের মোড়ের ফুল ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালোবাসার দিনে লাল গোলাপের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এতো পরিমাণ গোলাপ সংগ্রহ করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, বসন্তের প্রথম দিনে গাদা ও হলুদ রঙের ফুলগুলোর বেশি চাহিদা থাকে। মালা, মাথার রিং ও ফুলের গহনাও প্রচুর বিক্রি হয়। আর ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য ফুলের ডালা তৈরিতে ফুলের বেশ চাহিদা বাড়ে।
তারা আরো জানান, এসব বিশেষ দিবসে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের জন্য ফুল চাষীদের কাছে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। সারা বছর ব্যবসা করলেও ফেব্রুয়ারি মাসটাই ফুল বিক্রেতাদের জন্য সিসন টাইম, সারা বছর তারা এই দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকেন।
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে প্রেমিকার জন্য ফুল কিনতে এসেছেন রাহাত। উপহার হিসেবে ফুলকেই বেছে নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাল গোলাপ হচ্ছে ভালোবাসার প্রতীক। তাই মনের মানুষকে এটা দেয়া এক রকম বাধ্যতামূলক বললেই চলে। তাই এক ডজন ফুল নিচ্ছি, সঙ্গে অন্য উপহার তো অবশ্যই দেবো।
পহেলা ফাল্গুন উদযাপন করতে মেয়ে মহুয়াকে নিয়ে আসেন রুপা শাহরিয়ার। মেয়ের এবং নিজের জন্য ফুলের দোকান থেকে মাথার রিং ও গাদা ফুলের মালা কিনছিলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর সঙ্গে আলাপকালে রুপা বলেন, ওর বাবা অফিসের কাজে ব্যস্ত। প্রতিবারই এই দিনে আমাদের নিয়ে বের হন, কিন্তু এবার পারেননি। তাই মেয়েকে নিয়ে আমিই বেরিয়েছি। স্বর্ণের গহনা তো সব সময়ই পড়া হয়, তাই বসন্তের দিনে ফুলের অলঙ্কারই পড়ি।









Discussion about this post