ছোট্ট শহর নারায়ণগঞ্জ । কয়েক কিলোমিটারের এই শহরে রয়েছে নানা অনিয়ম, দূর্ণীতি, সাদা রঙ্গের অপরাধীদের আষ্ফালন, ব্যবসার নামে অপরাধীদের দৌড়াত্ম / প্রবণতার মাত্রা মারাত্মক । আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন তো সকলের জানা । নারায়ণগঞ্জবাসী চোখ বন্ধ করে অপরাধীদের আস্ফালন ও দৌড়াত্মের তথ্য প্রকাশ করতে পারলেও শুধু জানেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা ।
প্রাচ্যের ড্যান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরে ব্যবসা ছাড়াও রয়েছে স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, গীর্জাসহ সকল ধরণের প্রতিষ্ঠান । নগরবাসীর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র ই রয়েছে জিম্মিদশার আতংক । আর এমন ঘটনায় এই শহরে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা ।
শহরের ব্যবসার মূল কেন্দ্র নিতাইগঞ্জে একদিকে রয়েছে চোরাই কারবারীদের মারাত্মক দৌড়াত্ম । তেল চুরি, লবনের চোরাই কারবারী করে হাজার কোটি টাকার শুধু রাজস্ব ই ফাঁকি, গম চোরাই কারবারীদের সিন্ডিকেট, নকল পন্য উৎপাদন ও বিক্রয়। একই সাথে এই নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদকের পাইকারী ব্যবসার অভিযোগ । কি হচ্ছে না এই নিতাইগঞ্জে ?
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাত উচ্ছেদ হলেও এ নিয়ে প্রতিনিয়তঃ চলছে ভানুমতির খেলা । ফুটপাত উচ্ছেদ হলেও বঙ্গবন্ধু সড়কের ২নং রেল গেইট থেকে কালীরবাজারে মধ্যরাত থেকে বেলা দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তরকারী ব্যবসায়ীদের দখলদারিত্ব ও বিশাল চাঁদাবাজির দৃশ্য কারো চোখেই পরে না ।
অপরাদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া চত্তরে দেশের সাদা রঙ্গের অপরাধীচক্র পরিবহণ ব্যবসার নামে নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে অভিরামভাবে ।
একদিকে মৌমিতা নামক শতাধিক যাত্রীবাহী বাস, অপরাদিকে লেগুণাসহ নানা পরিবহণ পুরো নগরবাসীকে জিম্মি করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর যাবৎ । এ যেন মগের মুল্লুক । অভিযোগ ও শহরে চাউর রয়েছে কোন এক পুলিশের ডিআইজি এই মৌমিতা পরিবহণের নেপথ্যে মালিকানা থাকায় কোন পুলিশ কর্তারা এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন না ।
অপরদিকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে পরিচালিত লেগুণা পরিবহণ একাই এখন নিয়ন্ত্রণ করেন দিদার নামক এক পরিবহণ সন্ত্রাসী । যিনি মাত্র কয়েক বছর আগেও পাত্তি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতো । এখন এই দিদার কয়েকটি বহুতল বাড়ি, একাধিক গাড়ীর মালিক । যিনি নগরীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জিপির নামে চাঁদা তোলেন আর বন্টন করেন বলেও চাউর রয়েছে। এই প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করে কাটি কোটি টাকার মালিক বনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন।
চাষাড়ায় মৌমিতা পরিবহণ ছাড়াও অন্যান্য পরিবহণের নৈরাজ্যে অতিষ্ট নগরবাসীকে রক্ষা করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর অনেক সদস্য সচেষ্ট থাকলেও এমন অপরাধের বিষয়ে বরাবরই উদাসিন থাকতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে ।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র ২নং রেল গেইট এলাকায় পুরো সড়ক দখল করে বন্ধন পরিবহণ, উৎসব পরবহণ ও বিআরটিসি বাস টিকেট কাউন্টার নিজেরাই তৈরী করে সারাদিনব্যপী নগরবাসীকে অতিষ্ট করে তুলেছে । নগরবাসীকে এমন জিম্মি করে টিকেট কাউন্টার তৈরী করে যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে সকাল থেকেই নানা পেশার মানষ চরম বিরম্বনা /ভোগান্তির মধ্যে পতিত হচ্ছে ।
শহরের ২নং রেল গেইট এলাকার প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক দখল করে বন্ধন, উৎসব আর বিআরটিসি পরিবহণের এমন নৈরাজ্যের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ অসহায় ভূমিকায় থাকলেও পক্ষান্তরে অবৈধ ব্যাটারী চালিত রিক্সা, মটর সাইকেল প্রতিনিয়তঃ আটক করে মামলা ও জরিমানা আদায় করলেও মৌমিতা , বন্ধন, উৎসব, লেগুনাসহ শহরবাসীকে অতিষ্ট করে তোলা এমন পরিবহণগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার খবর দেখা যায় নাই । বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার এমন দ্বৈত ভূমিকার কারণে প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনমনে রয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতোটাই উন্নতি ঘটেছে যে স্বরণকালে এতো কম মামলার সংখ্যা কোন মাসেই দেখা যায় নাই । জানুয়ারি মাসে মাত্র ৭টি মামলা দায়ের হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি বলে আখ্যা দিয়ে গত সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজামান কে পুরস্কৃত করেছেন ৷ এমন পুরস্কারের ঘটনায় খোদ পুলিশের মধ্যেই রয়েছে কঠোর সমালোচনা ।
পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, কি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে তা টের ই পাচ্ছে বা কেউ । কোন কাজ করা যাচ্ছে না । জুয়া চলছে বাসস্ট্যান্ডে, প্রকাশ্যেএ মাদক বেচাকেনা হচ্ছে খোদ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নাকের ডগায়, ২ নং রেল গেইট এলাকায় সারাদিন রাত কয়েকজন নারী বিক্রি করছে নাদক । তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না । এমন অলিখিত নির্দেশনা ও চোখ রাংগানী দেখতে হয় প্রতিনিয়তঃ।
নগরীর অনেক সচেতন মহলসহ সর্বত্র চাউর রয়েছে, নারাযণগঞ্জে অপরাধীরা এখন প্রকাশ্যেই তাদের কার্য্যক্রম চালাচ্ছেন। কোথায় বা কোন সেক্টর নেই যেখানে অপরাধ হচ্ছে না । অপরাধ দমনের পরিবর্তে অপরাধীদের লালন পালন হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই । নগরীর একটি প্রভাবশালী গোষ্টি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের শেল্টারেই যত অপরাধ চলছে নগরজুড়ে। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা আর শহরের প্রভাবশালী অসাধু বিতর্কিত চক্র জোটবদ্ধ হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না । আজব এক শহরের নাম নারায়ণগঞ্জ ।









Discussion about this post