সংবাদকর্মী ও তোলারাম কলেজের অনার্স ৩য় বর্ষের মেধাবী ছাত্র শাহরিয়াজ শুভ্র হত্যার ৪ দিনের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটনের পর ছিনতাইকারী আল আমিনের পর এবার অন্যতম অপর আসামী রবিন (২৮) ওরফে রিক্সা রবিন বুধবার ২৬ ডিসিম্বর মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে রহস্যজনকভাবে মারা মারা যায় ।
যদিও কারা কর্তৃপক্ষের দাবী রবিন ওরফে রিক্সা রবিন স্ট্রোক করার কারণে মারা গেছেন । এর আগে এই মামলার অন্যতম প্রধান আসামী আল আমিন মারা যাবার পর একই ধরণের বক্তব্য দিয়েছিলো কারা কর্তৃপক্ষ । বৃহস্পতিবার রাতে কারাগারে নিহত রবিনের বারাব বাবুল খান বলেন, রবিনকে পরিকল্পিতভাবে মারা হতে পারে । আমাদের কোন দাবী নাই । তবে কারাগারে গত দুই বছরে টাকার জন্য নানাভাবে মারধর করা হতো বলে বারবারই জানিয়েছে রবিন । তার স্ত্রী ও মা আদালতের হাজিরার সময় দেখা করতে গেলে এমন অভিযোগ করতো রবিন । আমার ছেলেকে যদি মেরেও ফেলা হয় তবে কি আমরা তার বিচার পাবো ? এমন অভিযোগ করাকালীন সময় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে দাড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এমন অভিযোগ করাকালীন সময়ে কারারক্ষিদের কয়েকজন বারবার নিহত রবিনের বাবা, মা ও স্ত্রীকে চোখ রাঙ্গানী দিতে দেখা যায় । এক পর্যায়ে গণ মাধ্যমকর্মীদের নাম পরিচয়ও জানতে ব্যকুল হয়ে উঠে কারারক্ষীরা !
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ নগরী নির্মাণের জন্য আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল নারায়ণগঞ্জে সরকারি তোলারাম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সংগঠক ও শিক্ষানবিস সাংবাদিক শাহরিয়াজ শুভ্র। তবে সেই শুভ্রকেই হতে হয়েছিল হত্যাকান্ডের শিকার। সঙ্গে থাকা ৬০০ টাকা ও একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিতেই ওই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ৪ জনের ছিনতাইকারী দলটি। শুভ্র হত্যাকান্ডের পরে বেশ আলোড়িত হয়েছিল সেসময়। তবে ২ বছর হয়ে আসলেও এখনো শেষ হয়নি শুভ্র হত্যাকান্ডের বিচার।
নিহত শুভ্র সদর উপজেলার ফতুল্লা লালপুর এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. কামাল উদ্দিনের ছেলে। সে নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ফতুল্লা থানার প্রাথমিক সদস্য। শুভ্র স্থানীয় দৈনিক যুগের চিন্তার অনলাইনের কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতো।
শুভ্র হত্যা মামলার প্রধান আসামী আল আমিন কারাগারে মারা যাবার পর সমালোচনার ঝড় উঠে । এই মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বলেও দাবী করেছেন অনেকেই । এই মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে গভীর রহস্য । এমন কঠোর সমালোচনার পর এবার বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর মধ্য রাতে মারা যায় আরেক অন্যতম আসামী রবিন ওরফে রিক্সা রবিন (২৮) । যিনি এই হত্যাকান্ডে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছিলো । প্রকৃত ঘটনার মূল অপরাধীদের একের পর এক এমন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুভ্র হত্যার প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই এমন রহস্যজনক মৃত্যু হচ্ছে বলেও দাবী করেছে হাসপাতালের মর্গের সামনে থাকা উপস্থিত অনেকেই ।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভোরে শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র সাইনবোর্ড যাওয়ার জন্য সিএনজিতে ওঠে। পরে রাস্তার মাঝেই শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্রকে চাকু দিয়ে জিম্মি করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শ্বাসরোধ করে রাস্তার পারে ফেলে পালিয়ে যায়। শুভ্রর সঙ্গে থাকা ৬০০ টাকা ও একটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিতেই ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে আদালতে স্বীকার করে ঘাতকরা।
৮ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে নিখোঁজের পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফতুল্লার ভূইগড় এলাকা থেকে শুভ্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময়ে অজ্ঞাত থাকলেও ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে পরিবারের সদস্যরা লাশটি শুভ্রের শনাক্ত করেন।
শুভ্র হত্যাকান্ডের পরে বেশ কিছুদিন বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন শুভ্র হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মিছিল সমাবেশ করেছিল। যে কারণে শুভ্র হত্যাকান্ডটি তৎকালে বেশ আলোচিত ছিল।
১৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, কুমিল্লা তিতাস উপজেলার মঙ্গলকান্দি এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে সিএনজি চালক মো.ইয়ামিন ওরফে আল আমিন (২৩), কুমিল্লা দেবীদ্বার উজালী কান্দি এলাকার কেসমত আলীর ছেলে মো. জালাল (৩০), কুমিল্লা চান্দিনা হোসেনপুর এলাকার আলম মিয়ার ছেলে জুয়েল (২২), সিদ্ধিরগঞ্জের দক্ষিন নিমাই কাশারী এলাকার বাবুল মিয়া খানের ছেলে মো. রবিন (২৮)।
ওইদিন বিকেলে আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে ছিনতাইকারী জুয়েল (২২) ও রবিন (২৮)। তারা আদালতকে জানায়, সিএনজি নিয়ে যাত্রী বেশে জুয়েল, রবিন, জালাল ও মোঃ ইয়ামিন ওরফে আল-আমিন মিলে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রোডে ছিনতাই করে আসছিল। গত ৮ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্র শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র সাইনবোর্ড যাওয়ার জন্য সিএনজিতে ওঠে। পরে রাস্তার মাঝেই শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্রকে চাকু দিয়ে জিম্মি করে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে শ্বাসরোধ করে রাস্তার পারে ফেলে পালিয়ে যায়।
সরকারী তোলারাম কলেজের একাউন্টিং বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও সাংবাদিক শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র হত্যাকান্ডের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শেষ হয়নি বিচার কাজ। শুভ্রর পরিবার হতাশা প্রকাশ করলেও ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা রাখছেন তারা।
ইতোমধ্যে মামলার ৪ আসামীর মধ্যে প্রধান আসামী আলামিন কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেচিলো । এবার এই মামরার অন্যতম আরেক আসামীরিবিন ওরফে রিক্সা রবিন কারাগারে ারা যাবার ফলে সন্দেহের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে । তবে এটি নিছক ছিনতাই নাকি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড তা নিয়ে এখনো সন্দেহ প্রকাশ করছেন শুভ্রর বাবা। দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচার নতুন করে বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কারাগারে নিহত রবিন ওরফে রিক্সা রবিনের সুরৎহাল রিপোর্ট তৈরী করতে আসা নারায়ণগঞ্জ সদর থানার উপ পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাজ সুরৎ হাল বরপোর্ট তৈরী করে আবাসিক মেডিক্যাল াফিসারের কাছে হস্তান্তর করা । আমরা আমাদের সেই দায়িত্বের বাইরে কিছু বলতে পারবো না ।









Discussion about this post