শ্বাসরুদ্ধকর ১৮ ঘন্টার পর শীতলক্ষ্যায় জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চটি উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ৷
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়েছে। লঞ্চ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৮ জনে।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ২৮ জনের পরিচয় জানা যায়নি। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করছে ফায়ার সার্ভিস এবং মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে দশটার দিকে লঞ্চ উদ্ধারে কাজ শুরু হয়৷
রোরবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর ঘটনাস্থলে পৌছায় প্রত্যয় ৷ রাতভর নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধার কাজ চলায় সেখানেই নোঙর করা ছিল উদ্ধারকারী জাহাজটি৷
নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবির ঘটনায় পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ নিখোঁজ ছিলো আরও ২৭ যাত্রী৷
গতকাল রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকায় একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল৷ রাতেই ২৯ জন সাঁতরে তীরে ওঠেন৷ লঞ্চ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ, কোস্টগার্ড, দমকল বাহিনী, নৌ ও থানা পুলিশের উদ্ধারকর্মীরা৷
উদ্ধারকর্মীরা ৫ নারীর লাশ উদ্ধার করেছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক৷ লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷
নিহতরা হলেন: মুন্সিগঞ্জ সদরের উত্তর চরমসুরার ওয়ালিউল্লাহের স্ত্রী পাখিনা (৪৫), মুন্সিগঞ্জ সদরের প্রীতিময় শর্মার স্ত্রী প্রতিমা শর্মা (৫৩), মালপাড়ার হারাধন সাহার স্ত্রী সুনিতা সাহা (৪০) ও নোয়াগাঁও পূর্বপাড়ার দুখু মিয়ার মেয়ে ছাউদা আক্তার লতা (১৮)৷ একজনের লাশ এখও শনাক্ত করা যায়নি৷
নারায়ণগঞ্জ নৌ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল আলম জানান, চর সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় নির্মাণাধীন সেতুর কাছাকাছি স্থানে এ ঘটনা ঘটে। একটি কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় এম এল সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চটি ডুবে যায৷ নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জের দিকে রওয়ানা হয়েছিল ডুবে যাওয়া লঞ্চটি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারের নিরাপত্তকর্মী মোহাম্মদ হালিম৷ তিনি বলেন, এসকেএল-৩ (এম: ০১২৬৪৩) নামের একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে অন্তত ২০০ মিটার লঞ্চটিকে টেনে নিয়ে যায়৷ এরপর লঞ্চটি যাত্রীসহ ডুবে যায়৷
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুক্লা সরকার বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাশের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ ঘাট দিয়ে ১৩ জন যাত্রী সাঁতরে উঠেছেন৷ পশ্চিম পাশের ঘাট দিয়ে আরও ১৬ জন জীবিত অবস্থায় উঠেছেন৷ পাঁচজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জ জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা জানান, লঞ্চটিতে অন্তত ৫০ জন যাত্রী ছিল৷ সন্ধ্যা ৫টা ৫৬ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটি আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে দুর্ঘটার কবলে পড়ে৷ এসকেএল-৩ নামক একটি কোস্টার জাহাজ পেছন থেকে লঞ্চটিতে ধাক্কা দেয়৷
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকের নাম আলাল হোসেন৷ তিনি মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা বলে জানান লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি মনিরুজ্জামান৷ তিনি বলেন, এই রুটে ২৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে৷ আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর আয়তন ছোট৷ কোস্টার জাহাজগুলো এই রুটে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে৷ বারবার বলার পরও তারা কোনো সমঝোতা করে চলাচল করে না৷ কোস্টার জাহাজগুলো যেন নিয়ম মেনে যেন চলাচল করে এ দাবি তোলেন তিনি৷
লঞ্চের যাত্রী ছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদরের মাটহাটি এলাকার বাসিন্দা মোবারক মাদবর (৪৭) জানান, বড় একটি জাহাজের সাথে ধাক্কা লেগে অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ লঞ্চটি ডুবে যায়৷ তিনি সাতরে তীরে ফিরতে পেরেছেন৷ তবে বাকিদের কোনো খবর তিনি দিতে পারেননি৷
জেলা প্রশাসনের দুই তদন্ত কমিটি গঠন
কোস্টার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে৷ জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ৷ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে বলেও জানান ডিসি৷ অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিএ‘র নৌ ট্রাফিক পুলিশের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷








Discussion about this post