নারায়ণগঞ্জের মাদক ব্যবসায়ী নারীদের মধ্যে অনেকের নাম গগণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাড়া এমন অপরাধীদের কেউ সাধারণতঃ চিনেন না । এমন অপরাধীদের কেউ না চিনলেও নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্তরের প্রায় সকলেই খুব ভালো করেই এমন অপরাধীদের পরিচিতি রয়েছে ব্যাপক । আদালত থেকে কি করে সুবিধা পাওয়া যাবে তার হিসেব নিকেশ খুব কড়াভাবেই করতে পারে চিহ্নিত মাদক কারবারীরা । অনেক আইনজীবীর কাছ থেকেও বুঝেই মাদক মামলায় সুবিধা নেয় অপরাধীরা ।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের কয়েকজন আইনজীবী, জিআরও শাখার কর্মকর্তা এবং হাজতখানার রেজিস্ট্রার দেখে অনেকেই বলেছেন, শতাধিক নারী মাদক ব্যবসায়ী পুরো জেলা নিয়ন্ত্রণ করছেন । যারা প্রশাসন ও আদালত থেকে কত দ্রুত সুবিধা নিতে পারে তা খুব ভালো জানে
বিশেষ প্রতিনিধি :
নারীরা সমাজের সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে তা লক্ষ্যণীয়। তাই বলে মরণনেশা ইয়াবা তথা মাদক ব্যবসার মতো অপকর্মেও নারীরা এগিয়ে যাবে এটা কারও কাম্য নয়। অথচ এমনটিই হচ্ছে।
দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক জেলা নারায়ণগঞ্জের অনেক এলাকায় বর্তমানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে বেশ কয়েকজন নারী।
যাদের কেউ কেউ মাফিয়া ডনের মতো করে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন। নারী হওয়ার সুবাদে প্রশাসন থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও পাচ্ছে নানা সুযোগ ও সহানুভূতি। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই অনায়াসে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। সম্প্রতি কয়েকদিন ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফতুল্লা পুরুষ মাদক ব্যবসায়ীরা আড়ালে থেকে এখন নারীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিছু এলাকায় এক শ্রেণির মাদক ব্যবসায়ী কৌশল পাল্টে তিন-চারটি বিয়ে করছে তার স্ত্রীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য। অনেক পরিবারে সব মেয়েরাই মাদক কারবারে জড়িত। এ ছাড়াও কোনো বাধা ছাড়াই মাদকের চোরাচালান বহন ও বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের জন্য নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যে অনেক নারীকে নানা কৌশলে জিম্মি করেও মাদক ব্যবসায় বাধ্য করা হয় বলেও জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের তৎপরতা স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকে। নারীদেরও তারা কৌশল হিসেবে কাজে লাগায়। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় ইতঃপূর্বেও এ জেলায় একাধিক নারী গ্রেফতার হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের অনেকেই বলেছেন, সদর উপজেলায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা পরিচালনার ধরন পাল্টিয়ে নারীদের ব্যবহার করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের স্ত্রী বা পরিবারের নারী সদস্যদের দিয়ে ইয়াবা-ফেনসিডিলের কারবার চালাচ্ছে। এখানকার কিছু মাদক ব্যবসায়ী তিন-চারটি বিয়ে করে ওই নারীদের দিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় নিযুক্ত করেছে। পুরুষরা আড়ালে থেকে নারীদের দিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
ফতুল্লার একজন মাদকসেবী ও বিক্রেতা নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, এক শ্রেণির মাদক ডিলার তাদের নিযুক্ত তরুণ সহযোগীদের দিয়ে টার্গেট করে তরুণী বা নারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ছে। এরপর প্রেমের ছলনায় কাছাকাছি গিয়ে কৌশলে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ধারণ করছে। তারপর সেই ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অনেক তরুণী বা নারীকে ইয়াবা-ফেনসিডিল বিক্রি ও বহনে বাধ্য করা হয়। এমনকি তাদের ওপর শারীরিকভাবেও নানা নির্যাতন চালায় মাদক ডিলাররা। তবে কিছু ক্ষেত্রে আবার এক শ্রেণির নারী নিজেরাই মাদক ব্যবসার ডিলার বা হোতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা তাদের গ্রুপে অনেক ছেলেদের মাদক ব্যবসায় কাজে লাগায়।আবার অনেকে সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মামুন ওরফে ভিপি মামুনের কমপক্ষে ৬/৭ টি বিয়ে করে তাদের দিয়ে নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জে চালাচ্ছে পাইকারি মাদকের কারবার। ফতুল্লার পঞ্চবটি শান্তিনগর এলাকার শাহজাহানের ছেলে চাঁনপুইর্যা শাহীন। দীর্ঘদীন ধরেই নীজ এলাকা ছেড়ে মুন্সিগঞ্জে বসবাস করে ইয়াবার কারবার চালিয়ে আসছে। চাঁনপুইর্যা শাহীনের স্ত্রী লামিয়ার মাধ্যমে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকার খুঁচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে। চাঁনপুইর্যা শাহীনের ছোট ভাই আরিফ ও আকবর টাওয়ার এলাকার শাহীন-২ এর মাধ্যমে ফতুল্লা জুড়ে অনেকটা কৌশলে হাজার হাজার পিচ ইয়াবা ফতুল্লার খুঁচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছে। চাঁনপুইর্যা শাহীন এবং তার ছোট ভাই আরিফের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ফতুল্লার রেলষ্ট্রেশন এলাকার অন্যতম নারী মাদক ব্যবসায়ী নিহত লিপুর স্ত্রী সোর্স পারভিন। দীর্ঘদীন ধরে এ নারী মাদক ব্যবসায়ী হেরোইন,ইয়াবা, গাঁজার পাইকারী ও খুঁচরা ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। একাধিকবার জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার হলেও থেমে নেই পারভীনের মাদক ব্যবসা।তার নামে ১ ডজন মামলা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রেলষ্টেশন এলাকার আলপনা। রেললাইন শাজাহান রোলিং মিল এলাকার হোসনেরা বেগম, সেহাচর ইয়াদ আলী মসজিদ এলাকার ফাহিমের স্ত্রী লাকি বেগম,মাসদাইল গুদারা ঘাট জিম এম রনির স্ত্রী পারুলী, পতেঙ্গা মোড়ের জমিলা, পোড়া কাকনের স্ত্রী মুক্তা, নাসির কসাই মেয়ে সালমা, দেলপাড়া এলাকার পিংকি , আলীগঞ্জে মাদক সম্রাট সল্টু রাসেলের স্ত্রী কবিতা,দেওভোগ এলাকার মৃত আবুল কালামের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন।
ফতুল্লার পঞ্চবটি ফাজিঁলপুর এলাকার নারী মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে ইতিমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে রত্না ও মাদক সম্রাট সানির স্ত্রী নিশা, । ফতুল্লার ফাাঁজিলপুর এলাকার পুরষ্কার ঘোষিত অণ্যতম মাদকের ডিলার কাকনের শ্যালিকা রত্না। কাঁকন পলাতক থেকে শ্যালিকা রত্নার মাধ্যমে দীর্ঘদীন ধরে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার পাইকারী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। প্রতিদিন শত শত পিচ ইয়াবা স্থানীয় বিভিন্ন খুঁচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী ভাবে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। আর খুঁচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করার জন্য একাধিক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে অণ্যতম হলো নাহিদের খালা সুরিয়া, কাককের বৌ পুতুল অণ্যতম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সড়কপথে মাদকের চালান বহনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে সুন্দরী বা স্মার্ট তরুণী বা নারীদের। যাদের কেউ কেউ বোরকা পড়ে মাদকের চালান আনা-নেওয়া করে থাকে। এই নারীরা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে।
উল্লেখিত মাদক ব্যবসায়ী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের আনাচে কানাচে অসংখ্য নারী মাদক ব্যবসায়ীদের দৌড়াত্ম চলছে সমান তালেই । আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই মাদকের সাথে সম্পৃক্ত নারী মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা রেখে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেই যাচ্ছে। সদর উপজেলার আদালত এবং পুলিশ সুপার কার্যালয় লাগোয়া চাঁনমারী বস্তিতে প্রকাশ্যেই কয়েকজন নারী চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের পাইকারী ও খুচরা কারবার ।
প্রকাশ্যে এমন মাদক ব্যবসার দৃশ্য দেখে অনেকেই টিপ্পনী কেটে বলেন, নারীরা সবক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে, মাদক ব্যবসায় পিছিয়ে থাকবে কেন ? নারীরা পিছিয়ে নেই এমনটি প্রমাণ করতে হলে নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্তর অথবা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবেশ করলেই যে কারোরই চোখে পরবে প্রকাশ্যে মাদকের রমরমা কারবার ।









Discussion about this post