নারায়ণগঞ্জ হবে মুক্তিযোদ্ধার চেতনার নারায়ণগঞ্জ । এই নারায়নগঞ্জ কথনোই খুনিদের রাজত্ব হতে দেব না । এই নারায়ণগঞ্জ খুনিদের রাজত্ব কখনোই হবে না । যতদিন জীবিত থাকবো ততদিন এই খুনিদের পরিবার ওসমান পরিবারকে রাজ্ত হতে দেবো না, দেবো না, দেবো না ।এই নারায়ণগঞ্জ মানুষে নারায়ণগহ্জ হবে ।
মেধাবী ছাত্র তানভীর ত্বকী হত্যার ৮ বছর উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের আলী আহমদ চুনকা মিলনায়তনের সামনের সড়কে অনুষ্টিত সমাবেশে ত্বকী মঞ্চে এমন কড়া ভাষায় মন্তব্য করেছেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি।
শুক্রবার ৫ মার্চ বিচারহীনতার ৫ বছর উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, আপনি নারায়ণগঞ্জে এসেছেন , দুইদিন পাঁচদিনের জন্য, আপনি নির্ধারণ করেন নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক ! আপনি কে আপনাকে এই অধিকার কে দিলো ? আপনি নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে কি জানেন ? নারায়ণগঞ্জে কি মানুষ থাকে না ? আপনি কি মনে করেন ?
তিনি বলেন, ‘খুনের রাজনীতি নারায়ণগঞ্জে ওই ওসমান পরিবার করে। তারা শুরু থেকে এই খুনের রাজনীতি করে আসছে। ১৯৭৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিএস রোকনকে হত্যা করেছে। ১৯৮৮ সালে তারু সরদারের ছেলে কামালকে হত্যা করেছে। এরপর যখন নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন বেড়ে গেল তখন এর থেকে বাঁচতে নিজেদের লোক কালামকে হত্যা করে তারু সরদারের পরিবারের বিভিন্নজনের নামে মামলা দেয় এবং এটা রফাদফা করার একটা প্রস্তাব দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শহীদ মিনারে সভা করছিলাম ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে। তখন শামীম ওসমান তার ক্যাডার ক্যাঙ্গারু পারভেজকে পিস্তলসহ সভায় পাঠিয়েছে। সমাবেশের লোকজন তাকে গণপিটুনি দেয়। এক সময় শামীম ওসমানের বিভিন্ন অপকর্মের সাক্ষী এই ক্যাঙ্গারু পারভেজকে হত্যা করিয়েছে। শামীম ওসমান তার অনুগতকে হত্যা করে মেয়র আইভী, তার ভাইসহ অনেকের নামে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে। এই পারভেজকে হত্যা করে আমার ও মেয়রের বিরুদ্ধে পারভেজের পরিবারকে বসিয়েছে। ওসমান পরিবার মনে করে, আধিপত্য বিস্তারের জন্য লাশ না ফেলে উপায় নাই। ছাত্রলীগের মিঠুকে জামতলায় দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে আজমেরী ওসমান। এ মামলা পুলিশ নেয়নি। যখন আজমেরী ওসমানের নাম বাদ দেয়া হয় তখন মামলা নিয়েছে। এজন্য বলি, খুন করলেও তারা খুনি না। কারণ তাদের নামে মামলা হয় না। মামলাবাজ তো তারা, মামলা করলে তারা করবে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল তারা করবে।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সোমবার সোমবার মিলে ৮ দিন হয়েছে যিনি নারায়ণগঞ্জে এসেছেন তিনি নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস বলবেন। তাহলে বলেন, ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের কোন নেতা পিডিপিতে যোগ দিয়েছিল। ১৯৭২ থেকে নারায়ণগঞ্জে যে লুট হয়েছে সে লুটের শতকরা ৩০ ভাগ কোন নেতা নিয়েছে? জিয়াউর রহমানের আমলে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে। তখন মিজান আওয়ামী লীগকে মূল ধারার আওয়ামী লীগ বলা হয়, বলেন তো সে সময় নারায়ণগঞ্জের কোন নেতা মিজান আওয়ামী লীগের ছিল? বাকশাল যখন গঠন করা হয় তখন তিনি বাকশালে যোগ দেন, ৮১তে শেখ হাসিনা আসেন আবার তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এরশাদ যখন আসে, তখন তিনিই তার ছেলেকে নৌকা থেকে নামিয়ে হাতে লাঙ্গল তুলে দেন। তাদের এই ক্ষমতার রাজনীতি, দল বদলের রাজনীতি স্বাধীনতার আগে থেকে। তাদের কোনো নীতি আদর্শ নাই। এই শামীম ওসমান, নৌকার প্রার্থী নাজমা রহমানকে ফেল করানোর জন্য নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ব্যালয় বাক্স ছিনতাই করেছে। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, গলাচিপা ভোটকেন্দ্র দখল করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তার (শামীম ওসমান) অনুগত হেফাজত, হিন্দু নেতাদের লেলিয়ে দেয় তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। আমাদেরকে পিপড়ার মত মাটিতে মিশিয়ে দিতে বলেছিল। এরা ইসলাম করে! ইসলাম ধর্ম নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। যারা ইসলামের কথা বলে তারা কিভাবে একজন নারীর হাত ভেঙ্গে ফেলার, তাকে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়ার কথা বলে। নারীকে তেতুলের সঙ্গে তুলনা করে। এরা কিসের ধর্মের মানুষ। মিম্বারে বসে মিথ্যাচার করে। শামীম ওসমান বাঁশিতে ফু দিলে তারা খেলা শুরু করে দেয়।’
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘এই সমাবেশ প্রধানমন্ত্রীকে অনুনয়-বিনয় করার জন্য নয়। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে না। তাই আইনকে তার নিজস্ব গতিতে আনার আন্দোলন চলবে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই নারায়ণগঞ্জে খুনিদের রাজনীতি কখনোই হবে না। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের খুনের রাজনীতি করতে দেবো না। এই নারায়ণগঞ্জ মানুষের নারায়ণগঞ্জ হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নারায়ণগঞ্জ হবে।’
এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যসচিব, কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুম, বাসদের জেলা সমন্বয়কারী নিখিল দাস, খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি হাফিজুর রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রমুখ ।









Discussion about this post