“বিদেশী নাকি নকল ! চাষাড়ার ৫ দোকানকে জরিমানা” গত বুধবার নারায়ণগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পর এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের একদিনের মধ্যেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় মুনস্টার মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেডের কারখানায় অভিযান চালিয়ে শত কোটি টাকার নকল ইলেকট্রনিক ও প্রসাধনী সামগ্রীসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব
বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকার ‘মুনস্টার মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেড’ কারখানায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু।
কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের নকল পণ্য উদ্ধার করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফগ, সিগনেচার, হেবা গোল্ড, কোবরা কিংবা ব্লু লেডি ব্র্যান্ড ছাড়াও দেশীয় সুগন্ধিও নকল তৈরি করে আসছিল মুনস্টার মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও সনি ব্রাভিয়া, এলজি ও স্যামসাংয়ের ইলেকট্রনিক্স পণ্যও নকল তৈরি হচ্ছিলো কারখানাটিতে।

ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন শিমরাইল এলাকায় মুনস্টার মার্কেটিং প্রাইভেট লিমিটেডের কারখানায় নকল পণ্য তৈরি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএসটিআইয়ের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযানে দেখা যায়, দেশীয় ও বিদেশি সুগন্ধিসহ ইলেকট্রনিক্সের নকল পণ্যে কারখানা সয়লাব। ইলেকট্রনিক্স পণ্যগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনের তৈরি লেখা। কিন্তু পণ্যগুলো উৎপাদন হয়েছিল ওই কারখানায়ই। প্রতিষ্ঠানের মালিক বেলায়েত হোসেনসহ কর্মরত মাঈনুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মো. সোহাগ, মো. কাওসার, রাজিব সেরনিয়াবাত ও সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে এমন নকলের রমরমা অবৈধ কারভার চালিয়ে আসছিলো এই প্রতিষ্ঠানসহ আরো অবেক প্রতিষ্ঠান। জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার সকল মার্কেটে ইলেকট্রনিক ও প্রসাধনী সামগ্রীর দোকানে কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা এবং দোকানীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেড়িয়ে আসবে নকলের এই কারখানাগুলো কোথায় কোথায় রয়েছে । নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ দোকানী ও কর্মচারীরা খুব ভালো করেই জেনেশুনেই অধিক লাভের আশায় নকল কারখানা থেকে এমন পন্য বাকীতে কিনে এনে ভোক্তাদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য এর আগে গত বছর নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে অভিযান চালায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। সেই অভিযানে প্রায় ৭০ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ নকল প্রসাধনী ও নকল স্টিকার লাগানো টিভি জব্দ করা হয় এবং ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সেইসময় মালিক পলাতক ছিল।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ফলপট্টি এলাকার এক প্রসিদ্ধ দোকানীর কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা শহর ছাড়াও সর্বত্র কি পরিমাণ নকল প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে তা চিন্তাই করতে পারবেন না সাধারণ মানুষ । প্রতিটি দোকান/মার্কেট থেকে নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করেন প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে । ফলে নকলবাজদের ভয়ংকর দৌড়াত্ম কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না ।









Discussion about this post