আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী সভা–সমাবেশ আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তা মানা হচ্ছে না।
আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই নিয়মিত সভা–সমাবেশ, মিছিল, মোটর সাইকেল মহড়াসহ নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহেদ আলী ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মিজানুর রহমান । এমন চিত্র নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ।
জাহেদ আলী কায়েতপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে আছেন তিনি। ইউনিয়নটিতে চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নৌকা প্রতীকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে আছেন রংধনু গ্রুপের পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি কায়েতপাড়া ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মাঠে আছেন মিজানুর।
গত কয়েক দিনে ইউনিয়নটিতে সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণারও অন্তত ছয় মাস আগ থেকে এই দুই প্রার্থী বিভিন্ন সভা–সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশ ও মিছিল করছেন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। এসব প্রচারণার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিচ্ছেন কর্মী–সমর্থকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল রোববার জাহেদ আলীর পক্ষে শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তার আগে শনিবার পূর্বগ্রাম, শুক্রবার বরালু, বৃহস্পতিবার চনপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জাহেদ আলীর পক্ষে সমাবেশ ও মিছিল করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কায়েতপাড়ার দক্ষিণপাড়া এলাকায় একটি মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে হিন্দুধর্মালম্বীদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চান জাহেদ আলী।
অন্যদিকে গতকাল ও শনিবার ইছাখালি এবং নগরপাড়ায় মোটর সাইকেল শোভাযাত্রা করেন মিজানুরের সমর্থকেরা। শুক্রবার নাওড়া ও বৃহস্পতিবার বরুনা এলাকায় মিজানুরের পক্ষে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন বাছাইয়ের দিনে নিজেদের পক্ষে মিছিল ও মোটরসাইকেলবহর নিয়ে উপজেলা চত্বরে হাজির হন এই দুই প্রার্থী। দুই প্রার্থীর মুখোমুখি অবস্থান ও স্লোগানে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা চত্বরে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ।
নিয়ম উপেক্ষা করে মিছিল ও নেতা–কর্মীদের নিয়ে উপজেলা চত্বরে অবস্থান ও স্লোগান দেওয়ায় মনোনয়ন বাছাইয়ের আগে প্রার্থীদের মৌখিকভাবে সতর্কও করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
তবে জাহেদ আলী মুঠোফোনে গণমাধ্যমে বলেন, যেসব মিছিল ও সমাবেশের ছবি দেখা যাচ্ছে, সেগুলো পুরোনো। প্রতিপক্ষের লোকজন শত শত মোটর সাইকেল নিয়ে প্রতিদিন এলাকায় এলাকায় মহড়া দিয়ে লোকজনকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। শনিবার রাত ১০টা পর্যন্ত নগরপাড়ায় মোটর সাইকেল মহড়া হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগেই মিজানুরের পক্ষে চার রঙের প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। তাঁর কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে টাকা বিলি করছেন। এসব বিষয় তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মোটর সাইকেল মহড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে মিজানুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদের তুলনায় কায়েতপাড়ার দুজন প্রার্থীকে অনেক বেশি বেপরোয়া বলে মন্তব্য করেন রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ রূপগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে তাঁদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। পুনরায় তাঁদের মুঠোফোনে সতর্ক করবেন। তারপরও বিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।









Discussion about this post