রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভার সংলগ্ন গোলাকাান্দাইল চৌরাস্তা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্পের ব্লক-১ এর সেচ খালে বিনা অনুমতিতে বাঁধ দিয়ে ও পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা, মাছের আড়ৎ এবং মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। তাতে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠছে কৃষকরা। অবিলম্বে এ অবৈধ বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকার সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট অবাধে এ কার্যক্রম করছে। প্রভাবশালী এ ভুমিদস্যুরা দিন-দুপুরে ফসলি জমি থেকে ট্রাকে করে মাটি এনে ভরাট করে রাতারাতি বিশাল স্থাপনা গড়ে তুলছে। কেউ কেউ স্থাপনা নির্মাণ করে অন্যের কাছে হস্তান্তর করছে। কেউবা ভাড়া দিচ্ছে। এমনকি বিক্রি করার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। বাঁধ নির্মাণের কারনে পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় এখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। এছাড়াও সেচ প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক প্রভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে ভুমিদস্যুরা বেপরোয়াভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করছে। কোন কোন স্থানে অবৈধভাবে সরকারি জমি দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ইটের ভাটা, কল-কারখানা, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,মাছের খামার, মাছের আড়ৎ, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের খালে বাঁধ দেওয়ার কারনে সেচ প্রকল্পটি আজ হুমকির মুখে পড়ছে বলেও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী সেচ প্রকল্প ব্লক-১ এর অপ্রয়োজনীয় পানি শীতলক্ষ্যা নদী ও ব্রক্ষপুত্র নদে নিষ্কাশন হয়। আমলাবো, কালি, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল হয়ে পানি নিষ্কাশনের খাল দিয়ে ব্রক্ষপুত্র নদে গিয়ে পানি নিষ্কাশিত হয়। খালের স্থানে স্থানে বাঁধ নির্মাণ করায় বর্ষায় ব্রক্ষপুত্র নদের পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে । তাতে রূপগঞ্জের আমলাবো, কালী, বাড়ৈইপার, ডুলুরদিয়া, পাঁচাইখা, হাটাবো, নলপাথর, শিংলাবোসহ আশপাশের ১০/১২ টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে। মারাত্মক ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হচ্ছেন কৃষকরা। আশপাশের শিল্প কারখানার নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত রঙ্গিন পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় হাঁটাচলা করে স্থানীয়দের মধ্যে চর্মরোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
হাটাবো গ্রামের কৃষক মাসুম মিয়া বলেন, গত মৌসুমে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উৎপাদিত শাক-সবজি পঁচে গেছে। তাতে তার ৭০/৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। টেকপাড়া গ্রামের আজাহারউদ্দিন বলেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারনে অধিকাংশ জমিতে চাষাবাদ করা যায় না। বর্ষায় অতি বৃষ্টির পানি জমে গিয়ে বাড়ির চারদিকে জলাবদ্ধতার পানি থৈ থৈ করে। চলাচলে মারাত্মক অসুবিধা হয়। বাড়ৈপার গ্রামের হাতেম আলী বলেন, সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারনে পানি পঁচা, কুচকুচে কালো ও দূর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় নিজ ঘরেই বসবাস করা কষ্টসাধ্য। এখনই জলাবদ্ধতা নিরসনে আগাম পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। কালী গ্রামের মিজানুর বলেন, সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। তখন আমাদের চলাচলে চরম দূর্ভোগে পড়তে হয়।
দখলদার মাছের আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি শ্রী নিবাস দাস বলেন, আমরা ২২ জন মিলে জমির মালিকের কাছ থেকে এ জমি ভাড়া নিয়ে মাছের আড়ৎ নির্মাণ করেছি। জমির বৈধতা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফারুক আল মামুন বলেন, খালের স্থানে স্থানে বাঁধ নির্মাণ করায় ও কচুরি পানায় ভরে পানি নিষ্কাশনের খাল অকেজো হয়ে পড়েছে। তাতে প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের অসুবিধা হচ্ছে। বেপরোয়া দখল বন্ধ না হলে আগামী কয়েক বছর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, অৗবধ জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত আছে। যেকোন সময় যেকোন স্থানে উদ্ধার অভিযান চলবে। পানি নিস্কাশনের খাল দখলদারদের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।









Discussion about this post