নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর দেওভোগ এলাকায় নাসিক মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়ির পাশে জিউস পুকুরকে দেবোত্তর সম্পত্তি উল্লেখ করে তা জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের অভিযোগ তুলে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নগরীর দেওভোগ এলাকার ঐতিহাসিক জিউস পুকুর পাড়ে এ আয়োজন করা হয়।
দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা হিন্দু সম্প্রদায়’ এর ব্যানারে দুপুর দেড়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী, সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. জুয়েল হোসেন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহসীন মিয়া, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুন দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, বর্তমান সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাঈল রাফেল প্রধান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন।
সমাবেশে হিন্দু নেতাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল। পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও ছিলেন সেখানে। তারা সকলেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমানের অনুসারী। বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশে যোগ দেন তারা। উপজেলাগুলো থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী লোকজন বিভিন্ন ব্যানারে সমাবেশস্থলে আসেন। স্থানীয়ভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন, মন্দির ভাঙচুরের বিষয় উল্লেখ ছিল সেসব ব্যানারে। তবে গণসমাবেশে এক জিউস পুকুর ইস্যু ব্যতীত বক্তারা অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলেননি। এমনকি রূপগঞ্জ উপজেলার সাওঘাটে দুর্গামন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ব্যানার নিয়ে সমাবেশস্থলে সাওঘাট এলাকাবাসী উপস্থিত হলেও এ বিষয়ে কোনো কথাই ওঠেনি সমাবেশস্থল থেকে। কেবল প্রধান বক্তা নির্মল চ্যাটার্জি এ বিষয়ে দু’টো লাইন বলেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে পাশ থেকে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির শিখন সরকার শিপন তাকে অনুরোধ জানান।
প্রধান অতিথি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলেছি, এই সম্পত্তি দেবোত্তর সম্পত্তি। খোকন সাহা এই সমাবেশে ছয়টি দলিল উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন যে, এটা প্রকৃতপক্ষে দেবোত্তর সম্পত্তি। এটা সাড়ে তিনশ’ বছর আগের পুরোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত আছে। মেয়রের উচিত এই সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া। অথচ মেয়র বলছেন যে, এই সম্পত্তি তার পারিবারিক সম্পত্তি। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিউস পুকুরের দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার হবে এবং আপনি তা বাধা দিয়ে রাখতে পারবেন না। সাথে অবৈধ দখলদার যারা আছেন তাদেরও এখান থেকে সরে যেতে হবে। এ জায়গাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে। সার্বজনীন সম্পত্তি রক্ষরা জন্য হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে আসবেন।’
নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, ‘লক্ষ্মীনারায়ণের ইতিহাস, এই দেবোত্তর সম্পত্তির ইতিহাস, এই পুকুরের ইতিহাস সবাই জানে। আর বঙ্গবন্ধুর নৌকায় মার্কায় নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি বলছেন তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটি কোনো রাজনীতি নয়, এটি ভোগনীতি।’
আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল বলেন, ‘কেউ যদি দলে থেকে দলের বদনাম করেন, আপনারা তাকে নৌকায় মার্কায় ভোট দিবেন না। যারা যারা মসজিদে যায়, মন্দিরে যায়, গীর্জায় যায়, প্যাগোডায় যায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মেয়র কথা বললে ভয় পাবেন না। আপনাদের সাথে আমি ভিপি বাদল আছি। শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, খোকন সাহা আছে।’
খোকন সাহা বলেন, ‘১৯৭৯ সালের ২২ আগস্ট জিউস পুকুরের সম্পত্তি বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার টাকায়। সব দলিল আছে। মেয়র যদি এই দেবোত্তর সম্পত্তি ছেড়ে দেয় তাহলে আমি এই জিউস পুকুরে গলায় কলসি বেঁধে ডুবে মরবো।’
উল্লেখ্য, এর পূর্বেই একই ইস্যুতে নগরীর চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ও নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দু’টি পৃথক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সময় বক্তারা একই অভিযোগ তুলেছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে ভিন্ন কথা বলেছেন সিটি মেয়র আইভী। তিনি বলেছেন, ‘এই পুকুরের সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এই পুকুরের মালিকানার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। পুকুর কোনো ইস্যু না। এটা একটা চক্রান্ত। সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র।’
মেয়র আরও বলেন, ‘কে বা কারা সুবিধা নেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উসকে দিতে চাচ্ছে। ৩৬ বছর আগেও আমার বাবার সাথে তারা এই ধরনের খেলায় মেতেছিল। সেই লোকগুলোই আবারও তাদের পুরোনো খেলায় মেতেছে। মিথ্যা অভিযোগ তুলে তো আর সত্যকে আড়াল করা যায় না।’









Discussion about this post