নারায়ণগঞ্জ আদালতে দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান ও তার নিয়ন্ত্রিত বিশাল একটি চক্র হাহারো চেষ্টা করে ইয়াবা মামলায় ওসি কামরুল কারাগারে পঠানোর খবর ধামাচাপা দেয়ার ঘটনা নস্যাৎ হয়ে গেছে । শেষ পর্যন্ত বেড়িয়ে এসেছে তিনি (ওসি কামরুল) ডিভিশন নিয়ে কারাগারে রয়েছেন । তার জন্য রয়েছে থাকা ও খাওয়ার জন্য উন্নত ব্যবস্থা
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার দাপুটে ওসি কামরুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন ৯ দিন যাবৎ ।
গত ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ আদালতের ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামানের পরিকল্পনা মোতাবেক কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত সরকারী কর্মকর্তা বিবেচনা ডিভিশন নিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে ।
সেই থেকেই সাময়িক বরখাস্তকৃত ওসি কামরুল ইসলামকে ডিভিশন দিয়ে নারায়ণগঞ্জ কারাগারের ডিভিশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কারাগারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র ।
সূত্রটি জানান, নারায়ণগঞ্জ কারাগারে সাময়িক বরখাস্তকৃত ওসি কামরুল ইসলামকে রাখা হয়েছে ডিভিশন ওয়ার্ডে । ওসি কামরুল ইসলামের সাথে রয়েছে আরেক দূর্ণীতিবাজ দূদক কর্মকর্তা ও ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার আসামি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৷
নারায়ণগঞ্জ কারাগারে পাশাপাশি কক্ষে ওসি কামরুল ইসলাম আর ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলার আসামি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ।
ডিভিশন প্রাপ্ত আসামী কামরুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রয়েছেন এমন খবরে কারাগারে বন্দি আসামীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা ।
কারাগারের নির্ভরশীল সূত্রটি আরো জানায়, ওসি কামরুল ইসলামকে কেন্দ্র করে অন্যান্য আসামীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলেও এই ওয়ার্ডে কোন বন্দী আসতে পারে না । একই সাথে ওসি কামরুল তার নির্ধারিত কক্ষ থেকে বেরও হন না। বন্দি দূদক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে পত্রিকা পরেই সময় কাটে কামরুল ইসলামের । আর বেশিরভাগ সময়ই থাকেন একেবারে নিশ্চুপ৷
বন্দরে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলায় সদর মডেল থানার সাবেক ওসি মো. কামরুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ওই মামলায় তাকে চার্জশীটভুক্ত করা হলে তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান। আদালত জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
নারায়ণগঞ্জ জেল সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, ‘২২ অক্টোবর সকালে আদালত তাকে একটি মাদক মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেন। তারপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।’
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানার রুপালি আবাসিক এলাকা থেকে সদর মডেল থানার এএসআই সরোয়ার্দি ও মাদকবহনকারী সাবিনা আক্তার রুনুকে ৪৯ হাজার পিস ইয়াবা ও নগদ ৫ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ঘটনায় বন্দর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি পুলিশের এএসআই আলম সরোয়ার্দি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, রুনুকে ইয়াবাসহ আটকের পর ওসি কামরুল ইসলামকে আমি ফোন করি। উনি আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলেন। এরপর ঘাটের কাছেই বাসা হওয়ায় আমি আসামিসহ আমার বাসায় চলে যাই। পরে ওসি আলামত (৪৯ হাজার পিস ইয়াবা) ও ৫ লাখ টাকা রেখে রুনুসহ দুজনকে এসআই মোর্শেদের কাছে দিতে বলে। মোর্শেদ আসামি রুনুকে নিয়ে বাসার নিচে যাওয়ার পর আমাকে ফোন দিয়ে অপর আসামিকে ছেড়ে দিতে বলে। আসামি ছেড়ে দেওয়ার আগে আমি আলামত ও টাকা রেখে দেই। ঐ আলামত থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা এনে ওসির নির্দেশমতো রাস্তা থেকে জনি নামে একজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। রাতে ডিবি অভিযান চালিয়ে আলামত ও টাকা জব্দ করে।
কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান জবানবন্দিতে বলেন, সরোয়ার্দির বাসায় গিয়ে দেখি রুনু ও আ. রহমানকে দেখতে পাই। সে দুজনকে ইয়াবাসহ ধরেছে। মাদকগুলো থানায় না এনে বাসায় আনার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সরোয়ার্দি বলেন, ওসি কামরুল স্যার আমাকে আসামিসহ মাদকগুলো বাসায় রাখতে বলেছে।
পুলিশের দুজন সদস্যের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওসি কামরুলের নাম আসার পরেও তাকে বাদ দিয়ে গত আগস্ট মাসে ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিমউদ্দিন আল আজাদ।
মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের জামিন আবেদন পর্যালোচনাকালে বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আসে। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। হাইকোর্টে দেওয়া ব্যাখ্যায় তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, দুজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ছাড়া পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় ওসিকে আসামি করা হয়নি।
আইওর ঐ ব্যাখ্যা আইনগতভাবে কতটা সঠিক সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী ও এস এম শাহজাহানের মতামত গ্রহণ করে হাইকোর্ট। তারা আদালতে অভিমত দিয়ে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার প্রধান কাজ মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা। তার কোনো ক্ষমতাই নেই মামলার তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেওয়ার। ফলে তদন্ত কর্মকর্তা ওসিকে আসামি না করার ব্যাপারে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সেটা আইনগতভাবে সঠিক নয়।
এই মামলায় ওসি কামরুলের নাম আসায় আদালতের নির্দেশে গত বছরের বছরের ৪ মার্চ সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরে তাকে মামলার চার্জশিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে ২ এপ্রিল আবারও সদর থানায় তাকে পুনর্বহাল করা হয়। তিনি পরে ডিবি ও অন্যত্র বদলী হন।
পরে সিআইডি ওসি কামরুলকে সম্পৃরক চার্জশীটভুক্ত করেন। গত ২২ অক্টোবর তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে হাজির হলে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। আগামী ১ নভেম্বর তার জামির শুনানী হবে।









Discussion about this post