গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হটাৎ করেই বিএনপির মনোনয়ন সংগ্রহ করে আলোচনায় আসেন সাখাওয়াত হোসেন খান। নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও বেশ ভালো পরিচিতি অর্জন করে নেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে। তবে একটু জোর দিলেই তিনি জিততে পারতেন সেবারের নির্বাচনে এমনটাই দাবী করেছিলেন মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু। কিন্তু তা না করে উল্টো ২ কোটি টাকার বিতর্কে জড়িয়ে গেছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। এরই মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন খান মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
নতুন করে আবারও সামনে এসেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। দলীয়ভাবে এখনও কোন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপনীত হতে না পারলেও মনোনয়ন সংগ্রহ করে নিয়েছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রতীকে দাঁড়াবেন নির্বাচনে। তার এমন আত্মপ্রত্যয় দেখে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলের মাঝে। তবে কি এবারও আর্থিক বিষয় নিয়ে বিতর্কে জড়াতে যাচ্ছেন সাখাওয়াত হোসেন খান ?
বিতর্কের তথ্য উপস্থাপন করেন সাখাওয়াত হোসেন খানের সাবেক ঘনিষ্ঠ নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে পুরোটা সময় সাখাওয়াত হোসেন খানের পাশে ছায়ার মত ছিলেন। নির্বাচনের পরেই কোন একটি বিষয়ে তাদের মাঝে ফাটল ধরে। তারপরেই বেরিয়ে আসে মূল ঘটনা। এই প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গতবার যখন নির্বাচন আসলো তখন আমি তৈমূর আলম খন্দকার, আবুল কালাম এবং গিয়াসউদ্দিন সাহেবকে অনুরোধ করেছি নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু তারা কেউ রাজি হয়নি। সেই সময়ে সাখাওয়াত হোসেন খানের সাথে এডভোকেট হওয়ার সুবাদে আমার সুসম্পর্ক ছিলো। সে আমাকে বললো আমি নির্বাচন করতে চাই। আমি বললাম নির্বাচন করতে তো ফান্ড লাগবে। সে বললো আমি ১ কোটি টাকা খরচ করতে পারবো। আমি ম্যাডাম আর মহাসচিবের সামনে ৪৫ মিনিট কথা বললাম তাকে নমিনেশন দেয়ার আমি তখন বলুলাম, ম্যাডাম সাখাওয়াত ৭ মার্ডার মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, বেশ কয়েকবার আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলো। ম্যাডাম এই কথা শুনে আমার সামনেই মহাসচিবকে বললেন, এই ফখরুল সাখাওয়াতকে নমিনেশন দিয়ে দাও।’
তাকে নমিনেশন এনে দেয়ায় সিনিয়র নেতারা আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়। ম্যাডাম তৎকালীন দলের মিডিয়া উইং শাইরুলকে বললো আমার সাথে যেন ২৪ ঘন্টা কন্টাক রাখে। নির্বাচনের মনোনয়ন চূড়ান্ত হবার ৩ দিন পর সে বলে আমার কাছে টাকা নাই তুমি ম্যাডামের কাছে টাকা চাও। আমি শাইরুল ভাইকে বলার পর সে বলে, সাখাওয়াত না বললো ১ কোটি খরচ করবে ? তাহলে তার টাকা কোথায় ? তারপরে ম্যাডামকে অনুরোধ করে টাকা আনিয়েছি ।
সাখাওয়াতের পুরো নির্বাচনী কার্যক্রমে আমি অলিখিত ভাবে প্রধান সমন্বয়কারী হয়ে গেলাম। কে কোন ওয়ার্ডে যাবে, কে কোথায় প্রচারণা চালাবে, কোথায় লিফলেট পোষ্টার যাবে সব আমি দেখভাল করেছি। তারপরে নির্বাচন হলো, আমরা ফেল করলাম। ইলেকশনের পরে আমার কাছে খবর আসলো সে একটা পক্ষ থেকে টাকা নিয়েছে ২ কোটি টাকা। তাছাড়া দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা দলের নির্বাচনের তহবিল ফান্ডে বেশ কিছু অর্থ দিয়ে সহায়তা করে। সেই টাকাও সে নির্বাচনে খরচ করেনি। দেখলাম নেতাকর্মীরা হতাশ। ম্যাডাম নির্বাচনের জন্য বিশাল বাজেট পাঠিয়েছিলো যা দিয়ে আমরা মাঠ গরম সহ নির্বাচনের কাজে মাঠে ছিলাম। আর সে একপক্ষের থেকে ২ কোটি টাকা আর বিএনপি মাইন্ডের ব্যবসায়ীদের টাকা সে আর খরচ করেনি। এটা শুনে আমার বিবেকে খুবই বেঁধেছে। আমার কথা হচ্ছে, তুমি নির্বাচন করলা, এত পরিচিত হলো, কিন্তু ১ কোটি টাকার কথা বলে ৫ লাখ টাকাও খরচ করে নাই।
তার এমন তথ্য ফাঁস হবার পর চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠে। জেলার অন্যান্য নেতারাও ক্ষুব্ধ হন সাখাওয়াতের এমন কান্ডে । যদিও এসব বিষয় বার বারই অস্বীকার করে আসছিলেন সাখাওয়াত হোসেন খান। প্রতিবারই বলেছেন এই অভিযোগ প্রমান করতে। তবে তার ঘনিষ্ঠ নেতার মুখ থেকে আসা এই অভিযোগ দলের অন্যান্যরা অবিশ্বাস করতে পারেননি। কম বেশী সকলেই বিশ্বাস করেছেন।
২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বিএনপির পরাজিত এই প্রার্থী। তবে এবারও কি স্বাভাবিক নির্বাচন করবেন নাকি গতবারের মত আবারও বিতর্কে জড়িয়ে যাবেন ? কিংবা, গতবার জড়িয়েছিলেন ২ কোটি টাকার বিতর্কে, এবার কত টাকায় জড়িয়ে যাবেন ? সত্যিই তিনি বিজয় চান নাকি নির্বাচনকে কাজে লাগে অন্যান্য সুবিধা আদায়ই তার মূল লক্ষ্য হবে ? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব প্রশ্নের উত্তর সময়েই বেরিয়ে আসবে। নিশ্চিত জয়ের চাইতে আর্থিক বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। এমন ব্যক্তির উচিৎ নির্বাচন না করে দলের সাংগঠনিক কাজে মনোনিবেশ করা। এতে করে একদিকে দল শক্তিশালী হবে এবং তার বদলে যোগ্য প্রার্থী দলের জন্য জয় ছিনিয়ে আনতে পারবে।
তবে সাখাওয়াত হোসেন খান বার বার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এর সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই। এসব এক ধরনের প্রপাগান্ডা। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে কোন বিশেষ কারসাজি । সূত্র : thenewsnarayanganj.com









Discussion about this post