“নারায়ণগঞ্জ কি মগের মুল্লুক ? এমনটা ই প্রমাণ করছেন শাহজাহান খান ! মুন্সীগঞ্জ জেলার অসংখ্য মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে ওষুধ ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করে মামলা প্রত্যাহারের দারী তুলে আন্দোলন করছেন তিনি ।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী শাহজাহান খান নারায়ণগঞ্জ শহরে নানা অপকর্ম করে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ । অসংখ্য অপকর্মের হোতা শাহজাহান খান নারায়ণগঞ্জ জেলায় যেমন ওষুধ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে বিশাল চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ঠিক তেমনি পৈতৃক নিবাস মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বালু মহল দখলসহ নানা অপকর্মের হোতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বুধবার নিজ এলাকা আধিপত্য বিস্তার করতে গজারিয়ার বৈদ্যারগাঁও গ্রামের রুবেল (৩২) ও কবির (২২) এর হাতের কব্জি কেটে মিছিল করে শাহজাহান খান ও তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীরা । এমন ঘটনায় ছাড়াও অসংখ্য মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী হলেও নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রশাসনকে আন্দোলনের নামে হুমকি দেন সন্ত্রাসী শাহজাহান খানের সহযোগীরা !” -এমন মন্তব্য মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার ।
জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় দুই যুবকের হাতের কব্জি কেটে উল্লাস করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামী হলেন বাংলাদেশ কেমিষ্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতির নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খান ।
এমন মামলার ঘটনাকে মিথ্যা উল্লেখ করে শাহজাহান খানকে ফাঁসানোর প্রতিবাদ তুলে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে তার নিয়ন্ত্রিত কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী।
১৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ কেমিষ্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা ও গজারিয়া কল্যাণ সমিতির যৌথ আয়োজনে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ কেমিষ্টস এন্ড ড্রাগিষ্টস সমিতি নারায়ণগঞ্জ (বিসিডিএস) এর সহ সভাপতি মো. নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিসিডিএসের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নেফাউল ইসলাম জুয়েল কার্যকরী সদস্য মো. আলী আরশাদ, জলিল উদ্দিন, আব্দুর রব ভূইয়া, নূরুল হক প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, টেংগাচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: শাহজাহান খানকে আসন্ন ইউপি নির্বাচন নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে শাহজাহান খানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর বৈদ্দারগাঁও গ্রামে দুই পক্ষ সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় তার কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। ওইদিন তিনি নারায়ণগঞ্জে ছিলেন। মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে মো. শাহজাহান খানকে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে মানববন্ধনে দাবী করে শাহজাহান খানের অনুসারীরা। তার কাছে জিম্মি থাকা ওষুধ ব্যবসায়ীদের অনেকেই এই মানব বন্ধনে উপস্থিত হতে বাধ্য হয়েছেন বলেও দাবী করেছেন ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন যদি এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হয় তাহলে সামনের দিনগুলোতে কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবে ড্রাগিষ্টস নেতারা। বক্তারা আরো বলেন আমরা এই মামলা প্রত্যাহার চাই এবং সঠিক তদন্ত চাই। আসল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানায় মানববন্ধনকারীরা।
এ বিষয়ে খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অর্থনৈতিক কারণে দীর্ঘদিন ধরে মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান খান ও আজিম উদ্দিন ফরাজী গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি একটি প্রজেক্টে বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে শাজাহান খানের লোকজন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে প্রতিপক্ষ আজিম উদ্দিন গ্রুপের কাছে। দুই লাখ টাকা দেয়ার পর তাদের দাবিকৃত বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায় আজিম উদ্দিন ফরাজীর লোকজন।
এ ঘটনার সূত্র ধরে বুধবার বেলা ১১টার দিকে বৈদ্যারগাঁও বাজার এলাকায় শাহজাহান খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করা লোকজন আজিম উদ্দিন ফরাজীর সমর্থক রুবেল ও কবিরের ওপর হামলা চালায়।
তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রুবেল ও কবিরকে গুরুতর আহত করে। সেই সঙ্গে রুবেলের এক হাতের কব্জি কাটা ও আরেক হাতের দুই আঙুল কেটে আনন্দ মিছিল করে তারা শাহজাহান খান ও তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীরা।
পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গজারিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মামুন আল রশিদ বলেন, মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর। চাদাবাজির দাবী ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে যুবকের হাতের কব্জি কেটে নেয়ার মামলায় প্রধান আসামী শাহজাহান খান। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক। তবে তাদের আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ ।
এদিকে মানববন্ধন ছাড়াও এমন চাঞ্চল্যকর মামলায় জামিন নিতে নারায়ণগঞ্জ শহরে আইনজীবীদের দপ্তরে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন শাহজাহান খান।









Discussion about this post