নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে এখন একটিই কথা, তা হচ্ছে : জোহা ও চনকা পরিবারের যে রাজনৈতিক দ্বন্ধ তার মানষিক দূরত্ব যোজন যোজন । এই দূরত্ব এতো সহজেই কি কমানো সম্ভব ? এরপরেও রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নাই । সেই দিকেই সকলের দৃষ্টি আগামীকাল ২৪ ডিসেম্বর শুক্রবার দেওবোগ রাসেল পার্কে দিকে। সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশ আহবান করা হয়। তবে বিজয় সমাবেশটি শেষ পর্যন্ত ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেবে। এমনটা জানিয়েছেন আওয়ামীলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।
ফলে এই সমাবেশকে ঘিরে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছাড়াও নগরীরবাসীর মধ্যে নানা আলোচনা ঢালপালা ছড়াচ্ছে। কারণ নির্বাচনের আগে এই সমাবেশে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ডজনখানেক নেতা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন। নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগের এমন একটি সমাবেশ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে, এমনটা যেমন মনে করছেন নগরবাসী তেমনিভাবে এই সমাবেশের মঞ্চে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যা চেষ্টা মামলার হুকুমের আসামী শামীম ওসমান গংদের কি দেখা যাবে আইভীর পাশে, এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে নগরবাসীর মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে, নাসিকের সাবেক মেয়র ডা, সেলিনা হায়াৎ আইভী দেড়যুগ ধরে ওসমান পরিবারকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে সভা-সমাবেশে ও বিবৃতিতে বিষদাগার করে আসছেন। এমনকি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর হত্যাকারী হিসেবেও ওসমান পরিবারকে দায়ী করে আসছেন। এখানেই শেষ নয়, ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার ইস্যূকে কেন্দ্র করে হকারদের সাথে সাবেক মেয়র আইভীর সমর্থকদের সংঘাত হয়। এই ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার বাদী হয়ে শামীম ওসমানকে হুকুমের আসামী করে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। যদিও তা মামলা হিসেবে নেয়নি পুলিশ। এরপর ২২ মাস ১৮ দিন পর ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতে পুনরায় হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার বাদী সিটিকর্পোরেশনের আইন কর্মকর্তা জি এম এ সাত্তার এজাহারে উল্লেখ করেন, মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন ৷
মামলায় শামীম ওসমানকে হুকুমের আসামী করা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, যুবলীগ নেতা নিয়াজুল ইসলাম খান, জানে আলম বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ কর্মী নাসির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা চঞ্চল মাহমুদের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত প্রায় ৯০০ থেকে ১০০০ জনকে আসামী করা হয়। মামলার আসামীদের সবাই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের অনুসারী নেতাকর্মী। যদিও তারা চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি নেতাকর্মীদের মধ্যে।
তাই আইভীকে হত্যা চেষ্টা মামলার এই আসামীদের কি শুক্রবারের সমাবেশ মঞ্চে দেখা যাবে ? আর যদি তাদের মঞ্চে দেখা যায়, তাহলে কি বলবেন আইভী ? যাদের তিনি সন্ত্রাসী বলে মাঠ গরম করেছেন, তাদেরকে নিয়ে কিভাবে তিনি নগরবাসীর কাছে ভোট চাইবেন ? এমন প্রশ্ন আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী ও নগরবাসীর।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতা আপাততঃ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, ঢাকার সভাতে না যাওয়ার কারণে একরকম চাপের মধ্যে রয়েছেন শামীম ওসমান। কেন্দ্রীয় সিনিয়র বেশ কজন নেতা তার ওই আচরণকে ভালোভাবে নিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা ওইদিন এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন শামীম ওসমানের প্রতি যে, বক্তব্যে সাংসদকে ঈঙ্গিত করে বলেছেন, “দায়িত্বশীল ব্যক্তিকেও মনে রাখতে হবে- তিনি আওয়ামী লীগে একমাত্র অপরিহার্য নন। আওয়ামী লীগে না থাকলে কেউ সালামও দেবে না। তাই অহংকার ছাড়তে হবে। মতবিরোধ কিংবা প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। তা নিয়ে আলোচনা হবে দলীয় সভায়। জনসভায় সেই আলোচনা আনা যাবে না। তা ছাড়া রাজনীতিতে আবেগের জায়গাও নেই।” এমন ঈঙ্গিরে পর কোন কোন গণমাধ্যমে নৌকার বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র কঠোর হতে পারে বলেও সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে । এমন ঈঙ্গিতের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের উত্তর মেরুখ্যাত শামীম ওসমানের বলয়ে চলছে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ । কি করতে হবে ? কি হবে ? কি করবেন ?









Discussion about this post