রোববার, বেলা ১১টা। রাজধানীর সচিবালয়ের বিপরীত দিকের রাস্তায় বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ছিলেন এক বৃদ্ধ। বয়স ৬৫ হবে। পরনে পাঞ্জাবি, কাঁধে গামছা, লুঙ্গি ও প্লাস্টিকের স্যান্ডেল।
জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে জিপিওগামী রাস্তায় যানজটে থেমে দাঁড়ানো যানবাহন থেকে সবাই বৃদ্ধের দিকে তাকিয়ে। রিকশায় বসা এক তরুণ-তরুণীকে আঙুল উঁচিয়ে বৃদ্ধকে দেখিয়ে কিছু একটা বলতে শোনা যায়। লক্ষ্য করতেই চোখে পড়ে বৃদ্ধের পাশেই একটি খালি রিকশা। রিকশাটির সামনে বসে তিনি পত্রিকা পড়ছিলেন।
কৌতূহলবশত সামনে এগিয়ে আলাপকালে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা বর্তমানে রাজধানীর ধনিয়ায় বসবাসকারী জাহাঙ্গীর হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। প্রতিদিন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা পড়া তার অভ্যাস। গত ৩৫ বছর ধরে দৈনিক পত্রিকা পড়ার অভ্যাসগত কারণে রিকশা চালানোর ফাঁকে তিনি ২-৩ ঘণ্টা পত্রিকা পড়েন।

কোন ক্লাস পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং কীভাবে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস হলো এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর হোসেন যা শোনালেন তা শুনে হোঁচট খাওয়ার দশা। তিনি সম্পূর্ণ নিরক্ষর। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ স্কুলে যাননি।
অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাটের দেয়াল লিখন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং ট্রেন স্টেশনে বিভিন্ন লেখা দেখে সেখানে কি লেখা রয়েছে তা জানতে চাইতেন। প্রশ্ন শুনে কেউ উত্তর দিতেন আবার কেউবা কথাই বলতেন না। কিন্তু জাহাঙ্গীর হোসেন কখনও হাল ছাড়েননি।

মানুষের কাছে প্রশ্ন করে নিজের প্রচেষ্টায় স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ এবং পরে যুক্তাক্ষরসহ বিভিন্ন লেখা পড়ে শেখেন। একটা সময় তিনি দেখেন তিনি যে কোনো বিষয় পড়তে পারছেন। ৩৫ বছর আগে তিনি প্রথম পত্রিকা কিনে পড়াশোনা শুরু করেন। এখন তিনি দ্রুতগতিতে পত্রিকার বিভিন্ন প্রতিবেদন ও কলাম পড়তে পারেন।
তিনি জানান, একটা সময় দৈনিক বাংলা, সংবাদ ও ইত্তেফাক এবং বিভিন্ন বিনোদন, ম্যাগাজিন পড়ে মজা পেতেন। কিন্তু এখন তিনি পত্রিকায় গ্রামবাংলার খবর বেশি পড়েন। তবে তিনি রাজনীতি ও খেলাধুলার খবর কম পড়েন। বিনোদনের খবর পড়তে তার বেশ ভালো লাগে বলে জানান।
সূত্র : jagonews24.com









Discussion about this post