সূতা চোরদের অন্যতম হোতা গোলাম কিবরিয়া মামুনের বিরুদ্ধে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত । গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মিল্টন হোসেন রিম্নড মঞ্জুর করলে শনিবার ২৮ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১১টায় কারাগার থেকে থানায় নিয়ে আনা হলে হুমরি খেয়ে তদ্বির চালায় মামুনের পিতা কুক্ষাত সূতা চোরদের গডফাদার তোতা মিয়া ও মামা আরেক কুক্ষাত সূতা চোর সিন্ডিকেটের হোতা দবির উদ্দিনসহ মামুনের পরিবারের কয়েকজন স্বজন ।
আসামী মামুনকে থানার নিয়ে আনার সাথে সাথেই যাতে রিমান্ডে কোন ধরণের মারধর করা না হয় সে লক্ষ্যে দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা লেনদেনের প্রস্তার দেয় জোড়ালোভাবে । সূতা চোরাই কারবারী মামুন কে রিমান্ডে আনা হলেও অপর আসামী নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের লেবাসধারী কুক্ষাত চোর চক্রের হোতাদের সকলেই এখনো প্রকাশ্যে ঘরে বেড়াচ্ছে বলে জোড়ালো অভিযোগ করেছে মামুনের মামা দবির উদ্দিন । যিনি এক সময় মুদির দোকানী করলেও সূতার এমন কর্মকান্ড চালিয়ে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক ।
এমন সূতা চোরদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের হলেও তাদের টিকিটিও আর স্পর্শ করা যাবে না বলেও ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে নগরজুড়ে । সূতা চোরদের নানাভাবে আইনী সুবিধা দিতে এরই মধ্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি প্রশাসনের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তারা ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বছরের পর বছর জুড়ে প্রকাশ্যে এমন চোরাই সূতার কারবার চালিয়ে আসছিলো চোরকারবারী সিন্ডিকেটের হোতা দায়ের করা মামলার অন্যান আসামী বিসমি ইয়ার্ণ ট্রেডিংয়ের হাজী বিল্লাল, জ্যামি এন্টারপ্রাইজের হাজী ইসমাইল, টানবাজারের ব্যবসায়ী ফরহাদ, এস এস থ্রেড এন্ড এক্সেসরিজের সুব্রত রায়, শুভা এন্টারপ্রাইজের বিপুল মন্ডল, মেসার্স পুলক চৌধুরীর মালিক পুলক চৌধুরী, এইচ এস ট্রেডিং এর মো. সেলিম রেজা, তোতা ইয়ার্ণ ট্রেডিং এর মো. গোলাম কিবরিয়া মামুন, জামাল ইয়ার্ণ ট্রেডিং এর আলহাজ আব্দুল মান্নান মিয়া, শিমুলিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের খান নজরুল ইসলাম, মেসার্স সাদ ট্রেডার্সের মো. জহির হোসেন, আজাদ ট্রেডার্সের মো. আওলাদ হোসেন, সুতাঘরের আমিন উদ্দিন, রিতা ট্রেডার্সের গোবিন্দ চন্দ্র সাহা, টানবাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, যাকী এন্টারপ্রাইজের মো. সেলিম, এনবি ট্রেডিংয়ের সমির সাহা, আমিন ব্রাদার্সের রুহুল আমিন। এরমধ্যে উভয় মামলায় হাজী ইসমাইল ও ফরহাদকে আসামী করা হয়েছে।
যুগের পর যুগ ধরে এমন চোরাই কারবার চালিয়ে আসলেও চোরাকারবারীদের এদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। ফলে, এই চক্রটি বীরদর্পেই চালিয়ে যাচ্ছিলো এই চোরাই সূতার কারবার। প্রায় প্রতিনিয়তঃ শহরের চিহ্নিত এই চোরাই কারবারীদেরকে নারায়ণগঞ্জ থানা, ডিবি কার্যালয়সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে খোসগল্প করতে দেখা গেছে ।
দিকে চলতি বছরের ৮ ও ১৪ ডিসেম্বর টানবাজার এলাকায় পৃথক দুটি অভিযান চালায় ঢাকা রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরমধ্যে ৮ ডিসেম্বর এক কোটি টাকা মূল্যের ১০ টন বন্ডেড সূতা জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাস্টমস বন্ড কমিশন। টানবাজার এলাকার হাজী বিল্লাল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিসমি ইয়ার্ন ট্রেডিংয়ের গুদামে এ অভিযান চালিয়ে এই সূতা উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে ১৪ ডিসেম্বর শহরের বংশাল রোডের সুতারপাড়া এলাকার সাদ ট্রেডার্স এবং আজাদ ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩০ টন বন্ডেড সুতা আটক করা হয়। যার মূল তিন কোটি টাকারও উপরে। পরপর দুবার চোরাই সুতা উদ্ধারের ঘটনায় টনক নড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ।
অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, দেশের বস্ত্র-পোশাকসহ বেশকিছু রফতানিমুখী খাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রফতানির উদ্দেশ্যে আমদানীকৃত পণ্যে বিশেষ শুল্ক সুবিধা পায়। বন্ড বা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ নামে পরিচিত এ শুল্ক সুবিধায় আনা পণ্য রফতানি না করে দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করে সংঘটিত হয় শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার। এ অপব্যবহার রোধে বিশেষ তৎপরতা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দীর্ঘ তদন্ত এবং অনুসান্ধানে চোরাই সিন্ডিকেটের ১৮ চোরাকারবারিকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। ঢাকা রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুল হাসান ও আতিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পরপরই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ টানবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অন্যতম হোতা সুতা ব্যবসায়ী তোতা মিয়ার ছেলে চোরাই সূতা কারবারি মো. গোলাম কিবরিয়া মামুনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর রিমান্ড শুনানী শেষে এক দিনের বরমান্ড মঞজুর করেন ।
শহরের টানবাজার এলাকার চোরাই কারবারীদের কয়েকটি ঘনিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, এই মামলার এজাহার পত্র হাতে নিয়ে কি করে গ্রেফতার এড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে আইনজীবীদের কাছে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে । উচচ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফের একই কায়দায় কারবার চালাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে চোরাই কারবারীদের সকলেই ।









Discussion about this post