মোস্তাইন বিল্লাহ নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে “হাইওয়ে পুলিশ কোন কাজ করে না” এমন মন্তব্যের পর গত দুইদিন সর্বত্র জেলা প্রশাসককে সাধুবাধ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী । নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ কোন কাজ করে না বলেও জোড়ারো অভিযোগ করেছেন অনেকেই । হাইওয়ে পুলিশ নিজেরা ছাড়াও কয়েকজন দালাল নিয়োগ দিয়ে চাঁদাবাজির মহোৎসব যাচ্ছে সারাদিন রাত ২৪ ঘন্টা । সাইনবোর্ড এলাকার এমন কোন পরিবহণ নাই যা চাঁদা না দিয়ে চলাচল করতে পারে । সাইনবোর্ড হাইওয়ে এলাকায় দায়িদ্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর কে. এম. মেহেদী হাসান যার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মহোৎসবের জোড়ালো অভিযোগ থাকলেও তিনি দম্ভ করে বলেন, “চাঁদাবাজির টাকা আমি একা খাই নাকি ? আমার এসপি, আমার ডিআইজি , আমার হেড কোয়ার্টারকে দিয়েই আমার চাকরী করতে হয় ! আমাকে ঠেকাবে কে ?“
এমন মন্তব্য ভূক্তভোগী চাঁদাবাজির শিকার অনেক কয়েকজন ড্রাইভারের । আর চাঁদা দিতে পরিবহণ মালিক ও ড্রাইভার অস্বীকৃতি জানালে অকথ্য ভাষায় মা বোন তুলে প্রকাশ্যেই গালিগালাজ করে ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান । এমন গালিগালাজের ঘটনা সাইনবোর্ড এলাকার সকলের ই অজানা নয়।
গত ২২ অক্টোরব দুপুর ১২ টা ২৫ মিনিটের সময় সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশের ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান তার ফেসবুক আইডি তে ৫ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি “নিরাপদ সড়ক চাই‘ এমন একটি নিজের অভিনীত গান আপলোড করেন । এমন গান দেখে অনেকেই আরো কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান আসলেই রাস্ট্রের জন্য কতটুকু ও কি কাজ করেন তা উর্ধতন কর্মকর্তাগণ সরজমিনে উপস্থিত হয়ে গোপনে যাচাই করলেই নারাযণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্রাহ হাইওয়ে পুলিশ নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার সত্যতা পাওয়া যাবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের ক্ষোভ
মোস্তাইন বিল্লাহ বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ কোনো কাজই করে না। তার জন্যই সাইনবোর্ডে যানবাহনের চাপ লেগেই থাকে। সাইনবোর্ডের যানজটের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকতে হয়। আমাদের জেলা পুলিশের সময় এতো যানজট ছিলো না। আর শহরের চাষাঢ়া যানজটের মূল্যেই হল অনাবিল, মৌমিতা, বন্ধু পরিবহন। এই সকল পরিবহনের অর্ধেকই নাই । বডি তো খোয়ে খোয়ে পরে। গাড়ির ভিতরে সিট নাই, গাড়ির সামনে মাথাভাঙ্গা। আমার মনে হয় এই বাসগুলোর কোন ফিটনেস নাই। সকল বাসগুলোর কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। আমি এসপি সাহেব কে বলে দিচ্ছি আর স্টেডিয়ামের সামনে ১০০ বাস রাখার ব্যবস্থা করে দিবো। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকালে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও জেলা বিআরটিএ কতৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, তিনি বলেন, আমাদের বিআরটিএর মধ্যেও গাফিলতি আছে। পুলিশের মধ্যেও কিছু সমস্যা রয়েছে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটও মোবাইল কোর্ট কম করে। সবারই কিন্তু এক জায়গা থেকে কিছু কিছু সমস্যা আছে। আমরা চাই নারায়ণগঞ্জে সবার জায়গায় যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলো কমিয়ে আনতে। নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। আমরা যতই বলি নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক হানাহানি থাকতেই পারে কথায় কথায়। আমাদের ঐতিহ্য আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আছে। আমার এখানে সারাদেশে ৬০ শতাংশ খাদ্যের চাহিদা আমাদের এখান থেকেই সরবরাহ হয়। আমাদের যারা রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন তারা দেশকে কাঁপিয়ে চলেন। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে আমাদের নারায়ণগঞ্জের যে ট্রাফিক সিস্টেমটা বাড়তে পারে। বিআরটিএকে বলবো লাইসেন্স ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে এবং সিটি কর্পোরেশনকে বলবো টার্মিনালগুলো ঠিক করতে। ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে। আমরা সবাই মিলে যদি একসাথে কাজ করি তাহলে সড়ককে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।
এসমময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুভাস চন্দ্র সাহা, নরায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেহেদী ইকবাল, নারায়ণগঞ্জ হাইওয়ের পুলিশের এএসপি অমৃত সূত্রধর, নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএর সার্কেল সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আনুল হুদা চৌধুরী, মটরযান পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ তোয়াহা, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারী মটরযান পরিদর্শক ফারদিন খান, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সোহেল আক্তার, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের টাউন ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান, জেলা ট্রাক ট্যাংকলরী ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, নারায়ণগঞ্জ নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির সভাপতি ডা. আল ওয়াজেদুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শামসুজ্জামান প্রমুখ।









Discussion about this post