ফতুল্লার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ৬৯ নং পশ্চিম মাসদাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অরাজকতা ও কেন্দ্র দখলের চেষ্টার সময়ে ছাত্রলীগ নেতাদের বেধড়ক পিটুনীর কিছুক্ষণ পরেই সেখানে হাজির হয়ে এর কৈফিয়ত চানতে চান এমপি শামীম ওসমান।
এ সময় মামীম ওসমান জানতে চান, “আপনি, আমাদের ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারীকে মারছেন ! এখন নারায়ণগঞ্জ আপনি সামাল দেন । দেখি আপনি পারেন কিনা আর আমি পারি কিনা । আপনি ছাত্রলীগের জয়েন সেকেটারীকে চোরের মতো মারবেন ? আপনি বুঝেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জেনারেল মানে কী !”
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ ও তার অনুসারিরা কেঁদে কেঁদে শামীম ওসমানের কাছে বিচার দিয়ে বলছিলেন, ‘আমাদের কুকুরের মত পিটিয়েছে’।
সেখানে থাকা র্যাব কর্মকর্তারা শামীম ওসমানকে জানান, কাউকে পেটানো হয়নি। বরং সেখান থেকে বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র সহ কয়েকজনকে আটকে র্যাবের কাছে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ১১ নভেম্বর ভোট চালাকালীন সময় বিকেল ৩ টায় ওই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ শতাধিক লোকজন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে। ওই সময়ে তারা শাহজাহান মাতবরের পক্ষে স্লোগান দেন। এখানকার বর্তমান মেম্বার জাকারিয়া জাকির অভিযোগ তুলেন রিয়াদ লোকজন নিয়ে শাহজাহান মাতবরের পক্ষে সীল মারছে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোট কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করেও সীল মারার বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে পারেন। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ধাওয়া করলে রিয়াদ একটি কক্ষে অবস্থান করেন।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের লোকজন প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে পুলিশ গিয়ে বাধা দেয় ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। রিয়াদ আশ্রয় নেন স্কুলের রাথরুমে। পরে এক ঘণ্টা পর রিয়াদকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
বেলা নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ভোটের সময়ে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম গাড়িযোগ বেলা সোয়া ১টায় ৬৯ নং পশ্চিম মাসদাইর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হাজির হন। ওই সময়ে তিনি কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে প্রার্থী জাকারিয়া জাকিরকে শাসিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের গ্যাঞ্জাম করতে বলেছে কে, কোন ঝামেলা করবে না। ওই মিয়া তোমার এত সাহস কেন।’
ওই সময়ে নিজামের পাশেই ছিলেন শাহজাহান মাতবার যার পক্ষে দুপুরে কেন্দ্রে গিয়ে অবরুদ্ধের শিকার হন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ। এ কেন্দ্রে পরে পুলিশ ও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।
এদিকে দুপুর আড়াইটায় আবারো রিয়াদ দলবল নিয়ে সেখানে গেলে র্যাব সদস্যরা লাঠিপেটা করে। ওই সময়ে আটক করা হয় ৩জনকে। তাদের গলায় ঝুলছিল নৌকা প্রতীকের ব্যাচ।
বিকেল ৩টায় সেখানে হাজির হন শামীম ওসমান। এসময় শামীম ওসমানের কাছে অভিযোগ করে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের কুকুরের মতো পিটিয়েছে’।
তখন শামীম ওসমানের র্যাব সদস্যকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন ‘আপনি, আমাদের ছাত্রলীগের জয়েন্ট সেক্রেটারীকে মারছেন! এখন নারায়ণগঞ্জ আপনি সামাল দেন। দেখি আপনি পারেন কিনা আর আমি পারি কিনা। আপনি ছাত্রলীগের জয়েন সেক্রেটারীকে চোরের মতো মারবেন?
জবাবে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ওদের কে মারি নাই স্যার। ওরা দেখেন এসব জিনিসপত্র নিয়ে (ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোঠা দেখিয়ে বলেন) ও ওখানে ককটেল আছে। তারা এখানেই ছিল। আপনি সবাইকে জিজ্ঞাসা করেন। ব্যাপারটা ওই রকম নয় ‘স্যার’। চোরের মতো পিটানো হয় নাই স্যার। তাদের প্রতিহত করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আসায়।

র্যাব-১১ এর স্কোয়াড্রন লিডার একেএম মনিরুল আলম বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছিলাম যে, ভোটকেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেখানে গিয়ে আমরা কিছু অবাঞ্ছিত লোকজনকে ভোট কেন্দ্রে অবাধে যাতায়াত করতে দেখি। ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে আমরা তাদের প্রতিহত করি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ লাঠি, দুটি ছোরা এবং একটি তাজা ককটেল উদ্ধার করি। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।









Discussion about this post