তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১০৫ মাস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, আজকে আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের রায় ঘোষিত হলো, ২০ জনকে ফাঁসি ও ৫ জনকে জাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। দেখলাম ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামীর পিতা আহাজারি করে বলছেন, “যারা আমার ছেলেকে অপরাধী বানালো, খুনী বানালো তাদেরতো বিচার হলো না।” আমরা অপরাধী তৈরীর গডফাদারদের বিচার চাই। ত্বকী হত্যার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, শামীম ওসমানের ভাতিজা, নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। আমরা আজমেরী ওসমানের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে এ হত্যার নির্দেশ দাতা শামীম ওসমানকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রঙ্গণে এক আলোকপ্রজ্জ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এই অনুষ্ঠানে প্রতিবারেই মতোই বক্তাগণা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য করেছেন ।
রফিউর রাব্বি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই আবরার হত্যাব বিচার হয়েছে, আর প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেনা বলেই ১০৫ মাস ধরে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। হত্যা-গুমের সাথে জড়িতদের বিভিন্ন সময় সরকার ও সরকারীদল উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করেছে। দলে থাকলে নেতা-কর্মীদের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র হয়, আর দল থেকে বাদ পরলেই আমরা জানতে পারি তারা অত্যন্ত নিকৃষ্ট, ঘৃণ্য। গাজীপুরের মেয়রকে দল থেকে বহিস্কারের দু’দিন পর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আমাদের জানালেন, জাহাঙ্গীর আলম ভূমিদস্য, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী ইত্যাদি। এতদিন আমরা তা জানলেও সরকার তার পক্ষে ছিলেন। গতকাল তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেয়ার পর তারা মন্ত্রী মুরাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন। অথচ যে ফোনালাপ চিত্র নায়িকার সাথে সেইটি দুই বছর আগের। ফোনালাপ রেকর্ড কারা করেন, সরকারের বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা। দুই বছর আগেই যে লোকটি দুশ্চরিত্র, লম্পট বলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা চিহ্নিত হলো তাকে দলে ও মন্ত্রী সভায় বহাল তবিয়তে রাখা হলো। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো আপনার দলে এমন অনেক মুরাদ-জাহাঙ্গীর আছে তাকিয়ে দেখেন। শামীম ওসমানের দিকে তাকান।
তিনি বলেন, আইনকে কেবলি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে গিয়ে সরকার গোটা বিচার-ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে এ সরকার চলতে চলতে বিচার-ব্যবস্থার সাথে সাথে নির্বাচনী-ব্যবস্থা, মানুষের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র সবকিছুকে ধ্বংস করে চলেছে। তিনি সাগর-রুনী, তনু সহ নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠু সহ সকর হত্যার বিচার চান। সাড়ে চার বছর আগে অপহৃত দেড় বছরের শিশু সাদমান সাকির উদ্ধার দাবি করেন।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ বলেন, ত্বকী হত্যার এক বছরের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে ওসমান পরিবারের লোকজন ত্বকীকে হত্যা করেছে। অথচ সে ঘাতক খুনীরা সরকারের সহায়তায় আজো ঘুরে বেড়ায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়ে কখনো ঘাতক, খুনীদের পক্ষ নিতে পারেন না। আপনাকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে।
মাহাবুবুর রহমান মাসুম প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করেন এবং শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি দম্ভ করেন, আপনার বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছেন একজন নারী জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে, কিন্তু কাজ হয়নি। কথায় কথায় লক্ষ জমায়েতের কথা বলেন, কিন্তু আমরা আপনার ক্ষমতা জানি। হুঙ্কার দিয়ে লাভ নেই। নারায়ণগঞ্জের মানুষের অনেক ক্ষতি করেছেন। আর না, এখন থামেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, খেলাঘর নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব সাংবাদিক হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দীপু, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপের জেলা যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম টিটু ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জেলা সদস্য সচিব প্রদীপ সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।









Discussion about this post