একটি দেশ ৭১’র বীর বাঙালীদের যুদ্ধের মাধ্যমে এবং আমাদের স্বাধীনতারস্থপতি রাষ্ট্রের মহানয়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে, নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। এ দেশকে স্বাধীন করেছিল মুক্তিকামী, স্বাধীনতাকামী সেই মুক্তিযোদ্ধারা। যারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে এখনও পরিচয় বহন করে চলছেন। আমি মনে করি এদেশে তাদেরই তো সব কিছু থাকার কথা কিন্তু ইদানিং কালে আমরা কিন্তু লক্ষ্য করে দেখছি যে, মুক্তিযোদ্ধারা যেন একটু একটু করে নিঃষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে রাজনীতিতে চিহ্নিত কুখ্যাত রাজাকারের বাচ্চাদের নানাভাবে আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত করতে চেষ্টার ঘটনার ইংগিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী এমন সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন
২৬ মার্চ শুক্রবার দুপুরে শহরের ২নং বাবুরাইল এলাকায় শেখ রাসেল নগর পার্কের পাশে স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।’
অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের থেকে চলেও গিয়েছেন। যারা জীবিত আছেন তারাও অনেক সময় পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরে অনেক কথা বলতেও চান না। রাজকারদের আবির্ভাব আমরা খুব বেশি করে দেখছি। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা যাচ্ছে, রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান, বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠান, সরকার কর্তৃক যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেখানে রাজাকার, রাজকারদের ছেলেদের বিভিন্ন ভাবে আমরা দেখি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি গ্রুপ সব সময় তৎপর হয়ে আছে। আমরা এগুলি চাই না। আমরা চাই যে সঠিক ইতিহাস এখান থেকে বের হয়ে আসুক এবং যেটা সঠিক সেটাই আমরা বলি। কিন্তু প্রভাবশালীরা এতো বেশি প্রভাবশালী যে সাধারণ মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু বলতে পারে না। হয়তো আমাদের দুই চার পাঁচজনকেই কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যাতে এতে নারায়ণগঞ্জের শতভাগ মানুষের সাপোর্ট সমর্থন আছে।
‘‘আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা যে জঘন্য কাজগুলো করছেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের অবহেলা করে, মুক্তিযোদ্ধাদের নামটাও আপনারা অনেক সময় বিকৃতি করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে আপনারা নিজেদের বানিয়ে ফেলেছেন। নাম পাঠান ভুল, ঠিকানা পাঠান ভুল, হয়রানী করার মুক্তিযোদ্ধাদের। অথচ রাজাকারের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে চলছেন। এটা যদি আমি করতাম তাহলে এ নারায়ণগঞ্জে যে কি অবস্থা জানে সেটা একমাত্র উপর আল্লাহই জানে। শত হাজার হাজার ভালো কাজ করেও প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং হচ্ছে। আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন যে, আমাদের এদেশ আসম্প্রদায়িক চেনতায় বিশ্বাসী। নারায়ণগঞ্জ তার উপরে আরো বেশি অসম্প্রদায়িক বিশ্বাসী। আমরা এখানে এক সাথে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বসবাস করে আসছি যুগের পর যুগ। আমরা একই অন্যের ভাই হয়ে, বোন হয়ে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান মিলে মিশে করে আসছি। কিন্তু ইদানিং কালে একমাত্র মেয়রকে নিয়ে হিন্দুদের দিয়ে কি পরিমাণ উস্কানিমূলক কথা বার্তা হচ্ছে। কি পরিমান হেফাজতকে দিয়ে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে।’’
‘‘আমি আমার মৌলভী ভাইদের, আলেমদের অনুরোধ করবো নারায়ণগঞ্জ থেকে কোন রকমের বেফাঁস কথা বলে কোন ধরনের ঝামেলা তৈরি করা জাতীয় পর্যায়ে ইস্যু তৈরি করা দয়া করে এ কাজটি করবেন না। শান্তিতে আছেন শান্তিতে থাকুন জনগনকে শান্তিতে রাখুন। হিন্দু মুসলিমকে এখানে অস্থির করে দাঙ্গা বাধিয়ে ওনি প্রমাণ করতে চান যে, আইভী এখানে জনপ্রিয় না নেত্রী আপনি আইভীকে মার্কাটা দিয়েন না। আইভী যাতে নির্বাচন করতে না পারে। সকল কিছুর মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন আইভী। দয়া করে আইভী মাথা থেকে বাদ দেন। আপনি দেখবেন অনেক শান্তিতে থাকতে পারছেন, ঘুমাতেও পারছেন। আপনি অনেক কাজ কর্মও ঠিক ভাবে করতে পারছেন। আমাদেরও কাজ করতে দিন। আমরা জনগনের কাতারে গিয়ে কাজ করি।’’
আইভী বলেন, এ নারায়ণগঞ্জের মাটি সব সময় স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। এখান থেকে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে। যেটা আমরা দাবি করি। এ পাইকপাড়া মিউচুয়েলক্লাবে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে। এখানে প্রথম মিটিং হয়েছিল। এ মিটিংয়ে বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেছিল। এখানে যে কমিটি হয়েছিল সেটা পরবর্তীতে রোজগার্ডেনে নিয়ে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল। আমরা সেই মিচ্যুয়েলক্লাবকে সংরক্ষণ করছি। এ মুজিব বর্ষেই মিচ্যুয়েল ক্লাব ওপেন করে দিবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা আশা করছি। সেই নারায়ণগঞ্জের মাটিতেই এখন কত কিছু হচ্ছে। এভাবে হেফাজত এভাবে বক্তব্য দিয়ে যায়। বাঘের বাচ্চা বলে নিজে পরিচয় দেন। বলেন,‘এক কাপ চা খেতে সময় লাগবে না। শেখ হাসিনাকে আপনি রক্ষা করবেন। এখানে আপনি নিজেই হেফাজতকে উস্কে দিচ্ছেন। কিভাবে? একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতীয় সরকার আমাদের ওইসময় সহযোগিতা না করলে আমাদের অনেক কষ্ট হতো এ স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় লাভ করার জন্য। সেই বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রধানমন্ত্রী আসবেন, কত দেশের প্রধানমন্ত্রীই তো আসছেন। ওনি খারাপ না ভালো এর বিবেচনা পরে ওনি যখন এক রাষ্ট্রে আসছেন তখন ওনাকে সম্মান করা আমাদের রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্বে পরিনত হয়। সেই রাষ্ট্র প্রধানকে নিয়ে আপনি উস্কে দিচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের কথা বার্তা বলে। আপনার বিচার করার ভেবেছেন কেউ নাই।কিন্তু কেউ না থাকলেও হয়তো ভুলেই গিয়েছেন উপরে আল্লাহ একজন আছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন। তার বিচার যে কত কঠিন হবে তা হয়তো আপনি অনুধাবন করতে পারছেন না। তাই আমি অনুরোধ করবো এ ধরনের উস্কানি দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা করবেন না।
‘স্টার ক্লাউড’ সামাজিক ও ক্রীড়া উন্নয়নমূলক সংগঠন এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নারায়ণগঞ্জের সহযোগিতায় ওই চিকিৎসা সেবার আয়োজন করা হয়।
আইভী বলেন,‘যুব সমাজই যুদ্ধে যায়, যুব সমাজই প্রতিবাদ করে, দেশ গড়ে। সুতরাং আপনাদের দায়-দায়িত্ব অনেক আছে। তার মধ্যে আপনাদের সংগঠনে অনেক পেশার লোকজন আছে। তাই সবাই মিলে আরো কাজ করতে হবে।’
স্টার ক্লাউড নারায়ণগঞ্জের সভাপতি টিপু সুলতান চৌধুরীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের জাতীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোটেক আনিসুর রহমান দিপু, সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. নিজাম আলী, স্টার ক্লাউড নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসার ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আলোক কুমার সাহা, কাউন্সিলর অঙ্কন প্রমুখ।









Discussion about this post