নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নানা অপরাধের পর এবার জেলা ডিবি পুলিশের হাতে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হায়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু । পুরো নারায়ণগহ্জ শহরের সকলেই কাউন্সিলর বাবুকে মাউরা বাবু হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত ।
২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জোড়পূর্বক ডিস ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করে পুরো জেলায় রাম রাজত্ব চালিয়ে আসছিলো আব্দুল করিম বাবু ওরফে মাউরা বাবু । কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকে পুরো শহরবাসী আব্দল করিম বাবুকে মাউরা বাবু হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিতি ছিলো । নির্বাচনের পর নিজের নাম মাউরা বাবু হিসেবে কেউ যাতে না ডাকে এ লক্ষ্যেও নানা হুংকার দেয় এই বাবু । শেষ পর্যন্ত আব্দুল করিম বাবুকে ডিস বাবু হিসেবেই সকলেই ডাকে । ডিস ব্যবসার সাম্রাজ্য দখল করাে ছাড়াও আবদুল করিম বাবু ওরেফ মাউরা বাবু ওরফে ডিস বাবু এমন নানা ধরণের অপরাধ করায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা রয়েছে । এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে অস্ত্র প্রদর্শন ছিলো তার নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় ।
বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল বিকেল ৩টায় শহরের পাইকপাড়া এলাকা থেকে ডিবির তাকে গ্রেফতার করা হয়। বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ উত্তর পাড়ার মোঃ কাউসারের দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ডিবির পরিদর্শক এনামুল হক জানান, মোঃ কাউসার নামের একজন ডিশ ব্যবসায়ী ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজীর মামলা করে বাবুর বিরুদ্ধে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বাবুকে নিয়ে আরো আসামি ধরতে অভিযান চলছে।
মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামী আব্দুল করিম বাবু (ডিস বাবু) (৫০), দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জ শহরে কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করে আসছে। বিবাদী জোরপূর্বক বন্দরে তাহার লোকজন দিয়া কেবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা পরিচালনার চেষ্টা করছে এবং বিভিন্ন জায়গায় কেবল নেটওয়ার্কের তার কেটে ফেলে তার নিজেস্ব নেটওয়ার্ক লাইন সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া বন্দর কেবল নেটওয়ার্কের সত্ত্বাধিকারী (ক) পারভেজ আলম, (খ) মোঃ সাইফুল ইসলাম (শ্যামল) এর সাথে উক্ত বিবাদীর দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছে। নেটওয়ার্কের ব্যবসার জন্য এলাকার দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দর কেবল নেটওয়ার্কের মালিকের নিকট ১০,০০,০০০/- টাকা চাঁদা দাবি করে। এরই জেরে গত ১৭/০৪/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ বিকেল সাড়ে ৪টায় বন্দর থানাধীন ফরাজিকান্দা বাজারের রিতুর বাড়ির সামনের নেটওয়ার্কের মেরামত কাজ করা কালে আসামী বাবুর প্ররোচনায়, সহযোগিতায় ও নির্দেশে বিবাদী ২। মোঃ সজিব (৩৫), পিতা-আহসান উল্লাহ, ৩। মোঃ রিতু (৩২), পিতা-আমিন উদ্দিন, ও ৪। মোঃ রনি (৩৪), পিতা-সামছুল আলম, ৫। মোঃ জুম্মাল (৩৪), পিতা-নাজিম উদ্দিন, ৬। মোঃ নিজুম, পিতা-খোকন, ৭। মোঃ রানা (৩৫), পিতা-আহসান উল্লাহ, সাং–ফরাজীকান্দা, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ সহ আরো অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জন বিবাদী লাঠি-সোঠা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়া বেআইনী জনতাবন্ধে পথরোধ করিয়া এলোপাথারী ভাবে মারপিট করে এবং নগদ ১০,৫০০/- টাকা, একটি ফাইভার মেশিন যার মূল্য-১,৫০,০০০/- টাকা এবং বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও একটি মই মূলা-৪,০০০/-টাকা নিয়া যায়।
এর আগে গত ২৩ মার্চ ভুক্তভোগী মো. হাসান ব্যবসায়ী বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। হাসান জানান, বন্দর সোনাকান্দা হতে আলীনগর হয়ে প্রায় কয়েক লাখ টাকার ডিশ লাইনের ক্যাবল সহ সরঞ্জামাদি কেটে নিয়ে গেছে ফরাজীকান্দা এলাকার সন্ত্রাসী সজিব গং। ডিশের ক্যাবল কাটার কারণে প্রায় ২০০০ হাজার গ্রাহক ডিশ লাইনের সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ ঘটনায় বাবু ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে।
সম্প্রতি বিতর্কিত এই কাউন্সিলিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সালাউদ্দিন দেওয়ান নামে নীরিহ একজন সাবেক ফুটবলারকে পুলিশের সাথে যোগসাজেশ করে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর। এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশের পরপরনই পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ অভিযুক্ত এসআই নাজমুল ইসলামকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেন।
১৯ জানুয়ারি পাইকপাড়া এলাকার একটি উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করতে যান মেয়র আইভী। উদ্বোধন শেষে তিনি চলে আসলে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে গালাগাল করেন আব্দুল করিম বাবু। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদির। এ নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়। মূলত এ ঘটনার রেশ ধরেই সালাউদ্দিন দেওয়ানকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।
এর আগে নগরীতে ফিল্মি স্টাইলে প্রকাশ্যে স্বদলবলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছিলেন আব্দুল করিম বাবু। এসময় তিনি অন্তত ৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণও করেন। ঘটনাটি গেল বছরের ১৩ আগস্ট দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের ১৩৩ নং নলুয়া পাড়া এলাকায়।
তবে, কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওই ঘটনার পর তা-ব সৃষ্টি করার কথা অস্বীকার করলেও ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করেছিলেন। তার দাবি ছিলো, উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে সে শূন্যে গুলি ছুড়েছেন।
ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর ছোট ভাই নিতাইগঞ্জের ভূষামাল বিক্রেতা ইকবালকে ১৩৩ নং নলুয়া পাড়ার ভুল মিয়ার ছেলে সিমনসহ কয়েকজন মারধর করে এদিন দুপুরের দিকে। এঘটনার জেরে বাবু তাঁর বাহিনী নিয়ে প্রকাশ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সিমনকে তুলে আনতে যায়। এসময় তাঁর সাথে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের একটি দল ছিলো। এ দলের অনেকের কাছেই আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়াও এসব ঘটনার আগে গেল বছরের ৯ জানুয়ারি ‘জনতার মুখোমুখি’ হয়ে মেয়র আইভী তার বক্তব্যে আব্দুল করীম বাবুর প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সাথে ১৭ নং ওয়ার্ডে বাবুর পরিবর্তে প্যানেল মেয়র-১ বিভা হাসান সকল কাজ করবেন বলেও ঘোষণা দেন। আর এই বক্তব্যের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাবু। তিনি ১৫ জানুয়ারি নগর ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং আইভীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে লোক জড়ো করে বিক্ষোভ করেন।
এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাবাজার এলাকার ডিস ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেনর সব লাইন কেটে নেয় ডিস বাবুর সন্ত্রাসীরা। পরে মোক্তারকে বাদ দিয়ে অন্য একজনের কাছে ১০ লাখ টাকায় লাইন দিয়ে দেয় । বিগত প্রায় ২৫ বছর ধরে মোক্তার হোসেন ডিস ব্যবসা করে আসছিল। পরে বিষয়টির সমাধান পেতে এসপির কাছে আবেদন করে মোক্তার। কিন্তু এতেও তার ডিস ব্যবসাটি সে ফেরত পায়নি।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা নং-২৯, তারিখ-১৭/০৫/২০১৭, ধারা-১৪৩,৪৪৮,৩২৩,৫০৬ পেনাল কোড সে উক্ত মামলার সিএস ভুক্ত আসামী, নারায়নগঞ্জ সদর থানার মামলা নং-২২, তারিখ-১৩/০৬/২০১০, ধারা-৪৪৮,৩২৩,৫০৬ পেনাল কোডের সিএস ভুক্ত আসামী,নারায়ণগঞ্জ থানার মামলা নং-১০, তারিখ-১২/০৭/২০১৩, ধারা-৩৯৪ পেনাল কোড। উক্ত মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী দেলোয়ার হোসেন উরফে ছোট দেলু ও আসামী মোঃ ঝন্টুদ্বয় কাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে আব্দুল করিম বাবু(ডিস বাবু) উক্ত মামলার ঘটনার সাথে জড়িত আছে মর্মে জবানবন্দি প্রদান করেন।
শহরের নিতাইগঞ্জ, পাইকপাড়া, দেওভোগ, বাবুরাইলসহ আশেপাশের এলাকার অনেক ভূক্তভোগি অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করে জানান, মাউরা বাবু নারী কেলেংকারী, ব্লাক মেইলিং, লুঠপাট, ডাকাতি, জমি দখল, নিজ পরিবারের সাথে বিশাল দ্বন্ধ, বিএনপির সরকারের শাসনামলে শহরের মিশনপাড়ায় ছিলো মাউরা বাবুর ঘাটি । বিএনপির রাজনীতিরে সাথে জড়িত থাকলেও আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ওসমান পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে সকল ধরণের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে । মাউরা বাবু আর যাতে কারো সাথে কোন ধরণের অত্যাচার করতে না পারে সেলক্ষ্যে অনেকেই প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবী করেছে ।
(এমন অনেকের অভিযোগের রেকর্ড সংরক্ষনে রযেছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে)









Discussion about this post