একটি চিরকুটের সূত্র ধরে দীর্ঘদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিদর্শক শিশু হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছেন । যা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে । স্বামী ভরনপোষণ না দেওয়ায় গর্ভধারিনী মা নবজাতককে হত্যা করেছে বলে নিজেই আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
প্রায় দেড় বছর পূর্বে ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন ১নং মাধবপাশা এলাকায়। চাঞ্চল্যকর ওই মামলায় ঘাতক গর্ভধারিনী মা ৫ সেপ্টেম্বর রোববার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিন এর আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তিতে ঘাতক গর্ভধারিনী মা খাদিজা আক্তার পিংকি আদালতকে জানিয়েছেন স্বামী ভরনপোষণ না দেওয়ায় এবং পরিবারের লোকজনের উপহাস সহ্য করতে না পেরে ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেন (২মাস) কে কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে হত্যা করে।
মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২০২০ সালের ১৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন ১নং মাধবপাশা (কান্দিপাড়া) এলাকাস্থ বাদী মোঃ রুবেল (ভিকটিমের বাবা) এর শ্বশুর জবেদ আলীর বসত বাড়ী হতে নবজাতক ইমাম হোসেন হারিয়ে যায়। তখন নিখোঁজের মা মোসাম্মৎ খাদিজা আক্তার পিংকি চিৎকার দিলে বাড়ীর লোকজন আসে। তখন জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় সে এবং তার ছেলে ইমাম হোসেন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় কে বা কাহারা তার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে যায়।
পরদিন ২১ এপ্রিল সকাল ৭ টার দিকে খাদিজা আক্তার পিংকির বসত বাড়ীর পাশে পুকুর হতে তার ছেলেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের পিতা মোঃ রুবেল এজাহার প্রদান করলে বন্দর থানায় মামলা (নং-০৭) রুজু করা হয়। সূত্রে উল্লেখিত মামলাটি রুজুর পর বন্দর থানা পুলিশ মামলা তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের আবেদন এর প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে।
ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার এর সঠিক তত্বাবোধানে ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই নারায়ণগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সাইফুল আলম মামলাটির তদন্তভার গ্রহন করে। গত ২০২০ সালের ৩০ জুলাই হতে মামলাটির ব্যাপক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। নিবির তদন্তকালে ঘটনাস্থল হতে সাত শব্দের একটি ছোট কাগজের টুকরা আলামত হিসেবে জব্দ করেন।
জব্দকৃত কাগজে লেখা থাকে “বাচা গড়ে গড়ে চুরি করমু সাবথাব” উক্ত কাগজের হস্ত লেখার বিষয়ে ঘটনাস্থল আসামীর বসতবাড়ীসহ আসপাশের লোকজনের নমুনা লেখা সংগ্রহ করে পর্যালোচনার এক পর্যায়ে ভিকটিমের মা খাদিজা আক্তার পিংকির হাতের লেখার সহিত জব্দ লেখার মিল থাকায় খাদিজা আক্তার পিংকির হাতের লেখা বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নমুনা হস্তলেখা বিশেষজ্ঞ দ্বারা তুলনা মূলক পরীক্ষা করে জব্দ লেখা ভিকটিমের মাতা খাদিজা আক্তার পিংকির লেখার সহিত মিল পায়।
হস্তলেখার মিল পাওয়ার প্রেক্ষিতে ৫ সেপ্টেম্বর খাদিজা আক্তার পিংকিকে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, তার স্বামী তাকে বার বার টাকার জন্য চাপ দিত। তার স্বামী (বাদী) চাইত তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার পিংকি তাকে কামাই করে খাওয়াবে। সে বাবার বাড়ীতে আসার পর তার স্বামী (বাদী) তার কোন ভরণ পোষন দিত না। এটা নিয়ে তার পরিবারের লোকজন তাকে উপহাস করত। তাই সে চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তার ঘুমন্ত ছেলে ইমাম হোসেন (২মাস) কে কোলে নিয়ে ঘরের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
উল্লেখিত বিষয়ে ৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিন এর আদালতে নিজ দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।









Discussion about this post