নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এই প্রথম কোন মামলার রায়ে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহানের বক্তব্য ভিডিও করে তার অনুমতি ছাড়া সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তাকে দশ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
আইনজীবীরা এই রায়কে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একটি সতর্ক বার্তা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তারা জানিয়েছেন, থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদে থেকে অনুমতি ছাড়া কারও বক্তব্য রেকর্ড করে তা ছড়িয়ে দিয়ে গুরুতর অপরাধ করা হয়েছে বলে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই রায় থেকে শিক্ষা নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনাল জরিমানার টাকা নিহত নুসরাত জাহানের পরিবারকে দিতে বলেছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, অভিযোগ ওঠার পর মোয়াজ্জেম হোসেনকে পুলিশের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন সাজা হওয়ার পর তার আর চাকরি ফেরত পাওয়ার সুযোগ নেই বলে তারা মনে করেন।
মামলার বাদি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক বলেছেন, আদালত এই রায় এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
“আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, অফিসার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনে মোয়াজ্জেম হোসেন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এবং যে মেয়েটি শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে থানায় গেলো সাহায্যের জন্য, এই ভিডিও করার মাধ্যমে তাকে দ্বিতীয়বার শ্লীলতাহানির মুখোমুখি করা হয়েছে।”
“আদালত আরও বলেছে, নাগরিক অধিকার রক্ষা না করে তিনি অপরাধ করেছেন, সেজন্য তার সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। এই রায়টি একটি সিগন্যাল যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে এভাবে চিন্তা করা যাবে না।”

নুসরাত হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন হয়েছিল।
নুসরাত জাহানকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এই অভিযোগে তার মা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন গত মার্চ মাসে।
সে সময় সোনাগাজী থানায় তার জবানবন্দি নিয়েছিলেন ঐ থানা পুলিশের তৎকালীন ওসি বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন।
এর কয়েকদিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাত জাহানের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলে দেশজুড়ে তা আলোচনার সৃষ্টি করে। তখন নুসরাতের সেই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল।
নুসরাতের অনুমতি ছাড়া ভিডিও করা এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে তখন মোয়াজ্জেম হোসেনে বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল।
মি. হোসেনের আইনজীবী বলেছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করবেন।
সাইবার ক্রাইম ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি নজরুল ইসলাম বলেছেন, গত বছরের জুন মাসে ডিজিটাল আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ওই আইনে দু’শর মতো মামলা হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম কোন মামলায় বিচার শেষ হলো।
সরকারি এই আইনজীবীও এই রায়কে একটি বার্তা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেছেন, “শুধু পুলিশের জন্য নয়, সমাজের সবার জন্যই এই রায় বার্তা দিচ্ছে।”
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, অনেক সময়ই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষা না করার অভিযোগ ওঠে।
তারা আরও বলেছেন, শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই নয়, বিভিন্ন আইনেই নাগরিকের গোপনীয়তা এবং মর্যাদা রক্ষার কথা বলা আছে।
কিন্তু অনেক সময়ই সেই আইনের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সোনাগাজীর ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে বলেই এই ঘটনায় বিচার হলো বলে তারা মনে করেন।
মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলছেন, আদালতের রায়কে গুরুত্ব দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর এসব বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো উচিত।
“একজন নাগরিকের মর্যাদা রক্ষা করাটা হচ্ছে আইনের প্রথম কাজ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে প্রশিক্ষণ থাকে, সেখানে বিরাট একটা ফাঁক রয়ে গেছে যে, তারা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত নন। সেখানে তাদের কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের একটা বিষয় থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশের উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, নাগরিকের গোপনীয়তা এবং অধিকার রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সতর্ক রয়েছে।
তারা আরও বলেছেন, সতর্কতার মাঝেও কোন ঘটনা ঘটলে তাতে ছাড় দেয়া হয় না। সোনাগাজী থানা পুলিশের সাবেক ওসির শাস্তি হওয়ার বিষয়কে তারা এর উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।









Discussion about this post