নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
আইন পেশায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌসূলী ওয়াজেদ আলী খোকন সফলতার সাথে কাজ করলেও পারিবারিক কারণে নানাভাবে বিব্রত হয়ে পরেছেন এই প্রবীন আইনজীবী । মিষ্টভাষী, সজ্জন, সদালাপী এডভোকেট ওয়াজদ আলী খোকন কারো সাথে নিজ স্বার্থ হাসিল করতে কোন বিতর্ক করার খবর পাওয়া না গেলেও তার প্রিয় সন্তান মায়েশা ওয়াজেদ প্রাপ্তি ও একমাত্র পুত্র আকির সাদত কে নিয়ে আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞজ আদালত চত্তরসহ সর্বত্র ।
মায়েশা ওয়াজেদ প্রাপ্তিকে ২০১৭ সালের ২৩ আগষ্ট বিষ কাওয়ানোকে কেন্দ্র করে তোলপারের সৃষ্টি হয় । এরপর ২ এপ্রিল মধ্যরাতে ওয়াজেদ আলী খোকনের বাড়ীতে পুত্র আকির সাদত (২০) ও তার বন্ধু ইয়ামিন (২০) ও তাদের বান্ধবী সায়মাকে (২০) নিয়ে মদ্যপানের ঘটনায় আবারো ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। এমন আলাচনা এখন সকলের মুখে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে ।
এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় রোববার ১২ মে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন রশীদ মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান ও সকলের করণীয় প্রসঙ্গে বক্তব্যের একপর্যায়ে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকনের বাড়ির ঘটনাটির কথা উদাহরণ হিসেবে বলেন। এমন ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আরেকবার শহরের সর্বত্র আলোচন সমালোচনার ঝড় উঠেছে । 
পুলিশ সুপার আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বলেন, পিপি সাহেবের বাড়িতে কিন্তু মাদক পাওয়া গেছে। তিনি যদি মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশন নিতেন তাহলে মাদকের লোক এরেস্ট না হতো। আমি কথার কথা বলছি। আমাদের উচিৎ হলো বা যদি করতে পারতাম কোন মাদক ব্যবসায়ী কোর্ট থেকে জামিন পাবেননা, যার লোকই হোক। ওমুক ভাইয়ের লোক এমন শেল্টার যদি না দেয়া হতো তবে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকতো।
এরপর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন সেদিনের ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমার বাড়িতে যেদিন ওই ঘটনাটি ঘটলো। আমার ছেলের বন্ধু তাঁর জন্মদিনে ঢাকার গুলশান থেকে এসেছিলো। ওই বন্ধু কোকের সাথে মাদক কিংবা হুয়িস্কি মিশিয়ে আমার ছেলেকে পান করিয়েছিলো। তখন আমার ছেলে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো। রাতে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকলে তাকে ওই ফ্ল্যাটে খুঁজে পাই। ওখানে সেখানে রেখে আমি পুলিশকে ফোন দেই।
ঘটনার মূল সূত্র পিপি খুঁজে বের করেছেন এমন দাবি করে তিনি বলেন, যে ছেলেটি ও মেয়েটি আসছে তারা বন্ধু। তাদের বিয়েও ঠিক হয়েছে। বিল্লাল হাজী নামে এক ব্যক্তির নামে ৬ কোটি টাকার চেকের মামলার ব্যাপারে আমি কথা রাখিনি। এরপর থেকে ষড়যন্ত্র ছিলো তাদের পিপির মানসম্মান নষ্ট করতে হবে। এরপর বাসেদ চেয়ারম্যানের ছেলে তাদেরই সহপাঠী গিয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আমাকে বিব্রত রাখা। মূল উদ্দেশ্য ছিলো যাতে সেই চেকের টাকাটা তাদের দিতে না হয়। আমার সন্তানও যদি মাদকের সাথে জড়িত হয় তবে তাকেও যাতে ছাড় না দেয়া হয়।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, নারায়ণগঞ্জ -৬২ এর এসপিপি এস এম হাবিব ইবনে জাহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা, মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যুথিকা সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম, র্যাব- ১১’র সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান শামীম, পিপি এড. ওয়াজেদ আলী খোকন, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক, বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২ ম এপ্রিল রাতে চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় সরকারি কৌশুলী (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকনের বাড়ির চতুর্থতলার ফ্ল্যাট থেকে তাঁর ছেলে আকিব সাদতকে (২৪) রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খানপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এসময় তার বন্ধু খানপুর এলাকার জাহাঙ্গীর কবির পোকনের ছেলে ইয়ামিন কবির (২৫) এবং তাদের বান্ধবী বালুমাঠ এলাকার বিশিষ্ট সূতা ব্যবসায়ী বাদশার ছোট ভাই আবদুর রবের মেয়ে সায়মা (২০) কে গ্রেপ্তার করে সদর থানা পুলিশ।
পুলিশের দায়ের করা মামলায় উপ-পরিদর্শক এসআই সাব্বির উল্লেখ করেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় ওয়াজেদ আলী সাহেবের বাড়ির চতুর্থ তলার পশ্চিম পার্শের ফ্লাটে কতিপয় ব্যক্তি মাদক সেবন করিতেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মাদক সেবন করেছে বলে মতামত প্রদান করেন। আসামীদের আরো জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, আসামী আকিব সাদত, সায়মা, ইয়ামিন কবির একসঙ্গে মাদক সেবন করেছে। তারা প্রায় সময়তেই আকিবের বাসায় মাদক সেবন করে বলেও জানায় তারা। ঘটনাস্থলে সাক্ষীদের মোকাবেলায় বিদেশী মদের বোতল জব্দ করি।
এমন ঘটনাকে কেন্দ্র কর সোমবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্তরে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে জোড়ালো ভাবেই ।









Discussion about this post