বিগত কয়েক বছরের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগে প্রায় হাজার কোটি টাকার সরকারি টেন্ডার আহ্বান করা হলেও প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশে ১০% থেকে ১৫% অগ্রিম চাঁদা দিয়ে এই কাজ করতে হতো ঠিকাদারদের । আর ঠিকাদারদেরকে জিম্মি করে শত শত কোটি টাকার চাঁদা আদায় ও নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীদের মাঝে কড়ায় গন্ডায় হিসেব কষে তা বন্টন করতো এই কুক্ষাত অপরাধী জিকে শামীম । যার সাথে নারায়ণগঞ্জের শাসক দলের জেলার সভাপতি/সেক্রেটারি ও সংসদ সদস্যের ছিলো গভীর সখ্যতা ! কুক্ষাত অপরাধী জিকে শামীম গ্রেফতারের পর অনেক নেতারাই চুপসে যেতে দেখা গেছে !
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
যুবলীগের কথিত কেন্দ্রীয় কমিটির মবায় বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি সরকারের শাসনামলের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর অস্ত্রধারী সসন্ত্রাসী, বর্তমান সরকারের অনেক নেতাদের অর্থ যোগানদাতা ও ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম এবং তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ১৯৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন ।
আদালতের এমন নির্দেশের পর নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহল, বিভিন্ন ব্যাংক ও জিকে শামীমকে নানাভাবে অর্থনৈতিক/প্রশাসনিক শেল্টারদাতাদের অনেকের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে শহরে ব্যাপক চাউর হয়েছে ।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আসামি জিকে শামীমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া গুলশান থানার ২৯(৯)১৯ নম্বরের মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় সিআইডি এ আবেদন করেছিলেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও অন্যান্য আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে নিজ নামীয় লাইসেন্সকৃত অস্ত্র প্রকাশ্য বহন, প্রদর্শণ ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভয় ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল, গরুর হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণসহ চাঁদাবাজি করে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ বৈভবের মালিক হয়।
বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে দেশে ও বিদেশে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরসহ নিজের ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রাখে।
আসামি এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম র্যাবের অভিযানে এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউ এস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুর ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক একাউন্ট ও চেক বই সহ গ্রেপ্তার হয়।
মামলার তদন্তের আসামিদের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা পয়সার লেনদেন পরিলক্ষিত হয়। মামলার তদন্তকালে জানা যায়, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ও তার পরিবার বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ রেখেছে।
এ ছাড়াও, আসামি যেকোনো সময় মজুদকৃত অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অপরাধলব্ধ আয় সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। আসামির অপরাধলব্ধ আয় অবরুদ্ধ না হলে ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে আইনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।
মামলার তদন্তকালে জিকে শামীমের ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর সমূহে গচ্ছিত অর্থেও তথ্য পাওয়া যায়। ব্যাংক হিসাব ও এফডিআর সমূহ অবরুদ্ধ করা না হলে আসামি যেকোনো সময় হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে বা হিসাবসমূহের অর্থ বিদেশেও প্রেরণ করতে পারে। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয় না।
যেহেতু ব্যাংক হিসাবে জমাকৃত অর্থ হস্তান্তর হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, এজন্য মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে আসামি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সন্দিগ্ধ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবসমূহ অবরুদ্ধকরণের আদেশ প্রদানের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা। জানা গেছে, ওই হিসাবগুলোতে কয়েকশ কোটি টাকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে বিদেশি মদসহ জিকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পাশাপাশি তার অফিস থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, অর্থ পাচার ও মাদক মামলা করে। ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলায় শামীমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে র্যাব ।









Discussion about this post