নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকায় রোববার রাতে তরুণ-তরুণীকে আটকের প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে কিশোর সানজিদ দেওয়ান হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে দুই দিনেও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
সোমবার রাতে নিহত সানজিদ দেওয়ানের বাবা রিপন দেওয়ান বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। এদিকে একই ঘটনায় নিহত সানজিদ দেওয়ানের বন্ধু সিজান বিকাশের অবস্থাও গুরুতর। তার পেটের ক্ষতস্থানে ২২টি সেলাই লেগেছে।
এদিকে পশ্চিম তল্লা ছোট এলাকার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, একমাত্র ছেলে সানজিদ দেওয়ানকে হারিয়ে মা পুষ্পা বেগম শোকে শয্যাশায়ী। বারবার ছেলের কথা বলে বিলাপ করেন আর মূর্ছা যান পুষ্পা বেগম। বাবা রিপন দেওয়ান পেশায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক। ছেলের শোকে অনেকটা বাক্রুদ্ধ হয়ে গেছেন তিনি।
পুষ্পা বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বুক খালি হয়ে গেছে। মানিক আমারে আর মা বলে ডাকবে না।’
রিপন দেওয়ান বলেন, ‘আগামী জানুয়ারিতে সানজিদের ১৮ বছর পূর্ণ হতো। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ওর মা কীভাবে বাঁচবে ? ছেলের শোকে খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে । আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন শেষ করে দিয়েছে। আমার ছেলে হত্যার খুনিদের ফাঁসি চাই।’
নিহত সানজিদ দেওয়ানের বন্ধু ছুরিকাঘাতে আহত সিজান বিকাশ জানায়, তারা হাজীগঞ্জে এসিআই ওষুধ কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করে। রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে এসে সানজিদসহ তারা চার বন্ধু ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য মাঠে কোট কাটে এবং রাত ৯টার দিকে বাতি লাগানোর জন্য পাশের কিল্লারপুল এলাকার গলি থেকে বাঁশ আনতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায়, মানুষের জটলা। তারা উঁকি দিয়ে দেখে, সেখানে তরুণ-তরুণীকে ঘিরে রাখা হয়েছে। ওখানে কী হয়েছে জানতে চাইলে দুই ভাই আদম ও কদম তাদের ধমক দেন। এ নিয়ে সানজিদ প্রতিবাদ করলে আদম তার শার্টের কলার চেপে ধরেন। সানজিদও আদমের শার্টের কলার চেপে ধরেন।
একপর্যায়ে আদম ও কদম ধারালো ছোরা দিয়ে সানজিদকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। সানজিদকে বাঁচাতে সিজান এগিয়ে গেলে তাকেও পেটে ছুরিকাঘাত করেন তাঁরা। পরে আশপাশের লোকজন তাদের হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সানজিদকে মৃত ঘোষণা করেন।
সিজান আরও জানান, আদম-কদম যমজ ভাই। মূলত ওই তরুণ-তরুণীকে সন্দেহ করে তাঁরা আটক করেছিলেন তাঁদের কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায়ের জন্য।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ্ জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আদম ও কদম দুই ভাই। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক হত্যা মামলা আছে। তাঁদের এক বড় ভাই হত্যা মামলায় জেলে আছেন। তাঁরা এলাকায় খুনখারাবি করে বেড়ান। ওই ঘটনার দিন তাঁরা এক তরুণ ও এক তরুণীকে আটক করেন। সানজিদসহ চার বন্ধু বিষয়টি দেখে কৌতূহলী হয়ে সেখানে কী হয়েছে জানতে চাইলে তাদের সঙ্গে আদম ও কদমের বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে তাঁরা সানজিদ ও সিজানকে ছুরিকাঘাত করেন।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদম-কদমসহ চারজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ।









Discussion about this post