শেষ পর্যন্ত সেই গর্ভধারিনী মামালাবাজ মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে নিজ জিম্মায় বাড়ি ফিরে গেছেন ১৩ বছর কথিত গুম থাকা রুবেল ওরফে আল আমিন । শুক্রবার ২১ মে বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিন এর খাস কামড়ায় জবানবন্দি প্রদানের পর নিজ জিম্মায় ভিকটিম রুবেল ওরফে আল আমিনকে মুক্তির নির্দেশ দেয় আদালত। এই ঘটনায় আদালত চত্তরেও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে ।
আদালতে মামলাবাজ মায়ের বিরুদ্ধে এমন ২২ দারায় জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান।
আদালতের অপর একটি সূত্র থেকে আরো জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ রহিমা খাতুন আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়ের পার এলাকার অনেককেই শুধুমাত্র ব্যাক্তিস্বার্থ হাসিল করতে কোন ধরণের কারণ ছাড়াই অসংখ্য মামলায় আসামী করে অনেককেই হয়রানী চালিয়ে আসছিলো । বিষয়টি তৎকালীন সময়ে থানা পুলিশসহ আদালতের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে জানাজানি হয়ে এই রহিমা খাতুন পুলিশের আইজি, ডিআইজি অফিসসহ উর্ধতন মহলে স্বশরীরে হাজির হয়ে নিজেকে অসহায়ত্ব প্রমাণ করে উল্টো থানা পুলিশের ওসি, তদন্ত কর্মকর্তা (দারোগা)সহ অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নাজেহাল করে আসছিলো । এক কথায় রহিমা খাতুনকে এলাকাবাসী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সকল দপ্তরে মামলাবাজ রহিমা হিসেবে চিহ্নিত ছিলো । রহিমার বিরুদ্ধে যে কেউ কোন কথা বললেই মামলাসহ নানাভাবে অভিযোগ করে অতিষ্ট করে তুলতো প্রতিপক্ষদের । এবং এই রহিমার আসল চরিত্র প্রকাশ পাওয়ার পর গত কয়েক বছর যাবৎ সেই রহিমা খাতুন আর কোন মামলা করে এলাকাবাসীকে হয়রানী করতে পারে নাই ।
মা রহিমা খাতুনের বিরুদ্ধে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে রুবেল ওরফে আল আমিন আদারতে ২২ দারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন ।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেকের কুড়েরপাড় এলাকার গুম হওয়া রুবেল ওরফে আল আমিন (২১) ১৩ বছর পর জীবিত ফিরে আসায় তৎকালীন সময়ে দায়ের করা মামলার আসামীসহ পুরো এলাকাবাসীর মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় ।
রুবেল ওরফে আল আমিনকে গুমের অভিযোগে দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৯ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালে মামলাও হয়েছিল। এ মামলায় কয়েকজন জেলও খেটেছেন।
বুধবার (১৯ মে) রাতে রুবেল বাড়িতে ফিরে এসেছে এমন সংবাদে বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে মামলার আসামিরা তাকে আটক করে জেরা করে ।পরে তারা রাত ৮টার দিকে রুবেলকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়ে আসে।পরে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা রুবেলের ঘটনায় সঠিক বিচার দাবি করেন।
রুবেল জানায়, সে তার মা রহিমা খাতুনের মারধর ও ক্ষুদার যন্ত্রনায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে আসে। পরে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কমলাপুর যায়। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষের কাছে হাত পেতে খেয়ে বেঁচেছিল। এরপর এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর ওই লোক রামপুরা একটি হোটেলে কাজ নিয়ে দেয়।এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে মগবাজার মধুবাগ হাতিরঝিল সংলগ্ন মসজিদের পাশে ভাড়ায় বসবাস করে সেখানেই রং মিস্ত্রির কাজ করছে। আসল নাম রুবেল হলেও মগবাজারে রং মিস্ত্রি আল আমিন নামে সে পরিচিত।
রুবেল আরও জানায়, বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর তার সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হয়। পরে সে কুঁড়েরপাড় আসতে চাইলে তার মা বলে তোকে এলাকায় নিয়ে গেলে মেরে ফেলবে। গত ছয় বছর ধরে সে এলাকায় আসতে চাইলেও তার মা তাকে আসতে দেয়নি। এক পর্যায়ে তার মাকে না জানিয়েই বুধবার রাতে কুঁড়ের পাড় নিজ বাড়িতে ফিরে আসে রুবেল।তখন তা মা বলে তুই কেন আসছোস, তোকে তো মেরে ফেলবে।
রুবেল জানায়, তার মা সুবিধাজনক না। সে অন্য লোকের প্ররোচনায় মামলা করেছে। তাকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে মামলার বাদী রুবেলের মা রহিমা খাতুন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পলাতক রয়েছেন। রুবেলের বাবার নাম জানু মিয়া।
এলাকাবাসী জানায়, মামলার বাদি রহিমা খাতুন এলাকায় মামলাবাজ মহিলা হিসেবে পরিচিত। তার মিথ্যা মামলা থেকে আত্মীয়-স্বজনকেও ছাড় দেয়নি। মিথ্যা মামলা করে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার মূল লক্ষ্য।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, মামলাটি বেশ কয়েক বছরের পুরোনো। পুলিশ ও ডিবি এর আগে তদন্ত করেছিল।








Discussion about this post