ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টিতে পুরো শহর যখন হাটু সমান পানিতে বন্দি তখন শহরের কালীর বাজারের বহুতল ভবনের নীচে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান পুরোটাই পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায় ৩০/৩৫ টি গাড়ি, অসংখ্য মটর সাইকেল এবং বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মা বিকল হয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিণত হয় এলাকাটি। বৃষ্টির কারণে চরম ভোগান্তিতে থাকা নগরবাসী থেমে থেমে বৃষ্টি দেখে আতংকিত হয়ে পরেছে ।
এমন পানিবন্দিতে পুরো নারায়ণগঞ্জ মহানগরবাসী চরম ভোগান্তিতে পরতে দেখা গেছে ৷
বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে কয়েক ঘন্টার ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কালীর বাজারের ১৬ ফ্লাটের বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে এভাবে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য প্রাণহানির ঘটে নাই । তবে পানিতে ডুবে থাকা অনেক গাড়ী, মালামাল ও বৈদ্যুতিক সমস্যা সমাধান করতে সারাদিনব্যপী ফায়ার সার্ভিস পানি নিস্কাসন করতে পাম্প স্থাপন করে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এতদিন নগরের যেসব এলাকার রাস্তায় অতি বৃষ্টিতেও পানি উঠেনি সেই রাস্তারও ছিল পানির নিচে। শেষ রাতের ভারী বর্ষণে ঘুমন্ত নগরবাসী ঘুম থেকে জেগে উঠার আগেই বাড়ি ঘরের নিচ তলাগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়ায় কেউই ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রক্ষা করতে পারেনি। ফলে নগরীর অনেকের বিশেষ করে যারা নিচ তলার বাসিন্দা তাদের আসবাবপত্রসহ অনেক কিছু নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির পানিতে।
ভারী বর্ষণের কারণে নগরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়ক উপচে পানি ফুটপাতে উঠে যায়। পানি ঢুকে পড়ে রাস্তার পাশের মার্কেট গুলোর নিচ তলার দোকান গুলোতে।
এতে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। চাষাঢ়ায় বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে থাকা উপ শহর ডাক ঘরসহ অনেক ব্যাংকের এটিএম বুথ তলিয়ে যায়।
ডিআইটি এলাকার প্রায় প্রতিটি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অনেক দোকানী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এমন বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নগরের প্রধান সড়কের পাশে যেসব মার্কেট বা বহুতল ভবনের নিচ তলায় গাড়ি পার্কিয়ের আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাজমেন্ট ছিল সেগুলো। ওইসব ব্যাজমেন্টে পানি ঢুকে পড়ে গাড়ি, জেনারেটরসহ অনেক কিছুর ক্ষতি হয়েছে।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আবু সাউদ বলেন, হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে দেখি ঘরের ভেতর হাটু পানি। এতে ঘরের আসবাবপত্র পানিতে তলিয়ে যায়। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পরিচিত একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন ভারী বর্ষণ এর আগে আর দেখিনি।
ভারী বর্ষণে নগরের অন্যান্য এলাকাগুলোর মতো দেওভোগ, কলেজ রোডসহ অনেক উঁচ এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর নগরের দেওভোগ এলাকার বাড়ির সামনের রাস্তাও পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের কলেজ রোড এলাকার জলবন্দি অনেকেই বলেন, যত বৃষ্টিই হোক না কেন আগে কখনোই কলেজ রোড এলাকার রাস্তা পানিতে তলায়নি। কিন্তু এবার তলিয়ে গেছে। এতে বোঝা যায় কী পরিমান বৃষ্টি হয়েছে।
নগরবাসীর অনেকে অভিযোগ করে বলেন, নাসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে ভারী বর্ষণ হলেই নগরের প্রধান সড়কসহ পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। কারণ সিটি করপোরেশন এলাকার রাস্তা গুলো সংস্কারের নামে শুধু উঁচুই করা হয়েছে। এর লেয়ার ঠিক রাখা হয়নি। ফলে নগরের অনেক বাড়ি-ঘরের নিচ তলা গুলো রাস্তার চেয়ে নিঁচু হয়ে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেও এসব বাড়ি ঘরের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়।
ওদিকে ডিএনডির অবস্থা আরো ভয়াবহ। বিভিন্ন এলাকা হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনিতেই গত কয়েক দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে ডিএনডির ভেতর ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। তার উপর বৃহস্পতিবার ভোরের ভারী বর্ষণ চরম দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন বলেন, ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি। চারদিকে পানি আর পানি। এলাকার রাস্তা-ঘাট সব ডুবে গেছে। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনা এই পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। অত্যন্ত অমানবিক অবস্থা বিরাজ করছে ডিএনডির ভেতর। দ্রুত পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না করা হলে পাণিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে স্থানীয় পানিবন্দি মানুষ।









Discussion about this post