বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে শাসনের বাগ এলাকায় চেয়ারম্যান রাজাকারপুত্র মাকসুদ হোসেনের শেল্টারে অবৈধভাবে ২৫টি ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে । এদের মদ্যে অন্যতম লতিফ, আলী হোসেন, মজিবর, গোলাপ , মোতালেব, নুরু, শাহ আলম, আলী আকবর, রহিম বাদশাসহ অন্যান্যরা জেলা প্রশাসন , পরিবেশ অধিদপ্তর ও মুচাপুর ইউপি চেয়াম্যান মাকসুদকে নিয়মিত মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে । যাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারছে না কোন সংস্থা । বিরামহীনভাবে মুছাপুর ইউনিয়নের শাসনের বাগ এলাকায় বিশাল এই ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না ।
বন্দর প্রতিনিধি :
লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছি । এলাকায় আমার অনেক জনপ্রিয়তা । লেইখ্যা যা পারেন ,করেন ।খোদ এমপি আমারে স্কুলের সভাপতি বানাইছে । এমনই দম্ভোক্তি করেন সদ্য প্রকাশিত তালিকাভুক্ত রাজাকারপুত্র এক ইউপি চেয়ারম্যন মাকসুদ হোসেনের ।
মহান বিজয় দিবসের আগে প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের সাবেক প্রয়াত চেয়ারম্যান এমএ রফিক, তার সহোদর ভাই মোস্তফা, সামাদ ও মালেকের নাম প্রকাশ হয়েছে । কুড়িপাড়া এলাকার তালিকাভুক্ত রাজাকার প্রয়াত এমএ রফিকের পুত্র মাকসুদ হোসেন দ্বিতীয় মেয়াদে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল রয়েছেন । একই সাথে তিনি তিনগাও কাইকারটেক এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিজ অর্থায়নে নির্মিত স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাকসুদ হোসেন ।
এ ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল এখন রাস্ট্র ক্ষমতায় । প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে । তারপরেও স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের বংশধররা কিভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকে।আর যাদের ছত্র ছায়ায় ও শেল্টারে এসব দেশ বিরোধীরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়,তাদের বিরুদ্ধে আগে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কিভাবে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হয় একজন রাজাকারপুত্র । অপরদিকে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি করা হয়েছে একজন রাজাকারপুত্রকে । কে বা কারা এসব তালিকাভুক্ত রাজাকার পুত্রদের এসব গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে । তাদেরও বিচার হওয়া উচিত ।
খোজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মুছাপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মাকসুদ হোসেনের বাবা প্রয়াত রাজাকার রফিক চেয়ারম্যান জীবদ্দশায় ৪ টি বিয়ে করেন । মোট ৮ পুত্রের মধ্যে প্রায় সবাই তারকা সন্ত্রাসী ও অশ্রধারী । তাদের মধ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন কালু, মোর্শেদ হোসেন মুন্সি ও আনোয়ার হোসেন আনার শাহ সাহেব পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী । প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন মোয়াজ্জেম হোসেন কালু। এরপর মারা যান কুখ্যাত রাজাকার এমএ রফিক চেয়ারম্যান । ২০১১ সালের নির্বাচনে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন পেশাদার খুনি আনোয়ার হোসেন আনার শাহ সাহেব । স্বাধীনতার পরে কুড়িপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন হত্যার মূল আসামী আনোয়ার হোসেন আনার শপথ গ্রহণের আগেই রহস্যময় দুর্ঘটনায় নিহত হলে এলাকার অনেকেই বলেন এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে অনেক রহস্য লিুকিয়ে আছে ।
পরে উপ নির্বাচনে প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়ে প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মাকসুদ হোসেনের উথান।এরপর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে হয়ে যান স্থানীয় সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন। এরই ধারাবাহিকতায় এমপি সেলিম ওসমানের আশীর্বাদে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতীদ্বন্দী নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে অবস্থান সুসংহত করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মুছাপুর ইউনিয়নের ২২টি ইটের ভাটার ছাড়পত্র দিয়েছেন । যার প্রতিটির জন্য ৫লাখ এবং প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা করে নেন সুচতুর চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন । সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রয়াত একেএম সামসুজ্জোহার নামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনীত করা হয় চিহ্নিত রাজাকার পুত্র মাকসুদ হোসেনকে।
একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার পুত্রকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকের নামে উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনীত করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ লতিফ গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি খুবই হতাশাজনক । মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামীলীগ এখন রাস্ট্র ক্ষমতায়। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থান । এমন অবস্থার মধ্যে কি করে একজন চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সন্তান ইউপি চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়।এমন প্রশ্ন তুলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব রাজাকারের সন্তানেরা কার বা কাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে এবং ছত্র ছায়ায় চলে, সে বিষয়টিও সামনে আসার দরকার ।
জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ বলেন,মহান ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক একেএম সামসুজ্জোহার নামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়টি সম্পুর্ন সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম সেলিম ওসমান সাহেবের নিজ অর্থায়নে পরিচালিত হয় । তাই এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুক্লা সরকার বলেন, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এ বিষয় কিছুটা শুনেছি। তবে বিস্তারিত না যেনে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা ।
বিষয়টি ভীষণ রকম বেদনাদায়ক উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজীম উদ্দিন প্রধান বলেন, বিস্তারিত খোজ খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন দম্ভোক্তি করে বলেন আমার বাবা ও চাচারা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন, তা সবাই জানে। এমপি সাহেব আমাকে সভাপতি বানিয়েছেন । ওসমান পরিবারের ভক্ত ও তাদের রাজনীতি করেন দাবী করে পল্টিবাজ জাপা নেতা মাকসুদ হোসেন আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.আইভি তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছেন।









Discussion about this post