শীষ দিয়ে প্রকাশ্যে আবার কখনো মুখোশ পড়ে মাদক বিক্রি করা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত আলোচিত চাঁদমারী বস্তি অবশেষে উচ্ছেদ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আল্টিমেটামে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই ) বিকেল থেকে নিজেরাই বস্তি থেকে প্রায় ৫০০ ঘর সরিয়ে নিচ্ছে।
অপরদিকে মাদক বিক্রির চিহ্নিত জোন চাঁদমারী বস্তির মাদক বিক্রেতাদের বাসা ভাড়া দেওয়া ও তাদের প্রতিহত করতে পাশের আদর্শ চাষাঢ়া পঞ্চায়েত কমিটি এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন।
বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আদর্শ চাষাঢ়া পঞ্চায়েত কমিটির লোকজন এলাকার সকল বাড়িওয়ালাদের কাছে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বাসা ভাড়া না দেওয়ার অনুরোধ করেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক লোকজনকে মাদক থেকে দূরে থাকার আহবান জানান।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা আদর্শ চাষাঢ়া পঞ্চায়েত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, আমাদের মহল্লার পাশেই চাঁদমারী বস্তি। সেটা মাদকের স্পট সবাই জানে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে সেখানে উচ্ছেদ চলছে। সেখানকার মাদক সংশ্লিষ্টরা আমাদের এলাকাতে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে। তারা পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিতে চাইছে। এরা এলাকাতে থাকলে পরিবেশ নষ্ট হবে। সমাজটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা এলাকার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে নিয়ে মাঠে নেমেছি।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছি। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করছি। প্রাথমিক অবস্থায় সবাইকে অনুরোধ করছি এই পথ থেকে সরে আসার জন্য। যদি সরে না আসে তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিবো।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখার জন্য আমরা সকলেই বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। সকলকেই বলা হয়েছে কেউ যেন মাদক বিক্রি না করে এবং সেবন না করে। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা সকলেই একসাথে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা থানায় যাবো।
আরও উপস্থিত ছিলেন, পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সামছুল হক ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহববুর রহমান দিপু এলাকার বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, নজরুল ইসলাম আশোক, আবুল কাশেম মিজি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইকরাম হোসেন, সহ সভাপতি শেখ তাহরিম তানিম, সিফাত, মুহিব, ফরহাদ, সাজু, পারভেজ, নিশাদ, কিরন, মানু, জাবেদ, শাহ আলম, মোস্তফা, মহসিন ও জুয়েলসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন।
জানা গেছে, গত ৯ মে নারায়ণগঞ্জে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডেরে পাশে চাঁদমারী বস্তি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর প্রশাসনের কর্মকর্তারা কয়েক দফা এসে বস্তিবাসীকে স্বেচ্ছায় ঘর নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দেয়। এছাড়াও গত কিছুদিন ধরেই ঘনঘন চলছিল মাদক বিরোধী অভিযান। জেলা প্রশাসনের আল্টিমেটামে ২৭ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল থেকে নিজেরাই বস্তি থেকে প্রায় ৫শতাধিক ঘর সরিয়ে নিচ্ছে বস্তিবাসীরা।
চাঁদমারী বস্তির একশ গজের কাছে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়সহ জেলা জজ কোর্ট অবস্থিত। বিগত সময় এ বস্তি থেকে নানা ধরনের অপরাধ পরিচালিত হয়েছে। শীষ দিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি চলতো।
চুরি ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যাসহ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটতো। তখন অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে অনেক সময় লাঞ্চিত হতে দেখেছেন অনেকেই। বস্তিতে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিবি পুলিশের বন্ধুক যুদ্ধও হয়েছে। এতে বস্তির শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বিল্পব বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়। এ বস্তিটি দীর্ঘদিন পরে হলেও উচ্ছেদে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।









Discussion about this post