নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক বিরোধে শামীম ওসমানের সমর্থন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের চেয়ারপার্সনের পদ থেকে অব্যাহতির প্রসঙ্গটি।
কারণ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বিরোধ বজায় রয়েছে।
অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টার পদ থেকে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের অব্যাহতির ইস্যুটি।
# তৈমুরের অব্যাহতিতে মাথাব্যথা নেই : আইভী
# আমার দল আমাকে নিরপেক্ষ বানিয়ে দিয়েছে : তৈমুর
বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে অ্যাডভোকেট তৈমুর হাতি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পরে তৈমুরের স্থলে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয়েছে মনিরুল ইসলাম রবিকে।
সোমবার ৩ জানুয়ারী তাকে উপদেষ্টা পদ থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মনে। যদিও তৈমুরের পক্ষে মাঠে নামা বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেও তার পিছপা হবেন না। অপরদিকে এই দু’টি ইস্যু নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চিকিৎসক সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
তৈমুরের অব্যাহতিতে মাথাব্যথা নেই, শামীম ওসমানের সমর্থন কি খুব জরুরী-আইভী :
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকে মেয়র প্রার্থী চিকিৎসক সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কখনও বিভাজন ছিল না। তৃণমূল সবসময় একত্রিত ছিল। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগে কোন বিভাজন নেই, আগেও ছিল না। আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক শেখ হাসিনার কর্মী। আমাদের মতবিরোধ থাকতে পারে কিন্তু দিনের শেষে সকলে শেখ হাসিনার কর্মী।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকালে নাসিক ১ নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকা থেকে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তৈমুরের অব্যাহতি প্রসঙ্গে আইভী বলেন, এ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। এটা উনাদের দলীয় কৌশল। আমি মাঠে লড়ছি তার সাথে সে আমার প্রধান প্রতিদ্বন্ধী আরও আছে। আমি এভাবেই শেষ পর্যন্ত লড়বো।
নিজ দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তার সমর্থন খুব কী জরুরি আজকের আমাদের এই নির্বাচনে। তিনি একজন মাননীয় এমপি। উনি ইচ্ছা করলেও আসতে পারবেন না৷ আমরা নির্বাচনের মধ্যেই থাকি।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে কাজ করতে সবসময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। এখানে সবধরনের চ্যালেঞ্জই আছে। এখানে আলাদাভাবে কিছু বলা যাবে না। যে কোন কাজেই চ্যালেঞ্জ আছে। নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।
আমার দল আমাকে নিরপেক্ষ বানিয়ে দিয়েছে-তৈমুর : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, আমরা নারায়ণগঞ্জ কারও কাছে বর্গা দেইনি। আমরা নারায়ণগঞ্জের নাগরিক। নারায়ণগঞ্জের সকল রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের লোকজন আমার সাথে আছে। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা সবসময় আমার পাশে আছে।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সিদ্ধিরগঞ্জের শিমড়াইল মোড় থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তৈমূর। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তৈমুর।
তিনি বলেন, আমি দেখিনা কোন বিএনপির লোক ঘরে বসে আছে। সকল অঙ্গ সংগঠনের লোকেরাই আছে। প্রতিদিন তো সকলের পক্ষে মিছিল করা সম্ভব না। আমিতো দেখিনি কেউ বসে আছে। ঢাকায় এসি রুমে বসে যে যেই কথাই বলুক বিএনপির লোকজন নৌকাকে ভোট দিবে না। তৈমূর আলম খন্দকার রাজপথে গুলি খাওয়া লোক। কাগজি ফরমায়েশি নারায়ণগঞ্জের মানুষ মানে না। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেমন দল করে তেমনি তারা নারায়ণগঞ্জেরও নাগরিক। তারা নারায়ণগঞ্জের নেতা, জনগণের নেতৃত্ব দেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালে আমি বসিনি, আমার দল বসে গিয়েছে। আমাকে দল বসিয়ে দিয়ে এখন যিনি নৌকার প্রার্থী তাকে বেনিফিট দিয়েছে। তাকে জয়লাভ করার সুযোগ করে দিয়েছে। মানুষ বলে সেই প্রার্থীকেই জয়লাভ করানোর জন্য কোন কোন জায়গায় ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে । তবে মনে রাখবেন বিএনপির লোকজনকে পিটালেও কারও কথায় তারা নৌকায় ভোট দেবে না।
তৈমূর বলেন, আমি আল্লাহর কাছে আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করেছি, আবারও করছি। আমি মনে করি আমার নির্বাচনের রাস্তাটাকে আমার দল প্রশস্ত করে দিয়েছে। বিএনপির লোকেরা নৌকায় ভোট দিবে না বরং নৌকার লোকদের এখন সুযোগ হয়েছে আমাকে ভোট দেয়ার। কারণ আমার দল আমাকে নিরপেক্ষ বানিয়ে দিয়েছে, জনগণের বানিয়ে দিয়েছে। সেজন্য তাদের শুকরিয়া কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে জনগণ জয়লাভ করবে। আমার গায়ে এখন কোন রং নেই, সাদা হয়ে গেছি। এটা নেতাকর্মীদের জন্যেও ভাল হয়েছে। এত ঘ্যান ঘ্যান ভাল লাগে না। আমাকে সঠিক ভাবে তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আমি মনে করি ভাগ্যের মালিক আল্লাহ, তিনি জনগণের পক্ষে থাকবে।









Discussion about this post