নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজার হিসেবে পরিচিত দিগুবাবুর বাজারে রাত ১১ টা থেকে সারাদিনব্যাপী বেচাকেনা চলে দ্রুত গতিতে । শহরের বংগবন্ধু সড়ক এলাকায় পাইকারি পন্যের সারি সারি ট্রাকের বহরের কারণে রাতের বেলায় যেমন তেমন প্রতিদিন সকালে মানুষের জন্য তিল ধারণের জায়গা থাকে না।
আর বিশাল এই পাইকারি ও খুচরা বাজারে যুগের পর যুগ যাবৎ শহরের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও বিশেষ পেশার নামধারীদের নানাভাবে তুষ্ট করে অবৈধভাবে মীর জুমলা ও ইনস্টিটিউট সড়ক দখল করে রমরমা চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে ।
দেশের সকল ব্যবসা বাণিজ্য যেখানে করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পরেছে সেখানে দিগুবাবুর বাজারে অবৈধভাবে দখল রেখে চাঁদা আদায় করেই চলেছে চিহ্নিত চক্রটি ৷ আর এই চাঁদাবাজদের কারণে দুরত্ব বজায় রেখে বাজারের কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে পারছে না কেউ ।
শহরবাসী নিতান্ত প্রয়োজনে বাজারে গেলেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং সিটি কর্পোরেশনের কোন দিক নির্দেশনা না থাকায় শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সেখানে সম্ভব হয় না।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) অধীনে এ জায়গাটি হলেও এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত নেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক)। বাজারে বছরের পর বছর যাবত অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার চাঁদা আদায়কারী সিন্ডিকেট বিনা বাধায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ।
সচেতন নাগরিকরা তাই বাজারের অবস্থা দেখে টিপ্পনী কেটে বলছেন “নারায়ণগঞ্জের দিগুবাবুর বাজার কী করোনামুক্ত ? তাই এটি নিয়ে মেয়র থেকে শুরু করে কারোই মাথাব্যথা নেই। দেখা মেলে নাই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা ! প্রশাসন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি জানে না এই প্রেক্ষাপটেও অবৈধভাবে কারা চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে বিরামহীনভাবে ?”
মংগলবার (২১ এপ্রিল) রাত ১১ টা সকাল সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায় মীর জুমলা ও ইন্সটিটিউট সড়কে পাইকারি পন্যে সয়লাব করে তুলেছে ব্যবসায়ীরা । একই সাথে বংগবন্ধু সড়কের ক্লাব মার্কেট থেকে ২নং রেল গেইট পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকের পাশাপাশি মুরগীবাহী গাড়ীর কারনে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না । আর সকল গাড়ি থেকেই বাজারের টোল নিচ্ছে দুই যুবক ৷ কিসের টোল জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মী বুঝতে পেরেই সটকে পরে টোল (চাঁদা) আদায়কারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ থেকে আসা আলাউদ্দিন নামের এক মুরগী ব্যবসায়ী বলেন, কেউ কেউ ৪শ, কেউ কেউ ৫ শ আবার কেউ ৩ শ টাকা করে টোল দিতেই হয় । এটি নাকি সিটিকর্পোরেশনের ঠিকাদারের টোল । প্রতিদিন ই তো এই টোল দিতে হুয় ই । মীর জুমলা সড়ক দেখিয়ে এই মুরগী ব্যবসায়ী আরো জানায়, এই সড়কে চটি হিসেবে ৩/৪ ফুটের জায়গায় ২৪ ঘন্টায় তিনজন ব্যবসা করে এবং প্রতিদিন ৩ বার সাড়ে ৩শ থেকে ৫ শত টাকা হারে চাঁদাবাজি হচ্ছে । এগুলি করে কারা আর দেখে কারা ?
করোনা ভাইরাসের কারনে প্রধানমন্ত্রী দেশের বাজার ও অস্থায়ী হাটবাজারগুলো খোলা মাঠ স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে মানুষ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশকেও নাসিক তোয়াক্কা করেনি। জেলার অন্যান্য বাজারগুলোও খোলা মাঠে স্থানান্তর হয় ই নাই উল্টো আরো অধিক হারে চাঁদাবাজি করতে অবৈধভাবে দোকান স্থাপনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
সরেজমিনে প্রতিদিনের চিত্র থেকে জানা যায়, শহর ও আশপাশে বিভিন্ন এলাকার খুচরা সবজি বিক্রেতারা এ বাজার থেকে সকালে পাইকারি বাজার সংগ্রহ করেন। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর বাজার ও বাসাবাড়ির জন্য বাজার করতেও এখানে উপস্থিত হন জেলাবাসীরা। প্রতিদিন সকালেই এখানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষের ভিড় দেখা যায়। নিয়মিত এরা এখানে আসছেন কোনো ধরনের মাস্ক, গ্লাভস ছাড়াই। অনেকে মাস্ক ব্যবহার করলেও তাদের মধ্যে নেই সামান্যতম শারীরিক দূরত্ব। স্থান সংকুলান না হওয়ায় একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে করছেন বাজারের কেনাকাটা ।
জানা যায়, প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা মানুষকে ঘরে রাখা নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, প্রশাসনের কঠোরতা এসব উপেক্ষা করেও মানুষ বের হয় আর তা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন।
এমন অবস্থায় একেবারে করোনা বিস্তারের সহজ মাধ্যম হিসেবে এ বাজারকে খোলা মাঠে স্থানান্তর না করে এভাবে প্রতিদিন হাজারো মানুষের মেলামেশাকে করোনার ভয়াবহ ঝুঁকি হিসেবেই ভাবছেন সচেতন নাগরিকরা।
ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ জেলাকে করোনা আক্রান্তের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জন করোনা আক্রান্ত ও চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪৪১ জন (মৃত্যুসহ)। এদের মধ্যে জেলায় মোট মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরের এই বাজারে প্রতিনিয়ত দেখা যায় উল্টো চিত্র ।
নারায়ণগঞ্জ শহরের বংগবন্ধু সড়ক, মীর জুমলা সড়ক ও ইন্সটিটিউট সড়কের এই অবৈধ বাজার থেকে ইতিমধ্যে অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন বলে ব্যাপক গুঞ্জন থাকলেও কোন অবস্থাতেই শুধুমাত্র চাঁদাবাজির কারণে সংকটকালীন এই সময়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারছে না প্রশাসন ।
অবৈধভাবে এই বাজার থেকে কোটি কোটি টাকার চাদাবাজিতে কারা কারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে দ্রত ব্যবস্থা নিলেই দিগুবাবুর বাজারের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে দৃঢ়তার সাথে মন্তব্য করেছেন শহরের অভিজ্ঞ জনেরা ।








Discussion about this post